ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ১৭ এপ্রিল ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিল বাঙালী। ১৪২৭ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন কোন উৎসব অনুষ্ঠান ছিল না। রমনা বটমূলে মঞ্চ হয়নি। গানে গানে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়নি ছায়ানট। মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো বর্ণিল আয়োজন বাতিল করা হয়। অনেকে আক্ষেপ করে বলছেন, এমন বিবর্ণ পহেলা বৈশাখ আগে কখনও দেখিনি! আসলেই কি তাই? আমার নিজের তা মনে হয়নি। দিনটি বরং বাঙালীর চেতনার রঙে দারুণ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। এবার, হ্যাঁ, নতুন শাড়ি পাঞ্জাবি গায়ে তোলা হয়নি। চমৎকার সেজে ঘুরে বেড়ানো হয়নি শহর। তাই বলে বৈশাখ ঘিরে বাঙালীর হৃদয়ে যে আবেগ, যে উষ্ণতা, সে তো অস্বীকার করা যাবে না। এদিন ঘরে বসেই হয়েছে বাঙালীত্বেও সাধনা। নানাভাব ও ভাষায় অসাম্প্রদায়িক লোক চেতনার প্রকাশ ঘটানো হয়েছে। বাসা বাড়িতে ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্যের খাবার দাবার। ভর্তা ভাজি শাক শুঁটকি ইত্যাদি দিয়ে সাজানো ছিল ডাইনিং টেবিল। বিকেলে কিশোরীরা তরুণীরা গতবারের শাড়িটি পরেই বাসার ছাদে উঠেছে। হেঁটে বেড়িয়েছে। ছবি তুলেছে। আর ছেলেরা? কোত্থেকে যে এত ঘুঁড়ি ওরা পেয়েছিল, কে জানে! নিজ নিজ ছাদ থেকে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ঘুড়ি উড়িয়ে দিয়েছিল তারা। সামান্য বাতাসে ঘুড়িগুলো উড়ছিল। বিকেলে নিজের বাসার ছাদ থেকে এমন বেশকিছু দৃশ্য দেখে আমি সত্যি আশাবাদী হয়েছি। পরে অন্যান্য এলাকার খোঁজ নিতে গিয়ে জেনেছি, সে সব এলাকার ছাদেও উদ্যাপিত হয়েছে পহেলা বৈশাখ। এই তো বেশ। ঘরে বসে হতাশ না হয়ে মনটাকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা। এবার ভয়কে জয় করার দৃঢ় প্রত্যয় ও সবাই মিলে বাঁচার শপথ নিয়েছে বাঙালী। জয় হোক বাঙালীর। সবাইকে আবারও শুভ নববর্ষ। করোনার প্রসঙ্গে আসা যাক, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়। এরপর থেকে রোগী সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে। বর্তমানে যথেষ্ট শঙ্কার মুখে বাংলাদেশ। তবে বেশি হুমকির মুখে বায়ান্নবাজার তিপ্পান্নগলির শহর ঢাকা। এখানে অসংখ্য মানুষের বাস। ঘনবসতি। ফলে দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরে অবস্থান নেয়ার পরও জনমনে স্বস্তি নেই। এরই মাঝে ৯৮ এলাকায় ৫১৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ সংখ্যা দেশের মোট রোগীর ৪৫ শতাংশের বেশি। প্রাদুর্ভাব বাড়ায় রাজধানীর ১৬ এলাকা করোনাভাইরাসের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানাচ্ছে, এসব এলাকায় ১০ জনেরও বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের মধ্যে ওয়ারীতে ২৬, মোহাম্মদপুরে ২০, টোলারবাগে ১৯, যাত্রাবাড়ীতে ১৯, ধানম-িতে ১৮, লালবাগে ১৮, উত্তরায় ১৭, তেজগাঁওয়ে ১৬, বাসাবোতে ১৪, গেন্ডারিয়ায় ১৩, মগবাজারে ১০, মহাখালীতে ১০, মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনে ১১, মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনে ১০, গ্রীনরোড ১০ ও বাবুবাজারে ১১ জন রোগী রয়েছেন। গুলশান বনানীসহ অভিজাত এলাকাও করোনামুক্ত নয়। এ অবস্থায় যত কষ্টই হোক, সকলকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। প্রথম থেকে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হলেও, বর্তমানে আহ্বানটি আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার সময় এসেছে। কারণটি কারও অজানা নয়, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। কেউ যদি মনে করেন, এতদিন ঘরবন্দী থেকে হাঁপিয়ে উঠেছি, আর পারা যাচ্ছে না, তাহলেই বিপদ। শুধু নিজের নয়, পরিবারের সদস্য নিকটাত্মীয়সহ পাড়া প্রতিবেশীকে বিপদে ফেলা হবে। কেউ এমন আত্মঘাতী হব না- আজকের দুঃসময়ে এটিই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
×