ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে আরও ৪ করোনা রোগীর মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১৩৯

প্রকাশিত: ১১:৪২, ১৩ এপ্রিল ২০২০

  দেশে আরও ৪ করোনা রোগীর মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১৩৯

নিখিল মানখিন ॥ দেশে একদিনে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিনে দেশে আরও চার করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৩৯ জন। এ নিয়ে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৩৪ এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬২১ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৩৪০টি। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন তিনজন, এখন পর্যন্ত সর্বমোট সুস্থ হয়েছেন ৩৯ জন। বর্তমানে করোনা সন্দেহে আইসোলেশনে ২১৫ জন বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। মহানগরের ৭৬ এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ঢাকার ৫২ জায়গা লকডাউন করা হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত দেশের ১৯ জেলায় সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে। আর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকের বরখাস্ত ন্যায়সঙ্গতভাবে হয়নি বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার ও করোনামুক্ত হওয়ার বর্তমান চিত্র ভাবিয়ে তুলছে। সামনের দিনগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়ে গেলে চিকিৎসা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে দেশে উচ্চ মৃত্যু ঝুঁকির তুমুল আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। আক্রান্তের শরীরের উপসর্গ দেখে চিকিৎসা দিতে হয়। বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন এবং কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন করোনা রোগীদের বেশি মাত্রায় মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তাই বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারী নির্দেশনা মেনে ঘরে অবস্থান এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিকল্প নেই বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৪০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ॥ আইইডিসিআর মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী। গত ২৪ ঘণ্টায় যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের দুইজনের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৬০ বছর বয়সের মধ্যে একজন এবং ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সের মধ্যে একজন রয়েছেন। এর মধ্যে দুজন ঢাকায় মারা গেছেন। ঢাকার বাইরে মারা গেছেন বাকি দুইজন। রবিবার দুপুরে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত নিয়মিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলেন এ তথ্য জানান জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এ সময় ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তহমিনা। নতুন শনাক্তদের বিষয়ে অধ্যাপক ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ১৩৯ জনের মধ্যে ৯৬ জন পুরুষ এবং ৪৩ জন নারী। এর মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকার অধিবাসী। ঢাকায় রয়েছে ৬২ জন এবং ঢাকার বাইরে অন্যান্য এলাকায় বাকিরা অবস্থান করছেন। নতুন জেলা হিসেবে করোনা শনাক্ত হয়েছে লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও এবং ঝালকাঠি। অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় মোট নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৬৬১ জনের এবং ঢাকার বাইরে ৪৯০ জনের। অর্থাৎ ১ হাজার ২৫১ জনের নমুনা গত ২৪ ঘণ্টায় সংগ্রহ করা হয়েছে, যা গতকালের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩৪০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যা গতকালের তুলনায় ৩৮৬টি বেশি। এই নমুনার মধ্যে গতকাল কিছু এসেছিল সেগুলো পরীক্ষা হয়েছে, এজন্য নমুনা সংগ্রহের সংখ্যার চেয়ে পরীক্ষার সংখ্যা বেশি। বর্তমানে ১৭টি ল্যাবে নমুনা টেস্ট হচ্ছে ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় আইইডিসিআর ল্যাবে ২০৯টি, আইপিএইচ ৭৫টি, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১১৫টি, আইদেশী ল্যাবে ৬১টি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ৬২টি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন ল্যাবে ১৬৫টি, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজিতে ৪৮টি নমুনা, বিএসএমএমইউ ল্যাবে ৬৯টি, আইসিডিডিআর’বিতে ৯০ পরীক্ষা করা হয়েছে। অর্থাৎ ঢাকার ভেতরে মোট ৮৯৪টি নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকস এ্যান্ড ইনফরমেশন ডিজিজেস ল্যাবে ৭৯টি, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ৬১টি, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে ৯টি, রংপুরে মেডিক্যাল কলেজে ৫৫টি, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে ১০৬টি এবং খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ২২টি, শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজে ২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এভাবে ঢাকার বাইরে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৪৬টি নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার ভেতরে ও বাইরে মোট পরীক্ষা করা হয় ১৩৪০টি নমুনা। ঢাকায় করোনা রোগী বেশি এ পর্যন্ত মহানগরের ৭৬টি এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। আইইডিসিআর’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে টোলারবাগে। এই সংখ্যা এখন ১৯-এ দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে উত্তরায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৭, ওয়ারীতে ১৬, ধানম-িতে ১৪, লালবাগে ১৩, মোহাম্মদপুর ও বাসাবোতে ১২, যাত্রাবাড়ীতে ১১ ও মিরপুর-১১ তে ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মিরপুর-১২ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন আট জনে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ঢাকার ৫২ জায়গা লকডাউন করা হয়েছে। আইইডিসিআর জানায়, রবিবার পর্যন্ত দেশের ১৯ জেলায় সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো শেরপুর, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, গাজীপুর, গাইবান্ধা, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, জামালপুর, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, সাতক্ষীরা, রংপুর, পিরোজপুর, চাঁদপুর, নরসিংদী ও শরীয়তপুর। এর বাইরে আংশিক লকডাউন জারি আছে আরও ১৬টি জেলায়। ছয় চিকিৎসকের বরখাস্ত ন্যায়সঙ্গত হয়নি ॥ বিএমএ কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারী হাসপাতালের ছয় চিকিৎসককে যথাযথ উপায়ে বরখাস্ত করা হয়নি বলে মনে করেছেন বাংংলাদেশে মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। রবিবার পাঠানো প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেন, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে যে, সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি আদেশে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের বরখাস্তের পূর্বে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ দেয়া হয়নি। সেখানে দুইজন চিকিৎসক রোস্টার ডিউটিতে ছিলেন। একজন চিকিৎসক ১-৭ এপ্রিল ডিউটি শেষ করে বর্তমানে পরবর্তী রোটেশনের অপেক্ষায় ছিলেন। আরেকজন চিকিৎসক ৩১ মার্চ পর্যন্ত ডিউটি করেছেন, পুনরায় ১৫ এপ্রিল তারিখে রোস্টার অনুযায়ী কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়ার কথা। তিনি বর্তমানে একটি হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। আমাদের জানা মতে, দুইজন চিকিৎসককে ১৩ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফেব্রয়ারিতে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। তারা ওখানে যোগদান করেছেন। এটা প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার ব্যর্থতা। জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে চিকিৎসকদের বিব্রত করে প্রশাসন অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এ সকল চিকিৎসকদের বক্তব্য অনুয়ায়ী তারা কেউই কোভিড-১৯ রোগী দেখতে অপারগতা প্রকাশ করেননি। কোন কিছুই বিবেচনায় না নিয়ে সরকারী চাকরি বিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন না করে এ সকল চিকিৎসকদের বরখাস্ত আদেশ গোটা চিকিৎসক সমাজকেই হতাশ করেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসকগণ অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে যেখানে করোনা মোকাবেলা করছেন সেখানে এ ধরনের আদেশ হঠকারী ও অনভিপ্রেত। এ ব্যাপারে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন বিএমএ নেতৃবৃন্দ।
×