ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছুটির কাজ

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ১৩ এপ্রিল ২০২০

ছুটির কাজ

২৫ মার্চ প্রথম ঘোষিত হয়েছিল করোনাজনিত ছুটি। প্রথম দফা ছুটি শেষ হওয়ার আগে ছুটি বাড়ানো হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ছুটি বাড়িয়ে শুক্রবার ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে এসেছে শব-ই-বরাত, এবাদত-বন্দেগির রাত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে মসজিদে না গিয়ে ঘরে বসে নামাজ পড়ার আহ্বান জানানো হয়। সামনে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। বর্ষবরণ উৎসবও ঘরেই পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। রমনার বটমূল তো বটেই, কোথাও জনসমাবেশ করে উৎসব উদযাপিত হবে না। দফায় দফায় যে ছুটি বাড়ানো হলো তা দেশের মানুষের স্বার্থেই। সোজা কথায় জীবন বাঁচাতে ঘরে থাকার জন্য ছুটি বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু করোনাকাল এখনও শেষ হয়নি। এই ছুটি মধুর ছুটি নয়, নয় অবকাশ যাপনের সুবর্ণ সুযোগ। এই ছুটির পরতে পরতে রয়েছে উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক, দুশ্চিন্তা। এই ছুটি সার্বক্ষণিকভাবে কর্তব্য পালনের ছুটি, এ অবকাশ দায়িত্বশীলতার। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মঙ্গল সাধনের জন্য প্রতিটি দিন সক্রিয়তার, সচেতনতার। অর্থাৎ ছুটিতে কাজ রয়েছে কিছু যা অবশ্য পালনীয়। প্রথম কাজ ঘরে থাকা এবং বারবার হাত ধোয়া। করোনার কোনরকম লক্ষণ প্রকাশ পেলে গণমাধ্যমে প্রতিদিন প্রচারিত ও প্রকাশিত নম্বরে ফোন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা। রোগ লুকিয়ে রাখা অনুচিত। তাতে আশপাশের মানুষ তথা সমাজ বিপদগ্রস্ত হতে পারে। পরিবারের যিনি প্রধান তার দায়িত্ব বেশি। তিনি যথাযথ নির্দেশনা দেবেন পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে। তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। আমরা যদি সতর্ক ও সচেতন থাকি, সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি তাহলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি আমাদের তেমন ক্ষতি করতে পারবে না। সন্ধ্যা ৬টার পর বাইরে বের হতেও নিষেধ করেছে সরকার। সরকারের এই নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে মর্মে আদেশ জারি করা হয়েছে। চীন জানুয়ারির শুরতেই আঁচ করতে পেরেছিল মানুষকে বিচ্ছিন্ন না করতে পারলে এই ভাইরাসের বিস্তৃৃতি রোধ করা যাবে না। খানিকটা দেরিতে হলেও হুবেই প্রদেশ আর উহান শহরকে বিচ্ছিন্ন করে সবাইকে ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছিল। বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল চীনের সব কারখানা। চীন ছুটি দিয়ে নোভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার থামিয়ে দিয়েছে। করোনার বিস্তার রোধে তিন সপ্তাহের জন্য যুক্তরাজ্যকে লকডাউন করার আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসকে দশকের ‘বৃহত্তম হুমকি’ উল্লেখ করেন। আমরা আগেও বলেছি, ছুটি এসেছে ভোগের জন্য নয়, দুঃসময়কে রুখে দেয়ার কৌশলের অংশ হিসেবে। কিছু কথা আমাদের পুনরাবৃত্তি করা তাই উপযোগী। দেশে মানুষ ঘরে অবস্থান করছে। কিন্তু অনেককে ঘরের বাইরেও যেতে হচ্ছে জরুরী প্রয়োজনে। সার্বক্ষণিকভাবে ঘরে থাকার জন্য মানুষের ওপর বন্দিত্বের অনুভূতিসহ নানা মনোস্তাত্ত্বিক চাপ আসাটা স্বাভাবিক। এ সময় তার করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। নিজেকে বাঁচাতে হলে আমাদেরও কিছু ত্যাগ করতে হবে, সতর্ক ও সচেতন হতে হবে- এই বার্তা যেন সবার সামনে চলে এসেছে। এ মুহূর্তে গণমাধ্যম ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব পালন করছে। কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই আমরা নিরাপদ থাকতে পারব। ছুটিতে সবাই ঘরে থাকবেন নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার স্বার্থেÑ এটাই প্রত্যাশিত। বাস্তবতা মেনে নিয়ে ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে নিজেকে সংযত না করতে পারলে সমূহ বিপদ। ছুটিতে ঘরে অবস্থান করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে আমরা করোনাকে ঠেকিয়ে দিতে পারব।
×