ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

না’গঞ্জ লকডাউনের পঞ্চম দিনেও কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ১৩ এপ্রিল ২০২০

না’গঞ্জ লকডাউনের পঞ্চম দিনেও কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রবিবার নারায়ণগঞ্জে পঞ্চম দিনের মতো লকডাউন চলছে। রবিবারও সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ব্যাংক, বাজারসহ ও ওএমএসের চাল বিক্রির স্থানগুলোতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্রেতা বিক্রেতা যাতে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে সেটিও নিশ্চিত করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এদিকে নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতাল করোনা ইউনিটের প্রস্তুতি কার্যক্রম চলছে। ৪০ আইসোলেশন ওয়ার্ড ও ১০ শয্যার আইসিও ওয়ার্ড নির্মাণ করার জন্য পিডব্লিউডির পক্ষ থেকে কাজ শুরু করেছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে হাসপাতাল প্রস্তুতের কাজ সম্পন্ন করা যাবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম রেজা। তিনি জানান, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। করোনা রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেনসহ বিশেষায়িত কিছু সরঞ্জামাদি প্রয়োজন সেসব সরঞ্জামাদি যত দ্রুত সম্ভব নারায়ণগঞ্জে প্রেরণের জন্য স্বাস্থ্য সচিব স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম রেজা জানান, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা থেকে যেসব প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্স নারায়ণগঞ্জে প্রেরণ করা হবে তাদের থাকা খাওয়ার জন্য জালকুড়ি যুব উন্নয়ন অধিদফতরসহ চারটি বাংলো খালি করে ব্যবস্থা করা হয়েছে। খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার গৌতম সাহা জানান, করোনা ইউনিট প্রস্তুতির জন্য পিডব্লিউডি এ জোর তৎপরতা শুরু করেছে। আশা করছি ৩-৪ দিনের মধ্যে কাঁচ দিয়ে ঘেরাও বেড সম্পন্ন হলেই রোগী ভর্তি করা শুরু হবে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহমেদ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় রবিবার সকালে নতুন সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নিয়েছেন চৌধুরী ইকবাল বাহার। তিনি দায়িত্বে নিয়ে কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। গত কয়েকদিনের মতো রবিবারও ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্টে জেলা ও ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। চেকপোস্ট দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন পার হতে হচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় ও জরুরী সেবা ছাড়া কোন যানবাহন যেতে দেয়া হচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের শিমরাইল মোড়ে রবিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিমরাইল-নারায়ণগঞ্জ সড়কের প্রবেশ পথে সেনাবাহিনী কাজ করছে। জরুরী প্রয়োজনীয় যানবাহনগুলো ছেড়ে দিচ্ছে। আর প্রয়োজন ছাড়া কোন যান ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এ সময় কয়েকজন নারী-পুরুষ মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ডেকে এনে মাস্ক কিনে ব্যবহার করতে বলেছেন। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ছাড়াও প্রাইভেটকার ও মাইক্রো চলতে দেখা গেছে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে কোন লোক অন্য জেলায় যেতে না পারে সেজন্য সেনাবাহিনীর পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। লোকসমাগম বন্ধ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জেল জরিমানাসহ শাস্তি দেয়া শুরু করেছে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের ১৬টি খেয়াঘাটসহ নৌকা চলাচল খুবই সীমিত করা হয়েছে। যাতে করে নদীর পূর্ব পাড়ের মানুষ পশ্চিম পাগে আসতে না পারে। তবে জরুরী প্রয়োজনে রোগী বা অন্য সেবা যাতে নিশ্চিত হয় সেজন্য খেয়াঘাটগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় প্রবেশের ৩শ’ ফিট মোড়ে এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আধুরিয়া এলাকায় দুটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যাতে করে কোন যানবাহন বা মানুষ নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে না পারে। পণ্যবাহী যানবাহন ও জরুরী পরিষেবায় নিয়োজিত যানবাহন পরিচয় নিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
×