ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি

ত্রাণ বিতরণে কেউ দুর্নীতি করলে ক্ষমা করা হবে না

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ১৩ এপ্রিল ২০২০

  ত্রাণ বিতরণে কেউ দুর্নীতি করলে ক্ষমা করা হবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নোভেল করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য বরাদ্দ ত্রাণ বিতরণে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে ক্ষমা করা হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটা দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা চলছে। এই সময়ে মানুষকে সাহায্য দেয়ার জন্য আমরা যেই খাদ্যদ্রব্য দিচ্ছি, চাল বা যা আমরা দিচ্ছি সেখান থেকে কেউ যদি দুর্নীতি করার চেষ্টা করে, তাহলে এটা কোনদিন ক্ষমার যোগ্য না এবং এটা আমরা ক্ষমা করব না। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিক বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। কঠোর ভাষায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের আমরা দায়িত্ব দিয়েছি তারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তার মধ্যে এই সামান্য দুই-একটা ঘটনা আমাদের অত্যন্ত কষ্ট দেয়। এটা খুবই একটা ঘৃণ্য কাজ। কাজেই কেউ এটা করবেন না, সেটাই আমি বলব। এই ধরনের দুর্নীতি আমরা কোনদিন বরদাস্ত করব না। জাতির এই দুঃসময়ে চুরি করে কেউ ছাড় পাবে না বলে হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে কয়েকটা এই ধরনের খবর বেরিয়েছে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বা দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে দেয়ার জন্য যে খাদ্যশস্য দেয়া হয়েছে, যে চাল দেয়া হয়েছে সেখান থেকে যারা দুর্নীতি করার চেষ্টা করেছেন এবং কিছু ধরাও পড়েছেন। তাই কেউ যদি এমন করেন আশা করি সবাই ধরা পড়বেন। তখন তাদের কিন্তু কোন ক্ষমা নেই। যদি প্রয়োজন হয় সেখানে মোবাইলকোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের শাস্তি দেয়া হবে। বিচার পরে দেখা যাবে।’ এই সঙ্কট মোকাবেলায় সবাইকে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকের একটা আন্তরিকতা থাকতে হবে। বিশেষ করে আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের আরও বেশি দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। আর যারা সরকারী চাকরি করেন বা সরকারী বেতন পাচ্ছেন তারা জনগণের ট্যাক্সের টাকাতেই তো পাচ্ছেন। কাজেই প্রত্যেককেই আজকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। তাই সরকারের তালিকার বাইরে যারা রয়েছেন তাদের ফ্রেস আরেকটি তালিকা করে ফেলা দরকার। আর যারা হাত পাততে পারবে না তাদের ঘরে ঘরে খাবারটা পৌঁছে দিতে হবে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান লকডাউনের মধ্যে অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়া সবাইকে সহযোগিতার লক্ষে কাজ করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা সকলকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আমরা চাই যেহেতু ব্যবসা-বাণিজ্য কাজ বন্ধ, যারা দিন আনে দিন খায় অথবা ছোটখাটো ব্যবসা করে খেতেন, তারা খুব কষ্টে আছেন। অনেকে হাত পাততে পারে, অনেকে পারে না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সকলের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার, সবাইকে সাহায্য দেয়ার। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় এখানে যেকোন রোগের সংক্রমণ রোধ করাটাকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য প্রত্যেকটি মানুষ নিজের এবং নিজের পরিবারের কথা ভাবতে হবে, পাড়া প্রতিবেশী বা এলাকবাসীর কথা ভাবতে হবে। যাতে সবাই সুরক্ষিত থাকতে পারে। তিনি বলেন, এটা নিজেরা চিন্তা না করলে কিন্তু আমরা মুখে বলে কিছু করতে পারব না, ঘরে থাকতে হবে এবং প্রয়োজন কারও সঙ্গে অহেতুক মেলামেশা না করার জন্য প্রত্যেককে সতর্ক থাকার জন্য তিনি বারংবার অনুরোধ জানান। তিনি একস্থান থেকে অন্য স্থানে বা অন্যজেলায় না যাওয়ার জন্যও সকলকে অনুরোধ করেন। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, সকলের সহযোগিতায় ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এই দুর্যোগ থেকেও মুক্তি পাবে। মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ভিডিও কনফারেন্সে অন্যের মধ্যে গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
×