ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভেঙ্গে পড়েছে ইউরোপের অর্থনীতি

প্রকাশিত: ১০:০৬, ১৩ এপ্রিল ২০২০

 ভেঙ্গে পড়েছে ইউরোপের অর্থনীতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোভিড-১৯ মহামারীতে স্পেন বর্তমানে পৃথিবীর ২য় সর্বোচ্চ আক্রান্ত দেশ। দেশটি গত এক মাসের অধিক সময়ে এই মহামারীর বিরুদ্ধে যাচ্ছে। সঙ্কটের শুরুতে মহামারী মোকাবেলায় গণস্বাস্থ্য বিভাগ বেশামাল অবস্থায় পড়লেও এখন কিছুটা সামলে ওঠেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সঙ্কটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অর্থনৈতিক সঙ্কট। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনা মহামারীর সঙ্গে স্পেনের অর্থনীতিও এখন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে আছে বা আইসিউতে আছে। স্পেনের মধ্যেই করোনা মহামারী প্রতিরোধে দেশটির জিডিপি (বাৎসরিক রাজস্ব) আয়ের শতকরা ১০ শতাংশ খরচ করে ফেলেছে। মোট পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার ২৮৮ মিলিয়ন ইউরো। মাদ্রিদের পরে সবচেয় বেশি আক্রান্ত প্রদেশ কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা করোনা ঠেকাতে ২০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে বলে জানিয়েছেন মেয়র আদা কোলাও। স্পেনের কনফেডারেশন অব বিজনেস অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট আন্তনিয়ো গারামানদি জানিয়েছেন, করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে জিডিপি ৯ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। গত মার্চের ১৩ তারিখ স্টেট অব এ্যালার্ম জারির পর থেকে স্পেনে অর্থনীতি ধসে পড়েছে। মানুষের প্রাথমিক প্রয়োজনীয় উপাদান যোগানদাতা কোম্পানিগুলো ব্যতীত বাকি সব বন্ধ হয়ে যায়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বেকারের সংখ্যা। গত মার্চ মাসের শেষে দেশটিতে বেকারের সংখ্যা ৩ লাখ ২ হাজার ৩৬৫ থেকে ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩১২ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক অব স্পেন এর মধ্যেই সতর্ক করে দিয়েছে যে, এই অবরূদ্ধ অবস্থার অর্থনৈতিক প্রভাব প্রত্যাশিত ক্ষতিকেও ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া এই করোনা মহামারী সঙ্কট এক মাসে দেশের আভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে প্রায় তলানিতে এনে দাঁড় করিয়েছে। দেশ অনুসারে স্পেন করোনা মহামারীতে সবচেয়ে বড় নেতিবাচক প্রভাব ভোগ করে এমন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। স্পেনের অর্থনীতির মূল খাতগুলোর মধ্যে কৃষি ও পর্যটন শিল্পের মধ্যে পর্যটন শিল্পে যে ধস নেমেছে মূলত করোনা মহামারী সঙ্কট শুরু হওয়ার একমাস আগে থেকে। বর্তমানে দেশটি প্রায় পর্যটন শূন্য। এছাড়া কৃষি খাতে চলছে চরম লোক সঙ্কট। নতুন ফসল তোলা এবং নতুন করে ফসল বোনার মানুষ নেই। শুধু কাস্তিইয়া আ লা মানছাসহ ভ্যালেন্সিয়াতে কৃষিকাজের জন্য প্রচুর কাজের লোকের সঙ্কট শুরু হয়েছে। তারা প্রায় তিন লাখ বেকার মানুষ ও বিদেশীদের তারা খুঁজছে কৃষি খাতকে পুনর্জীবিত করতে। করোনা মহামারীতে স্পেনে সবচেয় ক্ষতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে, বাণিজ্য ও পর্যটন খাত। পর্যটন খাতের ধসের কারণে দেশটিতে বাংলাদেশী যারা পর্যটন নির্ভর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে। পরিস্থিতি ভাল হলেও কতদিনে আবার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে সেটা নিয়ে একটা চরম অনিশ্চয়তা দিন যাচ্ছে। বর্তমানে করোনা সঙ্কটের কারণে যারা ঘরে বন্দী হয়ে আছে, তারা করোনায় ভয়াবহতাকে মানসিকভাবে সহনীয় করে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু নতুন অর্থনৈতিক সঙ্কটের পুর্ভাবাস তাদের আবার নতুন দুর্ভাবনায় নিমজ্জিত করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীরা প্রাণঘাতী নোভেল করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপের দেশগুলোকে সহায়তায় ৫০ হাজার কোটি ইউরোর একটি প্রণোদনা প্যাকেজের বিষয়ে একমত হয়েছেন। ব্রাসেলসে টানা আলোচনার পর বৃহস্পতিবার রাতে ইউরো গ্রুপের চেয়ারম্যান মারিয়ো সেন্টেনো নতুন এ চুক্তির ঘোষণা দেন। ডিসেম্বরের শেষদিকে উহানে আবির্ভূত করোনাভাইরাস চীন, ইরানের পর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইউরোপের ইতালিতেই বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্পেনেও কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে, এই সংখ্যা ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ১৫ হাজার। কেবল আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা নয়, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অর্থনীতি ১৯৩০ সালের মহামন্দা পরবর্তী সবচেয়ে ভয়াবহ সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা গিওর্গিভা সতর্ক করেন।
×