ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও মাঠে নেই বিএনপি

প্রকাশিত: ১২:২১, ১৩ এপ্রিল ২০২০

  করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও মাঠে নেই বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে দেশের অসহায় মানুষের পাশে নেই বিএনপি। দলের দু’একজন নেতা মাঝে মধ্যে মিডিয়ার সামনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললেও অন্য সব নেতারা একবারেই নীরব। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অসহায় দুস্থদের সহায়তা প্রদানে ব্যস্ত সময় পার করলেও পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার পর কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি এখনও মাঠে নামেনি। কারামুক্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ফিরোজায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকায় দলের অন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও নিজ নিজ অবস্থানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তবে মাঝেমধ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উত্তরার বাসা থেকে ভিডিও কনফারেন্স করে দলের পক্ষে কথা বলছেন। এ ছাড়া দলের নেতাদের আর কোন কর্মসূচী পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। তবে বিএনপির কোন কোন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিচ্ছিন্নভাবে অসহায় মানুষের সহায়তায় কাজ করছেন। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, দেশের অন্যান্য দুর্যোগের সময় বিএনপি তাদের সাধ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার পর দলের উচ্চ পর্যায় থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েই দায় সারার চেষ্টা করে বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে সিনিয়র নেতাদের কেউ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। কি কারণে অসহায়দের সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি তার ব্যাখ্যাও দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই দলটির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কর্মসূচী পালনে অনীহা দেখা দেয়। যে কারণে ঘোষণা দেয়ার পরও অধিকাংশ সময়ই তা পালন হয় না। ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া ৬ মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসায় অবস্থান নেন। তারপর দলটির কেন্দ্র থেকে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এ আহ্বানে কোন সাড়া নেই। তবে ড্যাব ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনসহ বিএনপির কিছু অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিচ্ছিন্নভাবে অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর প্রথম দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করতেন। বিভিন্ন ইস্যুতে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করার পাশাপাশি করোনাভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে নিয়মিত লিফলেট বিতরণ করতেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু ২৫ মার্চ দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ২ বছর দেড় মাস করাভোগ শেষে সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পাওয়ার পর থেকে একেবারে নীরব হয়ে গেছেন দলের নেতারা। সূত্রমতে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। মুক্তি পাওয়ার একদিন পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তিনি। কোয়ারেন্টাইন শুরুর আগেই তিনি দলের কোন নেতা ও আত্মীয় স্বজনদেরও তাঁর বাসায় না যাওয়ার কথা জানিয়ে দেন। এমনকি অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া তাঁকে ফোন করতেও বারণ করেন। এরপর থেকে খালেদা জিয়া চিকিৎসক ও নার্সদের ছাড়া আর কাউকে দেখা দেন না। তবে তিনি টেলিফোনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত লন্ডনে থাকা বড় ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমান, তারেকের মেয়ে জায়মা রহমান, ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি, তার মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাসিয়া রহমানের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন। এদিকে খালেদা জিয়া কারামুক্ত হওয়ার পরও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে বিএনপির অন্য নেতারাও রাজনৈতিকসহ দলের সকল কর্মসূচী থেকে দূরে সরে যার যার ঘরে ফিরে যান। এ সময় তারা পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকে নিজ নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইন শুরু করেন। তবে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেই তারা মাঝেমধ্যে দলের অন্য নেতা ও পরিচিত জনদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। তবে অসহায়দের মাঝে ত্রাণ বিতরণসহ কোন কর্মসূচী পালন করছেন না তারা। খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং উত্তরার বাসা থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক ভিডিও বার্তায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের দুস্থদের সহায়তা করার আহ্বান করলেও এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখন পর্যন্ত কোন কেন্দ্রীয় নেতা মাঠে নামেননি। তবে আঞ্চলিকভাবে কোন কোন বিএনপি নেতা নিজ নিজ এলাকায় অসহায়দের পাশে রয়েছেন বলে জানা যায়। করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করার পর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে অসহায় দুস্থদের সহায়তা প্রদান কর্মসূচী শুরু করে। তারা প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কর্মহীন মানুষ ও দুস্থদের ঘরে ঘরে গিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছেন। কিন্তু মানুষের এমন বিপদের দিনে মাঠে নেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে অসহায় মানুষের পাশে না থাকলেও রাজধানীতে বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব এবং বিএনপি সমর্থিত সামাজিক সংগঠন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের চিকিৎসকরা জরুরী স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে অসহায় মানুষের পাশে রয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে পিপিই বিতরণ করছেন। কিন্তু রুহুল কবির রিজভী ছাড়া দলটির সকল কেন্দ্রীয় নেতারাই নিজ নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উত্তরায় নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান গুলশানে নিজ নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ধানমন্ডির বাসায়, মির্জা আব্বাস শহাজানপুরের বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ দলের অধিকাংশ সিনিয়র তো ঢাকায় নিজ নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। ঢাকার বাইরে অবস্থান করা দলের অন্য সিনিয়র নেতারাও হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা না গেলেও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি এখনও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। দলটির নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থকে স্বাস্থ্যসেবা, পরিচ্ছন্ন অভিযানসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে জনগণের জীবন বাঁচানো আমাদের প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একজন তৃণমূল বিএনপি নেতা জনকণ্ঠকে জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচী পালন শুরু করে।
×