ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্যানিটাইজার বা সাবান ছাড়াও সব কিছুই জীবাণুমুক্ত করা যাবে নতুন যন্ত্র দিয়ে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৩ এপ্রিল ২০২০

স্যানিটাইজার বা সাবান ছাড়াও সব কিছুই জীবাণুমুক্ত করা যাবে নতুন যন্ত্র দিয়ে

করোনা-আতঙ্কে স্যানিটাইজার নিয়ে বাড়াবাড়ি কোনও কোনও ক্ষেত্রে মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছে। অনেকেরই ধারণা, ঘন ঘন হাত স্যানিটাইজ করলেই বোধহয় করোনা থেকে মুক্তি মিলবে। তাই বার বার বেসিনে উঠে গিয়ে হাত ধোওয়ায় তৈরি হচ্ছে অনীহা। বরং এক জায়গায় বসে মাঝে মাঝেই স্যানিটাইজারে হাত ঘষে নেওয়াটা অনেক বেশি কার্যকর বলে মন করছেন অনেকেই। কিন্তু এটুকু করে কি আদৌ কোনও কাজ হয়? বিশেষজ্ঞদের মতে, দু’-ফোটা স্যানিটাইজারে হাত ঘষে নেওয়ার চেয়ে যে সাবান-জলে হাত ধোয়া শত গুণে ভাল। এমনিতেই স্যানিটাইজারের বিপুল চাহিদায় স্যানিটাইজার বাড়ন্ত। ফলে অনেকেই বাড়িতে বানানো স্যানিটাইজার বিক্রি করছেন খোলা বাজারে। তাতে ইথাইল অ্যালকোহল আদপে আছে কি না, থাকলে নির্দিষ্ট মাত্রায় আছে কি না— সে সবের কোনও হিসেব থাকছে না। ফলে মনের শান্তি হলেও কাজের কাজ হচ্ছে না। অনেকে আবার বাইরের যে কোনও জিনিস ঘরে ঢোকানোর আগে তাতে স্যানিটাইজার স্প্রে করে দিচ্ছেন। খবরের কাগজ, দুধের প্যাকেট, সবেতেই। কাগজ যাঁরা দেন, সবার হাতেই গ্লাভস থাকে। তার চেয়েও বড় কথা সারা পৃথিবীতে এমন কোনও নজির নেই যে কাগজ থেকে রোগ ছড়িয়েছে। আর দুধের প্যাকেটে স্প্রে ঢালারও কোনও মানে নেই বলেই মত গবেষকদের। প্যাকেট তো কেউ খাবেন না, খাবেন দুধ। সে তো স্টেরিলাইজড করাই। তার পর তাকে ফোটানো হয়। ফলে জীবাণু তাতে থাকতে পারে না। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘‘সাবান না ব্যবহার করে ঘন ঘন স্যানিটাইজার ব্যবহারে ত্বকেরও ক্ষতি হয়। স্যানিটাইজারের অ্যালকোহল সম্বলিত অণু ত্বককে শুকনো করে দেয় খুব। তা থেকে চুলকানি, খসখসে ত্বক বিভিন্ন সমস্যা আসে। স্যানিটাইজারের অণুর চেয়ে সাবানের অণুর সঙ্গে হাতের ত্বকের বন্ধুত্ব বেশি। স্যানিটাইজারের তুলনায় সাবান হাত পরিষ্কার করার ক্ষমতাও রাখে অনেক বেশি। তার উপর ভেজাল স্যানিটাইজার কিনলে তো আরও জটিল সমস্যা। অ্যালকোহল মেশানো স্যানিটাইজারে অ্যালকোহলের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে, ফোস্কা পড়ে ত্বক লাল হয়ে বাড়তি বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই দোকান থেকে কেনা স্যানিটাইজারই ব্যবহার করুন, তবে তা সাবানের পরিবর্তে নয়।’’ সাবানের অণুর সঙ্গে হাতের ত্বকের বন্ধুত্ব বেশি : এই স্যানিটাইজারের প্রতি মানুষের ঘন ঘন নির্ভরতা কি অসুখ নিয়ে ভয় ও আতঙ্কেরই প্রকাশ? মনোচিকিৎসক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “এখন এ রকম একটু হবে। কারণ, এক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। মানসিক চাপ এত বেড়েছে যে নিতান্ত যুক্তিবান মানুষও কখনও কখনও যুক্তি হারিয়ে ফেলছেন। তার উপর এই হাত ধোওয়া, স্যনিটাইজ করা, এ সব তো অনেকের কাছেই নতুন কনসেপ্ট। ভাল বুঝতে পারছেন না কী থেকে কী হচ্ছে আর কী করলেই বা বাঁচা যাবে। এই মারাত্মক চাপের ফলে যাঁরা এমনিতেই একটু উদ্বেগপ্রবণ বা বাতিকগ্রস্ত ছিলেন, তাঁদের সমস্যা বাড়ছে। ভাল করে বোঝানো ছাড়া এই মুহূর্তে এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোনও রাস্তা আছে বলে আমার মনে হয় না।” তা হলে কখন স্যানিটাজার? কোনও জরুরি কাজে বাইরে বেরতে হল। হয়তো কিছু ক্ষণ থাকতে হবে কোথাও। তখন সাবান ব্যবহারের অসুবিধা আছে। সে সময় ব্যবহার করুন স্যানিটাইজার। অনেককেই অফিসে বেরতে হচ্ছে। অফিসের ডেস্কে বসে কাজ করতে করতে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার অবস্থা থাকে না। তখন কাছে রাখুন স্যানিটাইজার। বাড়িতে থাকার সময় ১০ বার সাবানের মাঝে এক-দু’বার স্যানিটাইজার চলতেই পারে, কিন্তু সাবান ছাড়া এটাই যেন অভ্যাস হয়ে না দাঁড়ায়। জীবাণুমুক্ত করতে নতুন যন্ত্র : আমরা না হয় বাইরে বেরলাম না, বার বার হাত ধুলাম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলাম। তাতেই কি করোনাভাইরাস থেকে একশ শতাংশ দূরে থাকা যাবে? যে খাদ্যসামগ্রী আমরা আনাচ্ছি, যে টাকার লেনদেন হচ্ছে, ঘড়ি, মোবাইল, তা থেকেও তো ভাইরাস ঘরে ঢুকে পড়তে পারে। এবার এই সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে বের করেছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজি (আইআইটি) রোপড়। আইআইটি রোপড়ের একদল গবেষক এমন একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন, যেটি দেখতে অনেকটা বাড়িতে জিনিসপত্র রাখার সাধারণ ট্রাঙ্কের মতো। এটি খুবই কার্যকর বলে জানিয়েছেন এই যন্ত্রটির তৈরির সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা। আইআইটি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন অনেকেই গরম জল দিয়ে সবজি ধুয়ে নেন। কিন্তু এই পদ্ধতি নোট, টাকার ব্যাগ, মোবাইল, ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু তাঁদের তৈরি এই যন্ত্রে এমন সব কিছুই জীবাণুমুক্ত করা যাবে। এই যন্ত্রে জীবাণু মারার জন্য ‘অতিবেগুনীরশ্মী বিচ্ছুরণ প্রযুক্তি’ ব্যবহার করা হয়েছে। এই ট্রাঙ্কের মতো যন্ত্রটিকে বাড়ির গেটের কাছে রেখে দেওয়া যাবে। ফলে বাইরে থেকে কোনও কিছু নিয়ে ঢোকার আগে যন্ত্রের দ্বারা জীবাণুমুক্ত করে ফেলা সম্ভব। এই যন্ত্রে সবজি, দুধের প্যাকেট, হোম ডেলিভারিতে আসা যে কোনও জিনিস ঢুকিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া যাবে। গবেষক দল জানিয়েছে, কোনও দ্রব্য এতে ৩০ মিনিট রাখার পর বের করে ১০ মিনিট ঠান্ডা করে নিলেই হল। শুধু তাই নয়, এর সব থেকে বড় সুবিধা হল এর খরচ। এটি এতটাই কম খরচে তৈরি করা যাবে যে সাধারণ মানুষের জন্য বাজারে ৫০০ টাকারও কম দামে পাওয়া যাবে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×