ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জন্মদিনে সঙ্কটমুক্তির প্রত্যাশা শিল্পী হাশেম খানের

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ১৭ এপ্রিল ২০২০

জন্মদিনে সঙ্কটমুক্তির প্রত্যাশা শিল্পী হাশেম খানের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৃজনে নিমগ্ন এক মানুষ হাশেম খান। শিল্পচর্চার মাঝেই খুঁজে নিয়েছেন জীবনের সার্থকতা। শিল্প স্রোতধারাতেই নিবেদিত হয়েছে স্বদেশের প্রতি তার ভালোবাসা আর অঙ্গীকার। রং-তুলির আঁচড়ে চিত্রিত ক্যানভাসে বারংবার উঠে এসেছে বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। সেই সৃজনশীল কর্মপ্রবাহে সমৃদ্ধ হয়েছে দেশের চারুকলা ভুবন। বৃহস্পতিবার ছিল বরেণ্য এই চিত্রশিল্পীর জন্মদিন। সৃষ্টিকে সঙ্গী করে চলা জীবনে আটাত্তর বছর পেরিয়ে এদিন পদার্পণ করেন ৭৯ বছরে। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের দুর্যোগময় দিনে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন বা আনুষ্ঠানিকতায় উদ্যাপিত হয়নি তার জন্মদিন। নিজের ৭৯তম জন্মদিনে কোভিড-১৯-এর সঙ্কট থেকে মুক্তির প্রত্যাশা করেছেন করেছেন এই শিল্পী। জন্মদিনের অনুভূতি প্রকাশে হাশেম খান জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনও জন্মদিন উদ্যাপন করিনি। এই নিয়ে আমার তেমন আগ্রহও নেই। তবে প্রতিবছরই শুভাকাক্সক্ষী ও ভক্তদের ভালোবাসায় কেটে যায় দিনটি। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই সুবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বন্ধুবান্ধব এবং শুভানুধ্যায়ীরা ফোনে ও ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। আমার অগণিত ছাত্র জন্মদিনে বিভিন্নভাবে জানিয়েছে তাদের ভালোবাসা। করোনাকালীন বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে শিল্পী বলেন, আমাদের মতো সংবেদনশীল মানুষরা এমন সময়ে ভালো থাকতে পারে না। ঘরে বসে ছবি আঁকার চেষ্টা করছি। তবে কোনো কিছুতেই মন বসছে না। টিভি দেখে কিংবা বই বা পত্রিকা পড়ে কাটছে সময়। জন্মদিনের দিন একটা মজার ঘটনা ঘটল। একসঙ্গে গত এক সপ্তাহের পত্রিকা হাতে এসে পৌঁছল। চলমান সঙ্কটের কারণে হকার এতদিন পত্রিকা দেয়নি। এই হকারের মতো কর্মজীবী মানুষরা বর্তমানে খুব কষ্টে আছে। বিশেষ করে রিক্সাচালক, শ্রমিক, দিনমজুর শ্রেণীর মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা। এভাবে চলতে থাকলে বাড়বে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা । শুধু তাই নয়, করোনার প্রভাবে গোটা মানবসভ্যতাই আজ সঙ্কটের মুখে ধাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। নিজের জীবন বিপন্ন করে অনেক চিকিৎসক মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা ভয়ঙ্কর এই ভাইরাসকে প্রতিরোধের পথ খুঁজছেন। ভাইরাসের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আবিষ্কারের নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এমন অবস্থায় আশা জাগানিয়া কিছু খবর আসছে। আশা করি, সব শেষে মানুষের জয় হবেই। সঙ্কটের উত্তরণ ঘটিয়ে মিলবে মুক্তির পথ। ১৯৪১ সালের ১৬ এপ্রিল মেঘনাবিধৌত চাঁদপুরের সেকদি গ্রামে মোহাম্মদ ইউসুফ খান ও নূরেন্নেসা খানমের ঘর আলো করে জন্ম নেন প্রখ্যাত চিত্রকর হাশেম খান। শিক্ষাজীবন শুরু মুন্সিবাড়ি প্রাথমিক স্কুলে। তিনি ১৯৬১ সালে চিত্রকলায় প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১-৬৩ পর্যন্ত এশিয়া ফাউন্ডেশনের বৃত্তিতে মৃৎশিল্পে রিসার্চ স্কলার হিসেবে কাজ করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খ্যাতিমান এই শিল্পী দীর্ঘ ৬২ বছর ধরে সম্পৃক্ত আছেন শিল্পচর্চায় ও সংকৃতি বিকাশে। ১৯৬৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পালন করেছেন চারুকলা অনুষদের সফল শিক্ষকের দায়িত্ব। দেশের চারুকলা বিকাশের আন্দোলন থেকে মানবাধিকার আন্দোলন ও প্রগতিশীল সংস্কৃতিচর্চার পরিবেশ সৃষ্টিতে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। ১৯৭২ সালে দেশের সংবিধান অলঙ্করণের প্রধান শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রিয় পাত্র ছিলেন এই শিল্পী। ষাটের দশকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও প্রগতিশীল রাজনীতির প্রায় সব পোস্টার, ফেস্টুন, ছবি, প্রচার পুস্তিকার প্রচ্ছদ এঁকেছেন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয়-দফার লোগো, পতাকা নক্সা, পোস্টার ও অন্যান্য শিল্পকর্মও করেছেন হাশেম খান। বড়দের মতো শিশুদের কাছেও প্রিয় এক শিল্পীর নাম হাশেম খান। শিশুদের বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকে শিশুপাঠকে করে তুলেছেন আনন্দের বিষয়ে। হাশেম খান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত স্বাধীনতা স্তম্ভের জুরি বোর্ড ও বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি ও শিশু একাডেমির আজীবন সদস্য। শিল্প ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হাশেম খান বেশ কিছু বই লিখেছেন। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কর্তৃক বইয়ের ছবি আঁকার (প্রচ্ছদ ও ইলাস্ট্রেশন) শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে তিনি ১৬ বার পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে লাইপজিগ আন্তর্জাতিক বইমেলায় তার আঁকা বই পুরস্কৃত হয়। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯২ সালে অর্জন করেন একুশে পদক। ২০১১ সালে ভূষিত হন স্বাধীনতা পুরস্কারে। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
×