ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বসে নেই শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ১৯ এপ্রিল ২০২০

বসে নেই শিক্ষার্থীরা

বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। চীন, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পর বাংলাদেশেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। কার্যত লকডাউন হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে অসচেতন। তাই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। এমনই কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন- আলী ইউনুস হৃদয় নিজে রান্না করে মানুষকে খাওয়াচ্ছি রিপন মাহমুদ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আমার বাড়ি যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলাতে হলেও বর্তমানে করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে সিলেটেই অবস্থান করছি। নিজের অবস্থান থেকে যে মানুষদের ঘর নেই রাস্তায় থাকেন তাদের সপ্তাহে একদিন রান্না করে খাওয়াচ্ছি। করোনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য হ্যান্ডমাইক কিনে সিএনজি ভাড়া করে টিলারগাঁও, বড়গুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ক্যাম্পেইন করেছি। পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনে জীবাণুনাশক মেডিসিন স্প্রে করেছি এবং মাস্ক, হাত ধোয়ার সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছি। পাহাড়ী জনপদের মানুষের কাছেও খাবার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা ছিল। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে সবজি কিনে ভ্যানে করে ঘরে ঘরে দিচ্ছি। এছাড়া নি¤œবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষকদের মাধ্যমে তহবিল গঠনের কাজ অব্যাহত আছে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি মুস্তাকিম খান লিমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমার বাড়ি নেত্রকোনো জেলার বারহাট্টা উপজেলায়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করলে বাড়িতে চলে আসি। স্থানীয় লোকজন দেখা হলেই আমাকে জিজ্ঞেস করে, করোনাভাইরাস কি সত্যি নাকি গুজব। আবার বাড়িতে এসেও আমাকে অনেকে প্রশ্ন করতে থাকে, করোনাভাইরাস কী? খেয়াল করে দেখলাম তাদের মাঝে কোন সচেতনতা নেই। আসমা ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামটি জেলার পিছিয়ে পড়া একটি এলাকা। ভাবলাম আমার এগিয়ে আসা উচিত। এজন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ও পাস করা কতিপয় শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টায় প্রথমে স্থানীয় বাজারে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করি। এছাড়া বাড়িতে বাড়িতে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করি। এখন আমরা স্থানীয় সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে হতদরিদ্র মানুষদের খাবার সহায়তা প্রদানের জন্য চেষ্টা করছি। মনে রাখতে হবে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করছি মারুফ হাসান মিলু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে গত ১৭ মার্চ বাড়িতে যাই। রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার কাবিলপুর ইউনিয়নে আমার বাড়ি। এলাকায় এসে দেখি করোনাভাইরাস বিষয়ে মানুষজন অসচেতন। ভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনা নেই। এলাকার বড়ভাই, বন্ধু ও ছোটভাই সকলের সহযোগিতা চাইলাম। সবাই একমত পোষণ করলেন যে, আমরা এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, উপজেলা চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করা হলো। প্রথমে মসজিদের ইমামদের সঙ্গে বসে কথা বলে মসজিদে সচেতনতামূলক ব্যানার টানিয়ে দেয়া হলো। এরপর ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে গ্রামের মানুষের মাঝে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করার বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়। একইসঙ্গে সচেতনতামূলক লিফলেট, সাবান ও মাস্ক বিতরণ করি। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হবে। এই কাজে প্রায় ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবী সহযোগিতা করছেন। স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠন করেছি রফিকুল ইসলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করছে বিষয়টি অনুধাবন করেই কুমিল্লা জেলার দড়িচর এলাকায় আমার গ্রামে স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠনের চেষ্টা করি। গত ১৯ মার্চ ফেসবুক একটি পোস্ট দিলে অনেকেই সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন। এরপর হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি টিম গঠন করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহায়তায় আমাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রথমে স্থানীয় জনপ্রতিনিদের সঙ্গে আলোচনা করে করোনার ভয়াবহতা তুলে ধরে এলাকায় মাইকিং করা হয়। একইসঙ্গে এলাকার মানুষের মাঝে মাস্ক, সাবান ও হ্যান্ডওয়াশ বিতরণ করা হয়। এছাড়া অসহায় মানুষদের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।
×