ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিষেধক না মিললে আগামী বছরও অনিশ্চিত টোকিও অলিম্পিক

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ২০ এপ্রিল ২০২০

প্রতিষেধক না মিললে আগামী বছরও  অনিশ্চিত টোকিও অলিম্পিক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত না হলে আগামী বছরও টোকিও অলিম্পিক বা প্যারালিম্পিক গেমস হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্বের প্রথম সারির স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা। তারা পরিষ্কার জানিয়েছেন, একমাত্র কার্যকরী ও সাশ্রয়ী মূল্যের চিকিৎসার সন্ধান পাওয়া গেলেই সেটা সম্ভব। না হলে নয়। এই সপ্তাহেই আইওসি ও আয়োজকেরা পরের বছর সুষ্ঠুভাবে অলিম্পিক আয়োজনের ব্যাপারে নতুন করে আশার কথা শুনিয়েছেন। যদিও একইসঙ্গে আইওসির এক কর্মকর্তা জন কোটস আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, মহামারীর দাপট পরের বছরের ক্রীড়াসূচীতেও প্রভাব ফেলতে পারে। তার দাবি, সবচেয়ে বড় সমস্যাটা দাঁড়াবে দর্শকসমাবেশ ও ক্রীড়াবিদদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়ে। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ্লোবাল হেলথ’ বিভাগের প্রধান, শ্রীধরের মন্তব্য, সব কিছুই নির্ভর করবে সস্তার প্রতিষেধক আবিষ্কার হলো কি না, তার উপরে। তিনি জানান, আমরা বিজ্ঞানীদের মুখে শুনছি, আগামী কিছু দিনের মধ্যে প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়ে যেতে পারে। তবু মনে হয়, তার জন্য এক থেকে দেড় বছর সময় লেগে যাবে। যদিও অনেকে বলছেন, সেদিন নাকি খুব দূরে নয়। সেটা হলে অবশ্যই ভাল এবং সেক্ষেত্রে পরের বছর টোকিওতে অলিম্পিক আয়োজন করার ভাবনা অবাস্তব কিছু নয়। তবে সেই প্রতিষেধক বা ওষুধের দামও যেন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকে। আর তা সহজলভ্য হতে হবে। অধ্যাপক শ্রীধরের আরও মন্তব্য, প্রতিষেধক আবিষ্কার না হলে পরের বছরও অলিম্পিক হওয়া নিয়ে গভীর সংশয় রয়েছে। জাপান কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কবল থেকে এখনও মুক্ত নয়। সংক্রমণ রুখতে সে দেশে আগামী ৬ মে পর্যন্ত জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান ইয়োশিরো মোরি জানিয়েছেন, এই বছরের অলিম্পিক বাতিল হওয়ার পর করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে তারা নতুন করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। মোরির বিশ্বাস, এই টাস্কফোর্স পরের বছর অলিম্পিকের সুষ্ঠু আয়োজনের পথ প্রশস্ত করবে। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে গেমস আয়োজনের জন্য আমরা সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছি। তাই আরও একটা বছর একইভাবে এবং আরও নতুন উদ্যমে কাজ করাটা কোন সমস্যা হবে না, বলেছেন মোরি। এদিকে অলিম্পিক এক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আয়োজকরা। হতাশার আবহে টোকিওতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে অলিম্পিক ভিলেজ। কিন্তু জাপানের রাজধানী ও অন্য শহরের কিছু গৃহহীন মানুষ এই ভিলেজে বসবাসের অনুমতি চাইলেন। ইতোমধ্যে তারা অনলাইনে আবেদনও জানিয়েছে অলিম্পিকসের আয়োজক কমিটি এবং টোকিও মেট্রোপলিটন অথরিটির কাছে। আবেদনপত্রে প্রায় দশ হাজার মানুষের স্বাক্ষর রয়েছে। তাদের আর্জি, অলিম্পিক বাতিল হয়ে যাওয়ায় অব্যবহৃত থেকে যাওয়া গেমস ভিলেজের বিশাল কমপ্লেক্স তাদের ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হোক। এই ভিলেজে প্রায় ১৫ হাজার এ্যাথলেটের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশাল এলাকাজুড়ে ২৪টি বিল্ডিং নিয়ে তৈরি হয়েছে এই ভিলেজ। এই পিটিশনের ব্যাপারে আপাতত কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি অলিম্পিক আয়োজকরা। পিটিশনের একটা অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘টোকিওর রাস্তাঘাটে জীবন নির্বাহ করেন প্রায় হাজার মানুষ। আরও চার হাজার মানুষ তথাকথিত নেট ক্যাফেতে দিন পার করেন। আবার এদের মধ্যে অনেকেই নেট সার্ফিং করেন প্রায় সারা রাত ধরে। টোকিও শহরের প্রশাসন এই সমীক্ষা করেছে। কিন্তু বর্তমানে করোনা মহামারীর জন্য শহরের অধিকাংশ নেট ক্যাফে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। ফলে টোকিওতে গৃহহীনের সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে। টোকিও প্রশাসন এমন এক জরুরী সময়ে ৫০০ ঘরবিশিষ্ট একটি হোটেল তৈরি করেছে। কিন্তু সেটিও স্থান সঙ্কুলানের জন্য যথেষ্ট নয়। এই মুহূর্তে অলিম্পিক গেমস ভিলেজ ছাড়া গৃহহীন মানুষদের থাকার আর কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এই অলিম্পিক ভিলেজ জয়েন্ট রিয়াল এস্টেট ভেঞ্চারে তৈরি করা হয়েছে। গেমস শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভিলেজের কিছু ইউনিট বিক্রি করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ডেভেলপারদের। আবার টোকিওর রাজ্যপাল পরামর্শ দিয়েছেন, এই ভিলেজকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে গড়ে তোলা হোক। করোনা মহামারীতে জাপানের প্রায় ১৬ শতাংশ মানুষ আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন। বার্ষিক রোজগার কমে গেছে। কাজ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। জীবনধারণের চিন্তা করতে গিয়ে অনেকেরই ঘুম উবে গেছে। একইসঙ্গে জাপান সরকার এবং অলিম্পিক কমিটিকে আগামী বছর গেমস আয়োজন নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে।
×