ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়াসার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

ঘরবন্দী জীবনযাপনের মধ্যে রাজধানীতে পানি সঙ্কট

প্রকাশিত: ১০:৪০, ১৭ এপ্রিল ২০২০

ঘরবন্দী জীবনযাপনের মধ্যে রাজধানীতে পানি সঙ্কট

ফিরোজ মান্না ॥ করোনায় গোটা ঢাকা মহানগরী থমকে গেছে। মানুষ ঘরবন্দী জীবন যাপন করছেন। মানুষের ঘরবন্দী জীবন যাপনের মধ্যে শুরু হয়েছে পানি সঙ্কট। একদিকে করোনার ভয়-অন্যদিকে পানিবিহীন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। মার্চ মাসের শুরু থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানির তীব্র সঙ্কট চলছে। এই সঙ্কট নিরসনে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ উদাসীন ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অবশ্য করোনার মধ্যে পানি সরবরাহ ঠিক রাখা হবে বলে এর আগে জনকণ্ঠকে জানিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। মন্ত্রী বলেন, অন্যান্য জরুরী সেবার মতো পানি সরবরাহ ব্যবস্থা জরুরী সেবা হিসেবে কাজ করবে। ওয়াসার সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জরুরী সেবার জন্য কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখানে কোন প্রকার গাফিলতি চলবে না। মন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার অনেক পাথর্ক্য রয়েছে। নগরীর মিরপুর, ইব্রাহিমপুর, কাফরুল, পূর্ব শেওড়াপাড়া, শেওড়াপাড়া, মগবাজার পেয়ারাবাগ, নয়াটোলা, মধুবাগসহ নগরীর শতাধিক স্থানে গত এক সপ্তাহ ধরে পানি মিলছে না। রাতের বেলায় অল্প কিছু ছাড়া হয়। দিনের বেলায় কোন বাড়িতে পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে না। পানির অভাবে দৈনন্দিন কাজও প্রায় বন্ধ। ওয়াসার পানি কিনতে গেলে প্রতি গাড়িতে ৫শ’ টাকার বেশি বাড়তি দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। ওয়াসা বলছে, পুরাতন সরবরাহ পাইপ থেকে নতুন পাইপে পানি সরবরাহ দেয়ার কাজ চলছে বলে বিভিন্ন এলাকায় পানি সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আগামী ২৫ দিন থেকে শুরু করে এক মাসে এই সমস্যা হবে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের এই বক্তব্যের পর এক মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও নগরীর বিবিন্ন এলাকায় পানি সঙ্কট বেড়েই চলেছে। বলা হচ্ছে নতুন পাইপের সংযোগ দিতে কারিগরি সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে সময় বেশি লাগছে। ওয়াসার একজন কর্মকর্তা বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে সংযোগ দেয়ার কাজ ধীরগতিতে চলছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বাসা বাড়িতে সংযোগ দেয়ার কাজ ধীরে ধীরে করছে। সময় বেশি লাগাতে পারলে টাকার অঙ্ক বাড়াতে পারবেন। এ জন্যই বাসাবাড়িতে নতুন পাইপের সংযোগ কাজ ধীরগতিতে চলছে। নগরীতে পানি সঙ্কট নিয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, নগরীর বেশ কিছু এলাকায় পানির সমস্যার কথা ওয়াসার এমডি আমাকে জানিয়েছেন। এমডি বলেছেন, অনেক এলাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। ওই সব এলাকায় পানি সরবরাহ তৈরি করতে কাজ করা হচ্ছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ পানি সমস্যা দূর হবে তা বলা মুশকিল বলে তিনি জানিয়েছেন। পানি সঙ্কট দূর করার জন্য এমডিকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও পানি সরবরাহ ঠিক রাখা হবে। দেশের সবকিছু বন্ধ হলেও পানি সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য ওয়াসাকে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। পানি সেবা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক করা হয়েছে। আশা করি করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হলেও নগরবাসী পানি সঙ্কটে পড়বে না। পানি সরবরাহ নিশ্চিত থাকবে। পানি নিয়ে কোন প্যানিক হবে না। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে- তিনি এসএমএস দিয়ে জানিয়েছেন মিটিংয়ে আছেন। এদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধজনিত সঙ্কট চলছে। এসব এলাকার গ্রাহকরা বাড়ির পানির বিল পরিশোধ করার পরও ওয়াসার পাম্পস্টেশন থেকে পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতি গাড়ি পানিতে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। ওয়াসার বিভিন্ন অফিসে গ্রাহকরা অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না। উল্টো যারা অভিযোগ করছেন-তাদের কাছ থেকে পানির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশন, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, ঢাকার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার বাসাবো, মুগদা, মা-া, দোলাইরপাড়, দনিয়া, গোপীবাগ, মগবাজার এলাকায় পানির সঙ্কট চলছে। একই সঙ্গে রয়েছে দুর্গন্ধের সমস্যা। মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের বি-ব্লক, ১২ নম্বর সড়কে পানির তীব্র সঙ্কট। স্থানীয় বাসিন্দারা পানি সঙ্কট নিয়ে মিছিলও করেছে। এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে কোন পানি সরবরাহ নেই। মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আশপাশের এলাকায়ও পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। সেনপাড়া-পর্বতা এলাকার ওয়াসার পাম্পস্টেশন কয়েকদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। এ কারণে পানির সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। উল্লেখ্য, ওয়াসার সায়েদাবাদ, চাঁদনী চক, নারায়ণগঞ্জ পানি শোধনাগার এবং ৮২৩টি গভীর নলকূপের সাহায্যে প্রতিদিন পানির উৎপাদন ২৪৫ কোটি লিটার। পানির চাহিদা ২৩৫ কোটি লিটার। ওয়াসার এই তথ্য বাস্তবের সঙ্গে কোন মিল নেই। কারণ ২৪৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হলে সিস্টেম লসের পরেও নগরবাসীর পানির কোন সঙ্কট থাকার কথা নয়। এরপরও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানির সঙ্কট বিরাজ করছে।
×