১৪২৭ বাংলা নববর্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে বাঙালী বরণ করে নিচ্ছে। তবে অন্য বারের তুলনায় এবারে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে। অদৃশ্য শত্রু কোভিড-১৯ যে কোন মুহূর্তে আরও আক্রমণ করতে পারে। এক অজানা আশঙ্কায় ধনী-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সবাই ভয়ে তটস্থ রয়েছে। আমরা যারা স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখেছি, সেখানে পাকিস্তানী এবং তাদের দোসর রাজাকারদের অত্যাচার-নিপীড়ন দেখেছি। তার মধ্যেও আমাদের চেয়ে সিনিয়র প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর ডাকে সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য। আজকেও মানুষ ব্যাকুল হয়ে আছে। কিন্তু কোভিড-১৯ দেশে-বিদেশে এমনকি পরাশক্তিকেও আজ ম্লানমুখ করে ফেলেছে। এমন করুণ অবস্থা যে, যা কিছু জরা আছে, জীর্ণ আছে, সবকিছু ধুয়ে মুছে পূত পবিত্র হয়ে থাকা দেশে দেশে করোনাভাইরাসের দাপট সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় ছেদ ঘটাচ্ছে। আসলে সামাজিক দূরত্ব এবং কার্যত গৃহবন্দী থাকতে সরকার এবারই প্রথমবারের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ সকল জনসমামেশ নিষিদ্ধ করেছে। ইতোপূর্বেও বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতেও কোভিড-১৯ এ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য স্বেচ্ছায় গৃহবন্দীত্বের নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন। এবার বাংলা নববর্ষ ভিন্ন রূপ, আঙ্গিকে পালিত হচ্ছে। দিবসটি পালনের জন্য সরকারপ্রধান ডিজিটাল উপায়ে উদযাপন করার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলার প্রতিটি মানুষ ঘরে ঘরে ভাল থাকুক, ন্যূনপক্ষে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। নতুন বছর হোক বেঁচে থাকার জন্য মানবতায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/ তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।/ যাক পুরাতন স্মৃতি যাক ভুলে-যাওয়া গীতি, অশ্রু বাষ্প সুদূরে মিলাক।’/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।... আজ কবির প্রতিটি উচ্চারণ যেন স্রষ্টার কাছে আমাদের প্রার্থনা হয়ে ধরা দেয়। কোভিড-১৯ এর জন্য মানবতা আজ বিপন্ন। মৃত মানুষের দেহ সমাধিস্থ করার ক্ষেত্রে কেউ কেউ দেশে-দেশে বাধা দিচ্ছে। মারা গেলে লাশ দেখানোরও উপায় নেই। আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মর্গে লাশ রাখার স্থান নেই। নিউইয়র্ক নগরীতে এখন গণকবর দেয়া হচ্ছে। এদিকে আমাদের দেশে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দাফন হচ্ছে। বার বার বলা সত্ত্বেও এমন কি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে সৎকারের ব্যবস্থা সরকার ও প্রশাসনকে করতে হচ্ছে। এমনকি কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়ায় মসজিদ থেকে খাটিয়া না দেয়ার দৃশ্যও দেখলাম। লাশ নৌকাতে ভাসমান রাখার সংবাদও জানতে পারলাম। এদিকে সবার পক্ষে তো আর আঞ্জুমান মফিদুলে যোগাযোগ সম্ভব নয়। আল-মারকাজুল ইসলামী ঢাকায় ধর্মীয় রীতি অনুসারে দাফন কিংবা সৎকার করছে। কবির ভাষায় স্রষ্টার কাছে নববর্ষে নিবেদন করতে হয়, প্রার্থনা করতে হয়। বৈশাখের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সকল আবর্জনা-নোংরা- ক্লেদ-গ্লানি আজ মুছে যাক। আমরা যেন আবার মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করার মতো মনুষ্যত্ব অর্জন করি, অবশ্যই সরকারী ঘোষিত নিয়ম মেনে। কোন ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি আল্লাহ পছন্দ করেন না। চিকিৎকরাও বার বার বলছেন মৃতদেহে ভাইরাস ২-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। সরকার যেভাবে বলেছে, সেভাবেই প্রতিটি