ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘এখনই সময় মানবতা প্রদর্শনের’

প্রকাশিত: ০৮:০১, ১৮ এপ্রিল ২০২০

 ‘এখনই সময় মানবতা প্রদর্শনের’

রুমেল খান ॥ অসম্ভব রূপসী চেহারা দেখলে তাকে সিনেমার নায়িকা বলে ভুল করতে পারেন অনেকেই। যদিও তার ডাকনামটা জনপ্রিয় এক চিত্রনায়িকার নামেই! শৈশবে হতে চেয়েছিলেন সেনাবাহিনীর সৈনিক। করতে চেয়েছিলেন দেশের জন্য যুদ্ধ। বর্তমান কালে যুদ্ধই করছেন, তবে সেটা ফুটবলার হিসেবে! অস্ত্র হাতে নয়, বরং ফুটবল পায়ে। তার জন্ম ২০০১ সালের ৮ জুন। রংপুরের মেয়ে হলেও বর্তমান নিবাস সাভারের নবীনগরের খেজুরটেক বাজারে। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল দিয়ে খেলোয়াড়ি জীবনের সূচনা। ২০১১ ও ২০১২ সালে এ আসরে খেলেন রংপুর ১ নম্বর পালিচড়া স্কুলের হয়ে। প্রথমবার রানার্সআপ হলেও পরের বার চ্যাম্পিয়ন হয় তার স্কুল। ২০১৩ সালে প্ল্যান অ-১৬ বালিকা ট্যালেন্ট হান্ট কর্মসূচীতে ভাল পারফর্মেন্স দেখিয়ে জাতীয় অ-১৬ দলের ক্যাম্পে ডাক পান পরের বছরেই। এরপর অ-১৪, ১৫, ১৭, ১৮, ১৯ ও সিনিয়র জাতীয় দলে খেলেন। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার পজিশনে খেলা এই ফুটবলারটি জাতীয় দল ও ক্লাব দল বসুন্ধরা কিংসে ৮ নম্বর জার্সি পরে খেলেন। সাবিনা খাতুন, মার্তা, লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে আর্দশ ফুটবলার মানেন। তার নাম মিসরাত জাহান মৌসুমী। ৪ বোন, ২ ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ মৌসুমী। প্রথমে মানা না করলেও একটু বড় হতেই মা মোহসিনা বেগম বেঁকে বসলেন। ২০১২ সালে তার কারণে তিন মাস ফুটবলের বাইরে থাকা। তখন এলাকার চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এসে মাকে বোঝালে কাজ হয়। ফুটবল খেলে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকারও বেশি আয় করে মায়ের হাতে তুলে দিয়েছেন মৌসুমী। রাজমিস্ত্রি বাবা আব্দুল কাদের অবশ্য মেয়েকে বরাবরই উৎসাহ দিয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল যেন বিশ্বকাপে খেলে এবং সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের অধরা শিরোপা জেতে এবং সেই দুটি দলেরই যেন গর্বিত সদস্য থাকতে পারেন, এটাই মৌসুমীর স্বপ্ন। ফুটবলের প্রতি অনুরক্ত মৌসুমী এখন ফুটবল থেকে দূরে। কারণ করোনাভাইরাস। মহিলা ফুটবল লীগ চলাকালে এর প্রাদুর্ভাব ঘটে বাংলাদেশে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিপদ বুঝে দেশের সব খেলাধুলা স্থগিত ঘোষণা করে। যেদিন বসুন্ধরা কিংসের ক্যাম্প বন্ধ হয়, সেদিনই (১৮ মার্চ) বাড়িতে চলে আসেন মৌসুমী। ফিটনেস ধরে রাখতে এখন হাল্কা ব্যায়াম করছেন (স্ট্রেচিং ও কোর)। এছাড়া বাড়ির সামনে একটু ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানে বল নিয়ে একা একা অনুশীলন করেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বাইরে যাই না। শুধু একবার টাকা ওঠাতে ব্যাংকে গিয়েছিলাম। তখন মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরেছিলাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ও খাবার খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুই। পরিচিতদের কেউই এখনও কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়নি।’ প্রবাসী বাংলাদেশীরাই দেশে ফিরে করোনার বিস্তার ঘটিয়েছেন বলে অভিমত মৌসুমীর, ‘তারা নিয়মকানুনের ধার ধারেননি। হোম কোয়ারেন্টাইনে যাননি। নিঃসন্দেহে তাদের এই কাজ নিন্দনীয়। তাদের এই হঠকারিতায় আজ গোটা দেশের মানুষরা চরমভাবে মৃত্যু ঝুঁকিতে!’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘গরিব-অসহায়রা খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে তাদের সাহায্য করতে সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের জনপ্রতিনিধিরাই আবার চাল চুরি করছেন! তাদের এজন্য চরম শাস্তি দেয়া উচিত। তারা কখনই নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা উচিত। এখনই সময় মানবতা প্রদর্শনের।’ থানকুনি পাতা খেলে করোনা সারেÑ ওসব গুজবে বিশ্বাস করেন না মৌসুমী, ‘কোন থানকুনি পাতা খাইনি। প্রাকৃতিকভাবে এই পাতা শরীরের জন্য ভাল। কিন্তু করোনা ভাল হওয়ার সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। ডাক্তাররা যা বলেন, সেটাই খাওয়া উচিত। আমি সবসময়ই গরম পানি ও লেবু খাচ্ছি। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।’ বাড়ি এসে হোয়াটসএ্যাপের মাধ্যমে বসুন্ধরা কিংসের অপর টিমমেটদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন মৌসুমী। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তার ভাষ্য, ‘রোগ তো আর বলে-কয়ে আসে না। তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকাও যাবে না। বাঁচার জন্য সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে। সবার পাশে দাঁড়াতে হবে। সবার খোঁজ নিতে হবে। দূরে সরে থাকলে চলবে না। এখন ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে। সর্দি-জ্বর-কাশি হবেই। তাই বলে করোনা হয়েছে বলে আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। এক্ষেত্রে কদিন অপেক্ষা করাই ভাল আসলে কি হয়েছে সেটা জানতে।’ করোনায় মৃত্যুর পর অনেক মৃতদেহই দাফনে বাধা দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, ‘২-৩ ঘণ্টা পর করোনাভাইরাস লাশের শরীরে এমনিতেই আর বাঁচতে পারে না। কাজেই লাশ দাফনে বাধা দেয়াটা খুবই দুঃখজনক। এটা মানবতাহীন কাজ! এক্ষেত্রে সঠিকভাবে ডাক্তারি নিদের্শনা মেনেই মৃতদেহ দাফন করা যায়।’
×