ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিপদে প্রবাসীরা

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ১৩ এপ্রিল ২০২০

 বিপদে প্রবাসীরা

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ তার সর্বগ্রাসী হন্তারক রূপ নিয়ে আক্রমণ করেছে প্রায় গোটা বিশ্বকে। বিশ্বজুড়ে ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ঘটেছে ভয়াবহ এই ভাইরাসের বিস্তার। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি প্রথম মৃত্যু ঘটে করোনায়। এর ঠিক ৯০ দিনের মাথায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে লক্ষাধিক। আক্রান্ত প্রায় ১৭ লাখ। সত্যি বলতে কি বাংলাদেশসহ এমন কোন দেশ নেই যে, বলা যায় করোনা আক্রমণে কম-বেশি বিপর্যস্ত নয়। তবে এই মুহূর্তে সর্বাধিক বিপদে রয়েছে ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব, কুয়েত, ইউএই, ইরান, তুরস্কও কম বিপদে নেই করোনা আক্রমণে। বাস্তবতা হলো, এসব দেশেই বাংলাদেশী আছেন কম-বেশি। সবচেয়ে বেশি আছেন মধ্যপ্রাচ্যে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায়। স্বভাবতই তাদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। ইতোমধ্যে মারাও গেছেন অনেকে, যাদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীও। ভাগ্যান্বেষণেই মূলত তারা বেছে নিয়েছিলেন প্রবাস জীবন। পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। তবে করোনা হানা দিয়ে কেড়ে নিয়েছে তাদের মূল্যবান জীবন। এর বাইরেও যেসব প্রবাসী বাংলাদেশী বিশেষ করে শ্রমজীবী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দুঃসময় অতিবাহিত করছেন তারা আছেন চরম আর্থিক দৈন্যসহ দুঃখ-দুর্দশায়। করোনার কারণে প্রায় সব দেশে লকডাউন ও শাটডাউন চলতে থাকায় প্রায় সব অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, হোটেল-রেস্তরাঁ একেবারে বন্ধ। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অধিকাংশ প্রবাসী। জীবন-জীবিকার পথ প্রায় অবরুদ্ধ, যাদের মধ্যে আছেন শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী। অনেক দেশ তাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চাপও দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে। তবে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আপাতত তা সম্ভব হচ্ছে না। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো কিছু সহায়তা কার্যক্রম হাতে নিলেও তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। তেলের দাম প্রায় তলানিতে ঠেকায় আগামীতেও বিদেশে শ্রমবাজারের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার যখন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে এবং করোনার কারণে বিপর্যস্ত ও অনিশ্চিত তখন আগামীতে জাপানের মতো দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, জাপান বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভবত প্রধানতম উন্নয়ন সহযোগী বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং জাইকা এক্ষেত্রে প্রভূত সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে নানাভাবে ও উপায়ে। সুতরাং সে দেশে দক্ষ কর্মী প্রেরণকারী নবম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে শ্লাঘার বিষয়। এ বিষয়ে সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে যে, জাপান সে দেশে ১৪টি খাতে কেবল যোগ্য ও দক্ষ কর্মীদেরই সুযোগ দেবে এবং তাদের জন্য জাপানী ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে যেন কোন অবস্থাতেই নয়-ছয় না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। নিকট অতীতে এই মন্ত্রণালয়টি মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ ও প্রেরণের ক্ষেত্রে আদৌ কোন সাফল্য দেখাতে পারেনি। এমনকি এজেন্ট-দালালসহ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকেও সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশ থেকে যে বা যারাই যাচ্ছেন তারাই বিভিন্নভাবে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মসহ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। জাপানের ক্ষেত্রে যেন এমনটি না ঘটে কোন অবস্থাতেই। মনে রাখতে হবে যে, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজারের সুদিন আর নেই। বরং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেরাই এখন সমূহ সঙ্কটে। করোনা ও তেলের দামের কারণে বিধ্বস্ত প্রায়। এর বাইরেও উন্নত বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রেই শিল্প-কারখানাগুলোতে শ্রমিকের স্থান দখল করে নিচ্ছে রোবট ও কম্পিউটার। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। দেশেই তৈরি করতে হবে দক্ষ মানবসম্পদ। এক্ষেত্রেও জাপান সহায়ক হতে পারে বাংলাদেশের জন্য।
×