ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নাদীম কাদির

সঙ্কটকালীন বীরগণ

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ১৩ এপ্রিল ২০২০

 সঙ্কটকালীন বীরগণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুসরণযোগ্য আরও একটি উদাহরণ স্থাপন করেছেন, বিশেষ করে আইনপ্রণেতা, জেলা প্রধান, সাংগঠনিক প্রধান এবং অন্যান্য সমস্ত পরিষেবার লোকদের জন্য। তিনি তাদের সম্মানিত করছেন, যারা সামনে থেকে প্রতি মুহূর্তে জীবন বাজি রেখে বিপজ্জনক করোনাভাইরাস থেকে আমাদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। তিনি ডাক্তারদের, জাতির প্রতি তাদের সেবার স্বীকৃতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, মিডিয়া, কয়েকটি এনজিও এবং বেসরকারী সংস্থাও মানবতার সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। স্বীকৃতি ও সম্মান দিয়েছেন তাদেরও। বাংলাদেশে সঙ্কট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এবং তারাও সম্মানিত হওয়ার দাবিদার। একজন রাজনীতিবিদ স্বাস্থ্য অগ্রাধিকার বিবেচনায় কোন সহায়তা চাওয়ার আগেই অনুকরণীয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি গাজীপুর সিটির মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এই তরুণ রাজনীতিবিদ তার শহর এবং দেশের মানুষকে যতটা সম্ভব বাঁচাতে আসন্ন কভিড-১৯ সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন। বাংলাদেশে উদারাময় রোগ গবেষণায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান সংস্থায় কর্মরত ৩৬ বছর বয়সী বিজ্ঞানী ড. নুহু আমিনের পানিতে হাত- ধোয়া এবং স্থানীয়ভাবে পাওয়া ডিটারজেন্টের ফর্মুলাকে গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) অনুমোদন দিয়েছে। এটি এখন ডাব্লিউ এইচ ও অফিসিয়াল এবং করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর হাত ধোওয়ার পদ্ধতি। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পটি আইসিডিডিআর,বিতে যোগদানের বিষয়ে আমার প্রথম গবেষণা। বস্তিবাসীদের জন্য নিয়মিত সাবান ব্যয়বহুল, তাদের জন্য কম দামের হাত ধোয়ার সন্ধানের জন্য প্রথম গবেষণা হিসাবে শুরু হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, একটি মিনি ডিটারজেন্ট প্যাকেটের সঙ্গে দেড় লিটার পানি মিশিয়ে দারুণ কাজ করে। তিনি হাত ধোয়ার জনক কিনা জিজ্ঞেস করলে আমিন বলেছিলেন যে তিনি ‘উদ্ভাবক এবং ধারণাটি তৈরি করেছিলেন এবং এটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।’ তাকেও সঙ্কটকালীন নায়ক এবং বাংলাদেশের গৌরব অর্জনের জন্য সম্মানিত করা উচিত। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ তালিকায় রয়েছে যারা ইতোমধ্যেই সঙ্কটকালে তাদের অবদান রেখেছে। তাদের মধ্যে দেশের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ আকবর সোবহান এবং সায়েম সোবহান আনভীর। জীবন বাঁচাতে জাতিকে তাদের উপহার একটি নজিরবিহীন। তারা করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৫০০০ বিছানাযুক্ত হাসপাতালের সুবিধার জন্য জায়গা দিয়েছেন, যা এই অঞ্চলের বৃহত্তম। এটিতে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র এবং চারটি সম্মেলন কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘আমরা বিশ্বাস করি যে এই পদক্ষেপটি করোনভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারকে সহায়তা করবে,’ বলেছেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর এক শ’ কোটি টাকার চেক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ডাঃ আহমেদ কাইকাউসের হাতে তুলে দিয়েছেন। তারা সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের মতো সংস্থাগুলোকেও সময়োপযোগী উপহার দিয়েছে। সামিট গ্রুপ বাংলাদেশের আরও একটি প্রতিষ্ঠান সরকারকে করোনাভাইরাস মোকাবেলার কাজ সহজ করে দিয়েছে বড় পাঁচটি থার্মাল স্ক্যানার উপহার দিয়ে। মুহাম্মদ আজিজ খান ও তার ভাই চেয়ারম্যান মুহম্মদ ফরিদ খান জীবন বাঁচাতে সহায়তার জন্য ৩০ কোটি টাকা অনুদানও দিয়েছেন। তারাও এ সঙ্কটকালে এসেছেন নায়কের ভূমিকায়। আজিজ খান বলেন, ‘প্রয়োজনের এই সময়ে সরকারের পাশে দাঁড়ানো ব্যতিক্রমী কিছু নয়। এটি আমাদের ভালবাসার একটি প্রকাশ মাত্র এবং ভাইরাস প্রতিরোধে সহায়তা করার পাশাপাশি দেশের জন্য আমাদের দায়িত্বের একটি অংশ’। ভাইরাস থেকে জীবন বাঁচাতে অবদান রাখার জন্য আমাদের নতুন নায়কদের তালিকাবদ্ধ করে রাখতে হবে। এক যুবক, যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত, কিন্তু দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ডাক্তারদের অমানবিক আচরণের কারণে চিকিৎসা না পেয়ে জীবন হারিয়েছেন। তিনি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন চাকমা। আমাদের অবশ্যই তাঁকে আন্তরিক প্রার্থনায় স্মরণ করতে হবে এবং তার বাবা-মাকে সান্ত¡না দিতে হবে। ফেসবুকে গুরুতর অসুস্থ বোধ করায় তিনি লিখেছিলেন যে, ‘আমি করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত নই। তবে মনে হচ্ছে করোনাভাইরাসের কারণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য আমাকে মরে যেতে হবে।’ তিনি ক্যান্সার ও ফুসফুস জটিলতার রোগী ছিলেন। আমাদের মাতৃসম প্রধানমন্ত্রী তাকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করেছেন। লেখক : সাংবাদিক
×