ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রলয় থাকবে না-

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ১৭ এপ্রিল ২০২০

প্রলয় থাকবে না-

বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও সবাইকে হতোদ্যম না হয়ে মনোবল অক্ষুণœ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি এই মর্মে দেশ ও জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন যে, প্রলয় চিরদিন থাকবে না। একদিন না একদিন তা থেমে যাবেই। ততক্ষণ ধৈর্য ধরে ঐক্যবদ্ধ থেকে মোকাবেলা করতে হবে প্রতিকূল পরিস্থিতির। তারপর দুর্যোগের ঘনঘটা থেমে গেলে, মেঘ কেটে গেলে নতুন সূর্যোদয় ঘটবেই। তখন সমগ্র দেশ ও জাতিকে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে। সারাদেশ একটানা বেশ কিছুদিন লকডাউনে থাকায় যে বিপুল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ও হচ্ছে তার পুনরুদ্ধারে মনোযোগী হতে হবে সবাইকে। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে করোনায় সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় এক লাখ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। যার সুফল পাবে প্রায় সবাই- ধনী-গরিব-কৃষক-খামারি-ক্ষুদ্রশিল্প-বৃহৎশিল্প-পোশাক খাত সর্বোপরি অতি দরিদ্র শ্রেণী পেশার মানুষ নির্বিশেষে। সত্যি বলতে কি, সাধারণ মানুষ এখনই এর সুফল পেতেও শুরু করেছে। সরকার তার ত্রাণ কর্মসূচী শহর-বন্দর-গ্রাম-গঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেছে। গরিব ও ক্ষুধার্ত মানুষ কমবেশি নগদ প্রণোদনা ও ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছে। কোথাও কোথাও যৎসামান্য নয়-ছয়ের সংবাদ পাওয়া গেলেও মোটের ওপর মানুষ না খেয়ে মরছে না। দশ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রির আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে ওএমএস কার্ডের মাধ্যমে। টিসিবির মাধ্যমেও চলছে ট্রাকসেলে নিত্য পণ্যসামগ্রী বিক্রি, যার আওতা রমজানের আগে আরও বাড়ানো হবে। প্রধানমন্ত্রী বিলক্ষণ অবগত আছেন যে, করোনা আক্রমণের কারণে এবার রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বাঙালীর ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব বাংলা নববর্ষ পালন করতে পারেনি সম্মিলিতভাবে। যদিও টিভি ও গণমাধ্যমে এর আয়োজনে কোন কমতি ছিল না। ডিজিটাল মাধ্যম ও ভার্চুয়াল জগতে সর্বস্তরের মানুষ এই উৎসব আয়োজন অনেকটাই উপভোগে সক্ষম হয়েছেন। তবু প্রধানমন্ত্রী জনগণের সঙ্গে বাংলা নববর্ষের উৎসবের আমেজ অনেকটাই ভাগ করে নিতে চেয়েছেন। এবারের ভাষণও গণভবনের সুবিস্তৃত সবুজ লনে আয়োজিত হলেও তিনি ভাষণ দিয়েছেন দাঁড়িয়ে। তার পেছনে ছিল আবহমান গ্রাম-বাংলার দৃষ্টিনন্দন দুটি কুঁড়েঘর, তাতে সুশোভিত ছিল চিরায়ত বঙ্গ সংস্কৃতির নানাবিধ সুদৃশ্য উপকরণ সর্বোপরি, সবুজ বৃক্ষরাজি, যা সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে দেশ বাংলার চিরচেনা রূপ। এখানেই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে সৃজনশীলতা ও জনগণের সঙ্গে একাত্বতাবোধ, যেখানে প্রধানমন্ত্রী অনন্যসাধারণ ও অদ্বিতীয়। বৈশ্বিক বিপর্যয় সত্ত্বেও আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ অন্তত একদিক থেকে এগিয়ে আছে খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায়। অর্থাৎ দেশে কোন খাদ্য সঙ্কটের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এবার বোরোর ফলনও আশাব্যঞ্জক, ঘরে ওঠার অপেক্ষায়। তবে আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবু এর প্রভাব জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক হবে না বলেই প্রতীয়মান হয়। কেননা, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভাল। ইতোপূর্বে প্রণোদনা দেয়ায় প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণও বেড়েছে। পোশাক শিল্পে আপাতত কিছু সমস্যা দেখা দিলেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ দশটি মেগা প্রকল্প বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। ফলে গড় জাতীয় প্রবৃদ্ধি আট শতাংশের ওপরে ধরে রাখা সম্ভব হতে পারে। সঠিক বিবেচনায় বাংলাদেশের বলতেই হবে ইতিবাচক। দেশ ও জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সেই আশাবাদ ও প্রত্যয়েই ব্যক্ত করেছেন, যা প্রেরণা যোগাবে দেশবাসীকে।
×