ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাভাইরাস এবং শিশুদের জন্য আমাদের করণীয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৩ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাস এবং শিশুদের জন্য আমাদের করণীয়

মেশকাতুল জিনান ॥ করোনা ভাইরাসের কথা মনে হলেই প্রথম মাথায় আসে হোম কোয়ারান্টাইনের কথা, গৃহ-বন্দী বিষয়টা আমাদের সবার দৈন্দিন কাজের রুটিনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ছোট-বড় সবাই করোনা থেকে বাঁচার জন্য ঘরে অবস্থান করছেন। এই বন্দীদশায় মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে, কেউ কেউ মানিয়েও নিচ্ছে। ঘরে বসেই শেষ করছে অফিসের কাজ বা ডেডলাইন্স। করোনা আতঙ্কে একে একে লকডাউন হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, শহর, পাড়া-মহল্লা এবং গ্রামাঞ্চলগুলো। এই পরিস্থিতিতে ঘরে বসেই কাজ করা বাধ্যতামূলক করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে ইতোমধ্যে বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সবাই সবকিছু মানিয়ে নিলেও প্রশ্ন থেকে যায় শিশুদের নিয়ে হঠাৎ করে শিশুদের স্কুল বিভিন্ন ধরনের ক্লাস এবং বাবা-মায়ের হাত ধরে পার্কে যাওয়া এমনকি পাশের বাসার বন্ধুদের সাথে দেখা করা এবং খেলা করাও বন্ধ হয়ে গেছে তাদের, তারা যেন খাঁচায় বন্দী পাখি, সারাদিন জানালা দিয়ে মুখ বের করে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে কোনো এক মিরাকলের। সেই মিরাকল সব স্বাভাবিক করে দেবে সে আগের মতো স্কুলে যাবে, বাবার হাত ধরে পার্কে যাবে আইসক্রিম খাবে। তাদের ছোট্ট মনে বন্দী থাকার দরুন যেন কোনো ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি না হয় সেদিকে পরিবারের বড়দের আরো সচেতন হতে হবে। পরিবারের বড়রা সচেতন হলেই কোমলমতি এসব শিশুদের কাছে এই হোমকোয়ারান্টাইন নামের কঠিন কারাগার হয়ে উঠতে পারে স্বর্গসুখের মত। ঘরে থাকা শিশুদের আপনি দিতে পারেন কিছু সুন্দর সময়। বিশেষ করে চাকুরীজীবি বাবা-মা শিশুদের তেমন সময় দিতে পারেন না, আপনাদের উচিত এই সময়টুকু সঠিকভাবে কাজে লাগানো। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে সারাক্ষণ তো একসাথেই থাকি আলাদা সময় দেওয়ার কি আছে? জবাবে আমি বলবো অবশ্যই আলাদাভাবে আপনার সন্তানকে আপনি সময় দিন। শারীরিকভাবে বাসায় থাকলেও মানসিকভাবে আপনি যখন ভার্চুয়ালী কাজে বেশি সময় পার করেন অথবা বাসায় আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন তখন আপনার সন্তান আপনার পুরোপুরিভাবে সানিধ্যে পাচ্ছেনা। আপনাদের সাথে শিশুকে আগ্রহী করুন নানা কাজে শিখান কিভাবে বাবা-মা’র সাথে বাসার কাজ করা যায়, ধর্মীয় প্রার্থনা এবং কিভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা যায়। এই বদ্ধঘরে একটি শিশুর মন কখনই আটকে রাখা সম্ভব নয় যদি বাবা-মা সন্তানকে সঠিক সময়টা না দেন। আমি সকল বাবা-মাকে বলবো প্রয়োজন ছাড়া ফোন, ল্যাপটপ, টিভি নিয়ে বসে না থেকে হাতে বই তুলে নিন তা দেখে আপনার সন্তানও হাতে বই তুলে নিবে, তার আগ্রহ বাড়বে বইয়ের প্রতি। সারাদিন যে শিশু মোবাইল, গেইমস, টেলিভিশন, কম্পিউটারে সময় কাটায় তার উপর কোয়ারান্টাইন মানসিক চাপ সৃষ্টি করতেই পারে। কেননা সারাদিন মোবাইল, টেলিভিশন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনার বিভৎসতার খবর নানাভাবে ছাড়াচ্ছে। করোনা বিষয়টি সে বুঝে উঠার আগেই তাঁরা জানতে পারছে করোনার বিভিন্ন নেতিবাচক সংবাদ! এইটা কোনো ভাবেই একটি শিশুর জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবও মারাত্মক। তাই শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তিতে পরিবারের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে বাবা-মার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের প্রতি ঠিকঠাক মনোযোগ দেয়া এবং সবাইকে নিয়ে পারিবারিক একটা হেলদি সময় কাটানো। মহামারী করোনা পরিস্থিতি শেষে যেন কোমলমতি এই শিশুরা ভালো কিছু সময় নিয়ে সুস্থ পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে আমাদের উচিত সেই দিকে লক্ষ্য রাখা।
×