ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিতে প্রণোদনা

প্রকাশিত: ০৮:০৭, ১৬ এপ্রিল ২০২০

কৃষিতে প্রণোদনা

করোনার ভয়ঙ্কর সংক্রমণে জনজীবন বিপর্যস্ত, হতোদ্যম। সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের ঘরে থাকার কর্মহীন সময় আজ দেশের জন্য এক অশনিসঙ্কেত। যথার্থ উৎপাদক শ্রেণীর নিরলস ঘরে বসে অবকাশ জীবন যাপন অর্থনীতিকে যে সঙ্কটাপন্ন পর্যায়ে পতিত করছে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা এখন অবধি অজানা। বাংলাদেশ গ্রামনির্ভর ও কৃষিনির্ভর কৃষি অর্থনীতিতে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য সংস্থানসহ বহুবিধ উপকরণ যোগান দেয়। সেই কৃষক এবং ফসলি জমি বর্তমানে দুরবস্থার দুর্বিপাকে। স্বাস্থ্য আর প্রাণের নিত্য নৈমিত্তিক আতঙ্কিত যাপিত জীবনের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে যুক্ত হয় অন্ন যোগাড়ের নানামাত্রিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। হতদরিদ্র মানুষদের ঘরে আটকে থাকার কারণে নিজেদের খাদ্য সঙ্কুলানই এক মহা দুর্যোগের আবর্তে। আর বিপুল চাহিদা মোতাবেক উৎপাদন আর সরবরাহ কোন দুর্গতির জালে পিষ্ট হবে, সেটাও এখন অবধি ধারণার অতীত। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে প্রবৃদ্ধি ২ থেকে ৩ শতাংশে নেমে আসার আবাস মিলছে। তবে হতদরিদ্র যারা শুধু কৃষকই নয়, খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিক্সা, ভ্যান ও সিএনজি চালক, ফুটপাথের খ-কালীন চা, বিস্কুট এবং ক্ষুদ্র বিক্রেতাসহ সবার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায় কৃষকদের সৌজন্যে। তবে শুধু সরকার নয়, বিত্তশালী মানুষ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তা এবং ব্যক্তি উদ্যোগেও খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে দিন আনে দিন খায় নি¤œবিত্তদের জন্য। এভাবে তো খুব বেশিদিন চললে মজুদকৃত, বরাদ্দ খাদ্য শস্যের ঘাটতি দেখা দিতেও সময় লাগবে না। ফলে কোন এক সময় করোনার প্রাদুর্ভাব নি¤œগতি হলে প্রয়োজন পড়বে নতুন উদ্যম ও শক্তিতে উৎপাদনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন অর্থনীতির বিভিন্ন খাতকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলতে। শেষ অবধি কৃষি অর্থনীতিকেও তার সহায়ক শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে এগিয়ে যাবার প্রেরণায় ৫ হাজার কোটি টাকার সহযোগিতা দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। সেখান থেকে মাত্র ৫% সুদে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকের মধ্যে, যারা সরাসরি চাষের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য তাদের দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনার আগ্রাসী সঙ্কটকে মোকাবেলা করতেই কৃষিখাতে এমন সহায়ক প্রণোদনার ঘোষণা আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে। রবিবার গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সে সরকার প্রধান এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন হদদরিদ্র উৎপাদক শ্রেণী কৃষকদের ব্যাপারে। যারা দরিদ্র মানুষের দুর্দিনের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকবে তাদেরও ক্ষমা করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তাৎক্ষণিক বিচার ব্যবস্থায় তাদের শাস্তি প্রদানের বিষয়টিও আমলে নিতে বলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। যারা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গরিব মানুষের ভাগ্যকে বিড়ম্বিত করতে চায় তাদের উপযুক্ত শাস্তির বিধান করা হবে বলে দৃঢ় মত ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী এই প্রণোদনা তহবিল থেকে অর্থ প্রদানের ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন কৃষি, ফুল, ফল, মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্ম থেকে শুরু করে সহায়ক সব কৃষিজাত পণ্যের জন্য এমন ব্যবস্থা বরাদ্দ থাকবে। এছাড়া কৃষি খাতে সারের ভর্তুকি মোকাবেলায় আগামী অর্থবছরে ৯ হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দেরও ঘোষণা দেন। এছাড়া ধান কাটা ও মাড়াই যান্ত্রিকীকরণে ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়কে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরও ১০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। সময় মতো তাও পৌঁছে যাবে কৃষকদের হাতে। পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলা জাতীয় কিছু উৎপাদন করলে সংশ্লিষ্ট কৃষক ৪% সুদে অর্থঋণ এখনও পেয়ে যাচ্ছেন। কিছুদিনের মধ্যে বোরো ধান উঠলে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় ২ লাখ মেট্রিক টন চাল বেশি কিনবে। যাতে মূল উৎপাদক কৃষকের তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পেতে কোন ভোগান্তির অবকাশ না থাকে।
×