মানুষের সৎকার হোক। স্পেন বা ইতালির মতো পথে পথে মৃতদেহ যেন পড়ে না থাকে। আসলে কোভিড-১৯ মানুষের মনোজগতে যে বিপন্ন প্রতিক্রিয়া শুরু করেছে, অসহায়ত্ববোধের সৃষ্টি করেছে, তা আসলে এক ধূসরময় বিপন্ন সময়ের অবতারণা করেছে। মানুষ আজ নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে গৃহবন্দিত্ব বরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। তার পরও মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে, গ্লানিময় সময় পার করে সামনে সুদিনের অপেক্ষা করছে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী লাখের অধিক মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এটি বড় মর্মান্তিক। বিশ্ব নাগরিক হিসেবে, দেশে-বিদেশে প্রতিটি মানুষের মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করে, দুঃখ দেয়। তবে একদিন আমরা কোভিড-১৯ কে দমন করার ওষুধ পাব। কিন্তু যে পরিবারের স্বজন হারানো গেছে, সে কি তা ফিরে পাবে।
নড়াইলের নড়াগতি থানার ওসি রোকসানা খাতুন যিনি সরকারী দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকায় স্বামীকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন, চিকিৎসকের অবহেলায় নার্স তার স্বামীকে অক্সিজেন দেয়নিÑ তিনি ও তাঁর শিশু সন্তানেরা কি ফিরে পাবেন প্রিয়জনকে। আবার চিকিৎসক-নার্সরাও তো আক্রান্ত হচ্ছেন, তারাও মানুষ। তাই আমরা যদি একটু সতর্কতার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে সরকারী অনুশাসন মেনে চলতে পারি তবে দেশের ক্রান্তিকাল, যার জন্য আমরা কেউ দায়ী নই, তা কেটে যাবে। ‘লকডাউন’ শীর্ষক একটি কবিতা, যেটি লিখেছেন যাদব চৌধুরী, তা থেকে উদ্ধৃতি করছি : ‘জানি নাকো টিকবো কিনা এই বিপর্যয়ে/ ঘরের মধ্যে ঢুকে আছি আতঙ্ক হৃদয়ে।/ সামনে থেকে মৃত্যু দেখার আজব অভিজ্ঞতা/ আজ আছি কাল থাকবো কিনা বলতে পারে কে তা?/’ আসলে লকডাউন মানুষকে আজ আয়নার সামনে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। নববর্ষে মানুষ তার মনের ভেতরের অন্তর্জ¡ালা যেন নতুন করে বুঝতে পারছে। এ যেন এক অন্তর্দহন। মানুষ আজকাল কোথাও লকডাউন হলে দেখতে যায়। এটি নিয়ে অনেকেই কটু কথা বলেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন জাহাজ নোঙর করল, সেখানের মানুষ কেমন হয় তরীটি দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। মানুষ জন্মগত ভাবেই অনুসন্ধান ইচ্ছুক। এই অনুসন্ধান ইচ্ছা বর্তমান যুগে, বর্তমান সময়ে বড় বেমানান। তার পরও অনুসন্ধান ইচ্ছা আছে বলেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন-ওষুধ তৈরির নিরন্তর প্রয়াস নেয়া হচ্ছে। একের পর এক দেখা হচ্ছে কোনটি কাজ করে। অবশ্যই এটি একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু যখন সরকারের নিয়ম না মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে অনুসন্ধান করতে যায়, তখন সেটা তো তার ও তার পরিবার তথা সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য আত্মহনন। অথচ এর মধ্যেই দুষ্টুলোকেরা বিভিন্ন মিথ্যা গুজব রটাচ্ছে। এতে যে কার কি লাভ হবে, কে জানে। তবে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
এবার করোনার কারণে রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান হলো না। পান্তা-ইলিশের আয়োজন বাইরে না হলেও ঘরে করতে তো বাধা নেই। তবে আমাদের আবহমানকালের কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে পান্তা ইলিশ পরে এসেছে। কিন্তু আজ কর্পোরেটগুলো পান্তা-ইলিশকে প্রমোট করায় এটি ব্যাপকতা পেয়েছে। ছেলেবেলায় কুমিল্লায় টাউট হলে নববর্ষের দিন যখন আমার বয়স সাত বছর আর ছোট ভাইয়ের বয়স পাঁচ আব্বার সঙ্গে গিয়ে একটি কাতল মাছ, একটি তরমুজ, নানা ধরনের মাটির পুতুল, তৈজসপত্র, হস্তশিল্প এবং কুটিরশিল্প নিয়ে আসতাম। বিকেলে