ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে সাকিবের

প্রকাশিত: ১১:০১, ১৩ এপ্রিল ২০২০

 খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে সাকিবের

মিথুন আশরাফ ॥ করোনাভাইরাসের প্রভাব যতদ্রুত কমে, ততই সবার জন্য মঙ্গল। কিন্তু শীঘ্রই তা কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আর তাতে করে বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের না খেলতে পারা সিরিজগুলো খেলার সম্ভাবনায় পরিণত হচ্ছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশের একের পর এক সিরিজ স্থগিত হচ্ছে। সিরিজ, টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়ার পথে আছে। আর সেই সিরিজ, টুর্নামেন্টগুলোতে সাকিবের খেলার সম্ভাবনা বাড়ছে। গত বছর সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখে সাকিব সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ী সেই টি২০ ম্যাচটিতে সাকিবের অসাধারণ নৈপুণ্যেই জিতে বাংলাদেশ। ৪ ওভার বোলিং করে ২৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নেয়ার পর ৪৫ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৭০ রান করে ম্যাচ জেতান সাকিব। ম্যাচসেরাও হন। নিষেধাজ্ঞার আগে নিজের খেলা সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটিতে সুখস্মৃতি পান সাকিব। এরপর নবেম্বরে ভারতের বিরুদ্ধে টি২০ ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের আগে সাকিব দুই বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন। এক বছর একেবারেই ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হবে। যদি এই সময়ে আইসিসির দেয়া সিদ্ধান্তে সাকিব ভালভাবে পথ চলে দেখান, তাহলে দ্বিতীয় বছর থেকেই খেলতে পারবেন। ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পেয়ে তা লুকানোতেই সাকিবের এমন শাস্তি হয়। তার মানে গত বছর ২৯ অক্টোবর থেকে এ বছর ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হবে সাকিবকে। আর তাই প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ বাংলাদেশ খেললেও সাকিব তা খেলতে পারেননি। ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ শেষ হয়। পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম ধাপে টি২০ সিরিজও শেষ হয়। দ্বিতীয় ধাপে পাকিস্তান গিয়ে একটি টেস্ট ম্যাচও খেলে বাংলাদেশ। আবার জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে একটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টি২০ ম্যাচও খেলে বাংলাদেশ। সাকিব নিষিদ্ধ থাকায় তা খেলতে পারেননি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তৃতীয় দফায় একটি ওয়ানডে, একটি টেস্ট খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। মে মাসে আয়ারল্যান্ড সফরে গিয়ে আয়ারল্যান্ডে তিনটি ওয়ানডে ও ইংল্যান্ডে চারটি টি২০ খেলার কথা ছিল। জুনে বাংলাদেশ সফরে এসে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুটি টেস্ট খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। সামনে জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিনটি টেস্ট, আগস্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি টেস্ট, সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ, অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনটি টি২০, অক্টোবর-নবেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপের পর ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন ওয়ানডে খেলার কথা আছে বাংলাদেশের। ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ ছাড়া বাকি সিরিজ, টুর্নামেন্ট খেলার কথা ছিল না সাকিবের। কারণ, তিনি তখন নিষিদ্ধ ক্রিকেটার হয়ে আছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে এরইমধ্যে সিরিজ স্থগিত হতে চলেছে। বাংলাদেশের পাকিস্তানে তৃতীয় দফায় সফর ও আয়ারল্যান্ড সফর স্থগিত হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরও স্থগিত হয়েছে। যত দূর বোঝা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসের প্রভাব যদি শীঘ্রই না কমে আসে বা দূর না হয়, তাহলে জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজ ও আগস্টে বাংলাদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের সিরিজও স্থগিত হয়ে যেতে পারে। এমনকি এশিয়া কাপও অনিশ্চিত। টি২০ বিশ্বকাপ নিয়েও আছে সংশয়। তাতে করে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনটি টি২০ ম্যাচ খেলাও ভেস্তে যেতে পারে। এই ম্যাচ, সিরিজ, টুর্নামেন্টগুলো যথাসময়ে না হওয়া মানেই পিছিয়ে যাওয়া। আর পিছিয়ে যাওয়া মানেই আগামী বছর চলে যাওয়া। তা যদি হয়, তাহলে সাকিব স্থগিত ও পিছিয়ে পড়া সিরিজগুলোতে খেলতে পারবেন। ততদিনে নিষেধাজ্ঞা যে শেষ হয়ে যাবে। তাতে করে বাংলাদেশেরই লাভ হবে। সাকিব ছাড়া শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে করুণ অবস্থাতেই পড়েছে বাংলাদেশ। সাকিব দলে থাকা মানে দলের শক্তি বাড়া। যে কোন দলের বিরুদ্ধে সাকিব থাকা মানে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাও বেশি থাকা। আর দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিরুদ্ধে সাকিব থাকা মানে তো জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাওয়া। এর আগে সাকিবের নৈপুণ্যে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর তাই তো করোনাভাইরাসের প্রভাবে যে ম্যাচ, সিরিজ, টুর্নামেন্ট স্থগিত হচ্ছে। তাতে বাংলাদেশের ভাল দিকও দেখা হচ্ছে। কেউই চায়নি এভাবে ম্যাচ, সিরিজ, টুর্নামেন্ট স্থগিত হতে থাকুক। কিন্তু নিয়তির খেলায়, ভাইরাসের প্রভাবে হচ্ছে। তাতে বাংলাদেশেরই হিসেবে লাভ হচ্ছে। সাকিবের খেলার সম্ভাবনা যে বাড়ছে। বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক তাই তো বলেছেন, ‘আমি সিরিজটা (অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে) স্থগিত হওয়ায় তেমন একটা হতাশ না। বরং পরবর্তীতে সিরিজটা আমাদের পূর্ণ শক্তি নিয়ে খেলার দুয়ার খুলে দিয়েছে। কারণ যদি সিরিজটা আগামী বছরে গিয়ে পড়ে, তবে আমরা দলে সাকিব ভাইকে ফিরে পাব।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘সাকিব ভাই দলে থাকলে এমনিতে সবাই উজ্জীবিত থাকেন। তাকে ছাড়া দলে আমার অতিরিক্ত একজন বাঁ-হাতি স্পিনারের দিকে ঝুঁকতে হয়। একদিন থেকে সিরিজটা বাতিল হওয়া তাই ভালই বলতে হবে। সিরিজটা যদি আগামী বছরের এপ্রিলে হয় আমরা আরও প্রস্তুত সাকিব ভাইকে পাব। অধিনায়ক হিসেবে আমি অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে আমাদের সেরা ক্রিকেটারকে নিয়ে খেলতে চাইব।’ সত্যিই তাই। যত ম্যাচ, সিরিজ, টুর্নামেন্ট স্থগিত হচ্ছে; ততই সাকিবের খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে।
×