ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিরো টলারেন্স

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ২০ এপ্রিল ২০২০

 জিরো টলারেন্স

করোনা সঙ্কটকালে সরকার এবার ত্রাণ চোরদের বিরুদ্ধে গ্রহণ করেছে জিরো টলারেন্স নীতি। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে সরকার মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাচালানকারী, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও গ্রহণ করেছে জিরো টলারেন্স। তাতে কাজও হয়েছে কমবেশি। দুর্নীতি ও মাদক চোরাচালান একেবারে নির্র্মূল না হোক, কমেছে অনেকাংশে। মাসব্যাপী প্রলম্বিত করোনা সঙ্কটের ক্রান্তিকালে দেশের সর্বত্র যখন চলছে লকডাউন এবং সে কারণে মানুষের আয়-রোজগার প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম, তখন গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে সরকার সম্প্রসারিত করেছে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর পরিধিও বাড়িয়েছে। অন্তত পাঁচ কোটি দরিদ্রকে তালিকাভুক্ত করে ত্রাণ সহায়তা দিতে সদিচ্ছুক সরকার রেশনের মাধ্যমে। সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে ট্র্রাকসেলে ন্যায্যমূল্যে দেয়া হচ্ছে ভোগ্যপণ্য। তবে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী দুর্নীতিবাজ মুনাফাখোর এই সুযোগে চুরি করে নিচ্ছে দশ টাকা কেজির চাল। এসব চোরের অধিকাংশই আবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রমুখ। তাদের সঙ্গে স্থানীয় সরকার এবং টিসিবির কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকাও অস্বাভাবিক নয়। অনেক স্থানে বসতভিটার মেঝে খুঁড়ে ওএমএসের চাল এবং বক্স খাটের ভেতর থেকে টিসিবির তেল উদ্ধারের খবরও আছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করে অর্থদন্ডসহ জেলেও পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থায় ত্রাণ চোরদের জন্য জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করা হলে স্বভাবতই গরিব মানুষ উপকৃত হবে। এদিকে রমজানকে সামনে রেখে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। অথচ দেশে বোরো মৌসুম আসন্ন। চালের মজুদও সন্তোষজনক। অন্যান্য পণ্য চলাচল আপাতত লকডাউনে বিঘিœত হলেও অন্তত এই মুহূর্তে দাম বাড়ার কারণ নেই। সরকারকে এদিকে জরুরী দৃষ্টি দিতে হবে। গত কয়েক মাসে ধাপে ধাপে বাড়ছে অন্তত ১০টি নিত্যপণ্য- চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। এর পাশাপাশি পেঁয়াজ, আদা, রসুন, এলাচ, শুকনো মরিচ, দারুচিনি ইত্যাদি তো আছেই। ইতোমধ্যে বাজারে মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। অনেকটা এই প্রেক্ষাপটেই আসছে রমজান। সরকারের নানামুখী আন্তরিক উদ্যোগ-আয়োজন সত্ত্বেও বাজার পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক নয় তা স্বীকার করতে হবে। আর এর জন্য প্রধানত দায়ী এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, আড়তদারসহ পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। সপ্তাহের ব্যবধানে কোন কারণ ছাড়াই মোটা চালের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে পাঁচ টাকা। এর পাশাপাশি অস্থির হয়ে উঠেছে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করেন ক্রেতারা। দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাত দিচ্ছেন। এখন অজুহাত দিচ্ছেন করোনা ও রমজানের। আর এ কারণেই অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্য ভোগ্যপণ্যের বাজার। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর প্রায় টিসিবি, সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতাস্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ীর বাজার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি থাকবেই। তবে এসবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যেক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশা, আসন্ন রমজানে যেন নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে তাদের অহেতুক বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে না হয়। পবিত্র রমজানে মানুষ স্বস্তি চায়, শান্তি চায়।
×