থাকত কচিকাঁচার মেলা। এ নিয়মের ব্যতিক্রম ১৯৮০ পর্যন্ত হয়নি। আবার চট্টগ্রামে যখন ছিলাম প্রতি বছর জব্বারের বলী খেলা দেখতে যেতাম। ঢাকায় আসার পর ১৯৮৯ থেকে শুরু হলো রমনা বটমূলে যাওয়া। ধীরে ধীরে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া। আবার বিভিন্ন সুপারশপের দৌলতে এখন মুড়ি-মুড়কি, চিড়া, তিলের নাড়ু, কদমা সুন্দরভাবে ঝুড়ির মধ্যে করে বিলির প্রচলন শুরু হয়েছে। মিষ্টির দোকানগুলোতেও পাল্লা দিয়ে নতুন করে মিষ্টি নানা আঙ্গিকে, নানা মোড়কে বিক্রি করা শুরু হয়েছে। পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে নববর্ষের আগের দিন নতুন পোশাক কেনা। অথচ বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারণে আজ আর্থিক ও দৈনন্দিন জীবন প্রবাহ ভেঙ্গে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই আগেভাগে পহেলা বৈশাখকে উদযাপন করার জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করেছিলেন। এ অর্থ আর উঠবে না। এদের চিহ্নিত করে প্রণোদনা দেয়ার জন্য আবেদন থাকল। কবির ভাষায় আর বলা হলো না ‘পান্তা-ইলিশ আর ভর্তা-ভাজি বাঙালীর প্রাণ।/ নতুন বছরে সবাই গাইবো বৈশাখের গান।’ বরং প্রার্থনা থাকবে নতুন বছরে সবাই যেন সুস্থ হয়ে উঠুক- সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। সঙ্গত কারণে বৈশাখী ফ্যাশনের ক্ষেত্রে, সঙ্গীতে আজ আমাদের উচিত সেই কথাগুলো কবির ভাষায় স্মরণ করা : ‘নতুন বছরে তোমার জীবন যেন/ সেই সব জিনিসে ভরে যায়। যেগুলো তোমায় কোনভাবে/ উদ্বুদ্ধ করেছে... কিংবা তোমার/ জীবন মূল্যবান হয়ে উঠেছে.../ আর তোমার ঠোঁটে হাসি ফুটিয়েছে../।’ আসলে প্রতিটি মানুষের জীবন মূল্যবান। নতুন বছরকে এবার আমরা অদৃশ্য শত্রুর কারণে গৃহে বসেই পালন করব। নিজের মনের মধ্যে কোন দীনতা রাখব না। বরং দেশের এ দুর্দিনে যারা তাদের পরিবার-পরিজনের কথা না ভেবে বরং দিন-রাত কাজ করে চলেছেন, তাদের অন্তরের অন্তস্তল থেকে জানাই শ্রদ্ধার্ঘ। ‘মানুষ মানুষের তরে,’। তবে সেবা প্রদানকারীরা যেন নিজেদের সুরক্ষিত রাখেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে এবং ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দায়িত্ব পালনকালে কেউ আক্রান্ত হলে পদমর্যাদা অনুযায়ী ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা অত্যন্ত যৌক্তিক এবং ন্যায়সঙ্গত। ঘরবন্দীর মেয়াদ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষণা করা অত্যন্ত যৌক্তিক হয়েছে। অযথা ঘর থেকে বের হওয়ার বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
ইতোমধ্যে সরকারপ্রধান ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা পাঁচটি প্যাকেজের মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন। এ প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ উৎসাহব্যঞ্জক এ কারণে যে, এতে ভূমিহীন থেকে আরম্ভ করে বিত্তশালী সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সময়োচিত এ পদক্ষেপটি অত্যন্ত যৌক্তিক। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে যাতে কোন ধরনের দুর্নীতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। সরকার অবশ্য পোশাক খাতের শ্রমিকদের মোবাইল এ্যাকাউন্ট খুলতে বলেছে। যারা ভূমিহীন তাদের ব্যাপারটিও ব্যাংকিং খাতে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে দেখা যায় চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রাজস্ব আদায়ের টার্গেটের খুব স্বল্পই আদায় হয়েছে। মুদ্রা নীতিকে কেবল উচ্চবিত্তের শ্রেণীর জন্য নয়, বরং নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের শ্রেণীর জন্যও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সুষম বণ্টন ব্যবস্থার পাশাপাশি যারা দুর্নীতি করবে তাদের কেবল জরিমানা কিংবা জেল দিলে হবে না।