ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ঐতিহাসিক শিরোপা নিয়ে ফেরার দিন

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ১৪ এপ্রিল ২০২০

আজ ঐতিহাসিক শিরোপা নিয়ে ফেরার দিন

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাংলাদেশের মানুষের অন্যতম একটি উৎসবের দিন পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। ২৩ বছর আগের পহেলা এই বৈশাখে আরেকটু রং, আরও আনন্দ যোগ হয়েছিল। উৎসবটা হয়ে উঠেছিল ক্রিকেট কেন্দ্রিক। মালয়েশিয়া থেকে ১৯৯৭ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ফিরেছিল আইসিসি ট্রফির শিরোপা সঙ্গে নিয়ে। তাই নববর্ষের উৎসবটা হয়েছিল সেই বিজয়ী বীর চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে দেশবাসীর অপার আনন্দে ভেসে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। প্রথমবার আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ দল চৈত্র সংক্রান্তিতে- ১৩ এপ্রিল, ১৯৯৭। অধিনায়ক আকরাম খানের নেতৃত্বে সেদিন আইসিসি ট্রফির ফাইনালে কিলাত কেলাব মাঠে সে সময়ের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী কেনিয়াকে শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াইয়ে ২ উইকেটে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। আর এই শিরোপাই আমূল বদলে দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের পুরো ইতিহাস। দেশের ক্রিকেট দাঁড়িয়ে যায় শক্ত ভিতের ওপর। ঐতিহাসিক সেই শিরোপা পৌঁছার অবিস্মরণীয় দিন আজ। স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সুযোগ করে নেয়ার। বারবার সেই স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে কেনিয়ার কাছে হেরে। ১৯৯৪ সালের আইসিসি ট্রফিতে দারুণ প্রত্যাশা ও প্রবল সম্ভাবনা থাকলেও কেনিয়ার কাছে দ্বিতীয় রাউন্ডের দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র ১৩ রানে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশ দলের। সে সময় আইসিসি ট্রফির প্রতিযোগিতায় সেরা ৩ দল ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেত। কেনিয়ার কাছে হেরে সেবার চোখের জলে সমাধি ঘটে বাংলাদেশ দলের স্বপ্ন সাধের। পরে হংকংকে ৫৭ রানের বড় ব্যবধানে হারালেও তা কাজে লাগেনি, কারণ প্রথম ম্যাচেও হল্যান্ডের কাছে ৪৭ রানে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ দল। তবে ১৯৯৭ সালে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ দল। সেমিফাইনালে ওঠে আকরামের নেতৃত্বে। স্বপ্ন স্পর্শ করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় এর মাধ্যমে। সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে হারালেই বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত হবে। হারলেও সুযোগ থাকবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলে। কিন্তু তর সইছিল না যেন বাংলাদেশ দলের। যদিও বৃষ্টির বাধায় ৮ ও ৯ এপ্রিল খেলতে হয়েছে। খালেদ মাসুদ পাইলটের ৭০, আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ৫৭ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪৩ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে স্কটরা মোহাম্মদ রফিক (৪ উইকেট) ও এনামুল হক মনির (৩ উইকেট) ঘূর্ণিতে ৪৪.৫ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৭১ রানে। ৭২ রানের বিশাল জয়ে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলা। ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল ১২ এপ্রিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত গড়ায়। সেদিন ছিল চৈত্র সংক্রান্তি। বিশ্বকাপ নিশ্চিতের ম্যাচেও (দ্বিতীয় সেমি) স্কটিশদের বিরুদ্ধে ২ দিন খেলে তবেই তা নিশ্চিত করতে হয়েছিল বাংলাদেশ দলকে। ফাইনালে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচেও বৃষ্টির ধাক্কা যেন তাই আবার আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়। টস জিতে আকরাম আগে কেনিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ভুলই করেছিলেন হয়তো। কারণ স্টিভ টিকোলোর ১৪৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪১ রান তুলেছিল কেনিয়া। রফিক ৩টি এবং খালেদ মাহমুদ সুজন ও সাইফুল ইসলাম ২টি করে উইকেট নিয়েছিলেন। তবে বৃষ্টির আশীর্বাদে ২৫ ওভারে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬৬ রানের। শ্বাসরুদ্ধকর সেই ম্যাচে নাটকীয়ভাবে শেষ বলে ১ রান নিয়ে ২ উইকেটে জিতে যায় বাংলাদেশ। ১৩ এপ্রিল ঐতিহাসিক সেই বিজয় লেখা হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের। বুলবুল ৩৭ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ৩৭, ওপেনিংয়ে নেমে রফিক ১৫ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ২৬, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ৩৩ বলে ২ চারে ২৬, আকরাম ২৭ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ২২ এবং পাইলট ৭ বলে ২ ছক্কায় অপরাজিত ১৫ রান করেন। অসম্ভব এক জয়ের দুয়ারে নিয়ে গিয়েছিলেন পাইলট দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে আর যখন ১ বলে ১ রান দরকার তখন মিডিয়াম পেসার হাসিবুল হসেন শান্তর প্যাডে লেগে আসা লেগ বাই থেকে জয় সূচক রান পায় বাংলাদেশ। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় আইসিসি ট্রফিতে। অপরাজিত থেকে শিরোপা জয়ের মাধ্যমে পুরো দেশকে নববর্ষের উপহার দেন আকরামরা। আজকের এই দিনে এই বিজয়ী বীরেরা ফিরেছিলেন শিরোপা নিয়ে। সেই শিরোপা বদলে দেয় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে গিয়েই পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়। আর ২০০০ সালে স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে আইসিসির টেস্ট মর্যাদা লাভ করে। তারপর থেকে শুধু ধাপে ধাপে সামনেই এগিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এখন ওয়ানডে ক্রিকেটে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭ নম্বর দল বাংলাদেশ। আর এর ভিত গড়েছিলেন আকরাম, নান্নু, রফিক, বুলবুলরা ২৩ বছর আগে ১৩ এপ্রিল কুয়ালালামপুরের কিলাত কেলাব ক্লাবের তেনাগা ন্যাশনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্সে।
×