ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এগারোটি টেস্ট ম্যাচ হারাবে বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ১৮ এপ্রিল ২০২০

 এগারোটি টেস্ট ম্যাচ হারাবে বাংলাদেশ!

মিথুন আশরাফ ॥ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে একের পর এক ম্যাচ, ইভেন্ট, সিরিজ, টুর্নামেন্ট স্থগিত হচ্ছে। পুরো বিশ্বের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। ক্রীড়াঙ্গনও স্থবির হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটও স্থবির হয়ে পড়ে আছে। বিপাকেও পড়ছে। এখন যা জানা যাচ্ছে, আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপই বাতিল হয়ে যেতে পারে। তিন মোড়ল ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বাতিলের দাবি তুলেছে। তা যদি হয়, তাহলে ১১ টেস্ট ম্যাচ হারাবে বাংলাদেশ। এমনিতেই টেস্ট কম খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালু করায় এখন বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ ধরা দিয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্টি জটিলতায় সেই সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে বাংলাদেশের। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বাতিল করতে বলেছে তিন মোড়ল। শুধু আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপই নয়, ওয়ানডের দুই বছর মেয়াদী লীগও বাতিলের দাবি তোলা হয়েছে। ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বেশ কিছু ক্রিকেট বোর্ডও একমত পোষণ করেছে। আইসিসিকে ভবিষ্যত সফরসূচী আবার ঢেলে সাজানোর আহ্বানও জানানো হয়। মার্চে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে আইসিসির গবর্নর কমিটির মিটিং হয়েছিল। সেই মিটিংয়েই নাকি এমন প্রস্তাব উঠে। টাইমস অব ইন্ডিয়া (টিওআই) এমনটিই জানিয়েছে। টিওআইকে এক প্রশাসক এমন বিষয়গুলো নিয়ে জানিয়েছেন। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে লীগ বাতিল করার দাবি ওঠানো এবং ভবিষ্যত সূচী নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবির পেছনে যুক্তিও দাঁড় করানো হয়। করোনাভাইরাসের কারণে নির্ধারিত সিরিজই বাতিল হয়ে গেছে। যাচ্ছেও। এমন অবস্থায় আগামী দুই বছরের জন্য টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে লীগ বাতিল করার দাবি ওঠে। আগামী বছর, ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রথম ধাপের টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হবে। এরপর আবার ২০২৩ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে হবে। যেটাকে টেস্টের বিশ্বকাপও ধরা হচ্ছে। প্রথম ধাপের ফাইনাল হবে ২০২১ সালের জুনে ইংল্যান্ডের লর্ডসে। এমনই সূচী ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সময়মতো যে ফাইনাল হবে না, তা ধরেই নেয়া হয়েছে। কারণ, একের পর এক টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজ স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। এখন যদি আবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজগুলো হয়, তাহলে দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে এর প্রভাব পড়বে। আইসিসির নির্ধারণ করা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচের যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলা বোর্ডগুলোর জন্য অনেক লোভনীয়। কিন্তু আইসিসি কী সত্যিই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবার বাতিল করবে? তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু তিন মোড়লের সঙ্গে যদি বেশিরভাগ বোর্ড একই দাবি তোলে, তাহলে আইসিসিকে তা মানতেই হবে। দাবি যদি মেনে নেয়া হয়, তাহলে অনেক টেস্ট হারাবে বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম ধাপে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪ টেস্ট খেলার কথা বাংলাদেশের। তিন টেস্ট খেলা হয়েছে। বাকি আছে আরও ১১টি। যদি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বাতিল হয়, তাহলে এই ১১ টেস্ট ম্যাচ হারাবে বাংলাদেশ। এমনিতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি টেস্ট ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুটি টেস্ট স্থগিত হয়ে গেছে। এরপর জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩টি, আগস্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২টি, আগামী বছর জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ রয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে ২ ম্যাচ এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১ ম্যাচ খেলা হয়েছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আরও ১১টি ম্যাচ খেলা বাকি আছে বাংলাদেশের। এ নিয়ে আইসিসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এখন সংস্থাটির মাথাব্যথার কারণ। প্রতিযোগিতাটির ভবিষ্যত কী তা নিয়ে এখনও অবশ্য বড় রকমের সিদ্ধান্তে আসবে না তারা। বরং সদস্য দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে নতুন সূচী তৈরিতে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী সংস্থাটি। কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা এই প্রতিযোগিতা নিয়ে কাজ করা চালিয়ে যাব। আমরা একটি বিস্তৃত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি যা বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে। এর মধ্যে আছে মহামারীর ভেতরেও সম্ভাব্য বিকল্প খুঁজে বের করা। আমরা অবশ্য এখনও তেমন কোন সিদ্ধান্ত নেইনি।’ ভারতীয় বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, ‘সবাইকে আগে নিজেদের সমস্যা নিয়ে কাজ করতে হবে। কোনকিছুই সহজে সমাধান হবে না যতক্ষণ না সবার মাথা এক হয়। এই মহামারী গত তিন-চার বছরের সূচী বিশেষ করে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রভাব রেখে যাবে।’ পাকিস্তানের কোচ মিসবাহ-উল-হক বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন সূচী তৈরির প্রয়োজন পড়বেই। এরপরও সবাইকে সমান সুযোগ দেয়ার আহ্বান এ কোচের, ‘যখন আমরা ক্রিকেটে ফিরব, তখন সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে। টুর্নামেন্ট ছোট করার কোন দরকার নেই। কোন ম্যাচ বাতিল করা যাবে না, তাতে যদি আসর লম্বা হয় এরপরও। সবাই যেন সমান সুযোগ পায় সেভাবেই সূচী তৈরি করতে হবে।’ করোনাকাল পার হয়ে গেলে যদি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে লীগ চালু হয় তাহলে অনেকগুলো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাতিল হয়ে যাবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। এমনটা হলে তিন মোড়লের ক্ষতিটাই বেশি হবে। ধোনি বোর্ডগুলোই বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই তো তিন মোড়লই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বাতিলের দাবি তুলছে। দাবিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বাতিল হলে বাংলাদেশ ১১ টেস্ট ম্যাচ হারাবে।
×