বরং প্রতিকূল পরিবেশে অমানবিক কাজ করার দায়ে কোন ধরনের রাজনৈতিক নির্বাচনে চিরতরে নিষেধাজ্ঞা এবং সকল টিভি ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ছবিসহ দুর্নীতিপরায়ণ হিসেবে চিত্রায়িত করতে হবে। আমাদের দেশে কিছু মুখ চেনা মানব দরদী রয়েছে- যাদের কারণে পোশাক খাতের শ্রমিকদের ঢাকায় আসার পর ফেরত যেতে হয়েছে। এদের যদি ঢাকায় গার্মেন্টসে সামাজিক নিরাপত্তা বজায় রেখে লকলাউন করে রাখা যেত তবে অনেক বেশি মানবিক হতো। এ সময়ে দৈনিক তিনবেলা আহারের ব্যবস্থা লঙ্গরখানার মতো খুলে তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় ভাবে করা যেত। সমগ্র বিশ্বে অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি আজ ঝুঁকিতে। আপাতদৃষ্টিতে চীন লাভবান হলেও বিশ্বব্যাপী যখন স্ট্যাগফ্লেশান শুরু হবে এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে, তখন চীনের অর্থনীতিও সমস্যায় পড়বে। আইএমএফের প্রধান ইতোমধ্যে বৈশ্বিক মন্দার কথা বলেছেন। নোবেল বিজয়ী পল রোমার এবং গারবার মন্তব্য করেছেন যে, এ ধরনের অবস্থা চলতে থাকলে আমরা সামজিক দূরত্ব বজায় রেখে হয়ত বেঁচে যাব, কিন্তু ১২ থেকে ১৮ মাস স্থায়ী হলে অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের মতো মধ্যম আয়ের দেশে সমস্যা আরও ভয়ানক। কেননা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে প্রায় ২.৫ কোটি লোক বেকার হয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রায় চার কোটি নির্ভরশীল। তাদের নিজেদের গ্রামাঞ্চলে কাজে লাগানো দরকার। নতুন উদ্ভাবনীমূলক কাজ করে একদিকে যেমন তারা তাদের জীবন নির্বাহ করতে পারেন, তেমনি শহরেও খাদ্য পাঠাতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নির্দেশ দিয়েছেন শহরের ছাদে যেন একটি করে তরকারির বাগান করা হয়। দুর্ভাগ্য যে ঢাকা শহরে ফ্ল্যাটের মালিকদের এ্যাসোসিয়েশন এত শক্তিশালী যে সচরাচর কাউকেই তাদের ইচ্ছা না হলে কোন কিছু চাষ করতে দেয় না। অথচ এ দুর্যোগকালীন সময়ে সমবায় পদ্ধতিতে প্রত্যেকের উচিত বাসায় বসে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কিছু হলেও চাষ করা। একজন অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে বিশ্বাস করি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে চাচ্ছেন সেটা যেন দুর্নীতিমুক্ত ভাবে বাস্তবায়ন করা হয়Ñ মুদ্রানীতির পাশাপাশি রাজস্ব খাত এবং নন কনভেনশনাল খাতে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্নভাবে করতে হবে। এ জন্য প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে স্তর বিশিষ্ট সৎ লোক ও তদারকি ক্ষমতা বাস্তবায়ন করতে হবে। ‘সেবক’ নামে যে রোবটটি ডাক্তারীর সহায়তা সোনারগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে সেটি পরীক্ষা করে ভাল বোধ হলে ব্যবহারের সুপারিশ রাখছি।
বিজিএমইএকে ভাবতে হবে নতুন করে কিভাবে দেশে-বিদেশের চাহিদা অনুযায়ী পিপিই ও মাস্ক রফতানি করা যায়। স্পন্দন নামে যারা নিম্ন খরচে ভেন্টিলেশন মেশিন প্রস্তুত করেছে বলে দাবি করছে, তারা যদি সঠিকভাবে এটি তৈরি করে থাকে, তবে তাদের উদ্ভাবিত কাজকে সরকারী প্রয়াসে বিভিন্ন হাসপাতালে তৈরি করে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ মাননীয় সরকারপ্রধানের কাছে অনুরোধ থাকল। এদিকে মেডিক্যাল সহায়তামূলক রোবট দেশে তৈরি করা দরকার। এদেশের ধনিক শ্রেণীদের ভারতীয় ধনিক শ্রেণীর কাছ থেকে শেখা দরকার কেমন করে সাহায্য দিতে হয়। বাংলা নববর্ষ হোক মহামারী থেকে মুক্তির উপায়। মজুদদার ও কালোবাজারীর থেকে মানুষকে বাঁচানোর উপায়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও এদেশের মানবিক সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল
ইকোনমিস্ট এবং প্রফেসর
[email protected]