ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদপুরে ইউপি সদস্যের দুই ছেলে, স্ত্রী ও ভাইয়ের নাম

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ১৮ এপ্রিল ২০২০

 ফরিদপুরে ইউপি সদস্যের  দুই ছেলে, স্ত্রী ও  ভাইয়ের নাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ১৭ এপ্রিল ॥ অতি দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তার যে তালিকা করা হয়েছে তাতে এক সচ্ছল ইউপি সদস্যের দুই ছেলে, স্ত্রী, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীর নাম রয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নে। যে ইউপি সদস্যের ছেলে, স্ত্রী, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীর নাম ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি ওই ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন গত ৬ এপ্রিল তার ইউনিয়নের এক হাজার নয়শ’ দরিদ্র ব্যক্তির একটি তালিকা করে জমা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। ওই তালিকার বিষয় হিসেবে লেখা হয়, ৫নং কাইচাইল ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ত্রাণ কার্য ভিজিএফের তালিকা। ওই তালিকার ২৬৭ নম্বরে রয়েছে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীরের ছেলে সাব্বির, ২৬৮ নম্বরে অপর ছেলে ওমর সানি, ২৬৯ নম্বরে রয়েছে জাহাঙ্গীরের ভাই বিদেশ ফেরত বাবলু, ২৭০ নম্বরে জাহাঙ্গীরের আরেক ভাই লাবলুর স্ত্রী রেজি এবং ২৭১ নম্বরে রয়েছে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মাহফুজার নাম। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই তালিকা করার সময় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর একশটি নাম জমা দেন। এর মধ্যে ৫০ জন কান্দী গ্রামের। ওই ৫০ জনের মধ্যে তার ছেলে স্ত্রী, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীসহ মোট পাঁচজনের নাম রয়েছে। আরও জানা গেছে, জাহাঙ্গীর এবং তার ভাই সকলেরই পাকা দালান রয়েছে। মাঠে রয়েছে চাষের জমি এবং পাঁচ বিঘা জমির ওপর রয়েছে একটি পুকুর। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ওই তালিকা গরিবদের জন্য নয়, মধ্যবিত্তদের জন্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, এলাকার একজন নাগরিক হিসেবে তারও তো সাহায্য চাওয়া কিংবা নেয়ার অধিকার আছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এলাকায় কথা ওঠায় তিনি এখনও ওই মালামাল তোলেননি। কাইচাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, তাড়াহুড়ো করে তালিকা করায় তাতে অনেক ভুল হয়েছে। এক ব্যক্তির নাম একাধিকবার এসেছে। অনেক সচ্ছল ব্যক্তির নাম ঢুকে গেছে। তিনি বলেন, তালিকা যাচাই-বাছাই করে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তার ইউনিয়নে এক হাজার ৯০০ জনের তালিকা করা হলেও এক হাজার পাঁচশ জনকে দিলেই চলবে। নান্দাইলে আত্মীয়ের নামে ১৩ কার্ড! সংবাদদাতা নান্দাইল, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। অথচ সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা কেজির চালের ১৩টি কার্ড রয়েছে তাঁর পরিবার ও আত্মীয়দের নামে। ওই সদস্যের নাম রাফিউল হাফিজ রুকন। তিনি উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য। শুক্রবার ওই ওয়ার্ডের বড়াইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এই নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামের সুরুজ আলীর স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (৮৫) বলেন, ‘বাবারে আমার স্বামী নাই, ছেড়াডা মাইনষের বাড়িত কাজ-কাম কইরা সংসার চালায়, আমার নামে একটা কার্ড আছে শুনছি কিন্তু একদিনও চাউল তুলতাম পারছি না, মেম্বার খালি কয় ডিলারের লগে গিয়া দেহাকরতাম’। লালবানু (৬০) বলেন, মেম্বার তার পরিবারেই ১০/১২ জনের কার্ড দিয়া রাখছে এরপরেও আমাদের মতো গরিব ৪ জনের মাল তুলে খাচ্ছেন। বকুল মিয়া বলেন, ‘খোঁজলে তালিকায় তার আত্মীয়স্বজনের আরও নাম পাওয়া যাবে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর তালিকায় ১৫১০ নাম্বার কার্ডটি নার্গিস আক্তার, ১৫১৮ আমিরুল ইসলাম, ১৬৫০ আজনাহার, ১৫৬১ জামেনা আক্তার, ১৬২৪ আব্দুল হাসেম, ১৬৭৭ ইসলাম উদ্দিন, ১৫৫০ আব্দুস সালাম, ১৫৪৮ নিজাম উদ্দিন, ১৫১৬ আছিয়া আক্তার, ১৫৩১ লিটন মিয়া, ১৫৭৯ জিপু মিয়া, ১৫৪৪ আমেনা খাতুন ও ১৫৪৩ আব্দুল মান্নানের। তারা প্রত্যেকেই ওই ওয়ার্ড সদস্যের নিকটাত্মীয়। কেউ মামা, মামাতো ভাই, বোন, খালা বা বেয়াই। গত কয়েক বছর ধরে তারা উলুহাটি বাজারের ডিলার জামাল উদ্দিনের দোকান থেকে ১০ টাকা কেজির চাল উত্তোলন করে যাচ্ছেন। অথচ ওই ওয়ার্ডে তাদের চেয়েও দরিদ্র লোকজন সরকারের এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জানতে চাইলে ইউপি সদস্য রাফিউল হাফিজ রুকন বলেন, তারা আমার আত্মীয়-স্বজন হলেও গরিব। তাই কার্ড করে দিয়েছি।
×