ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইওডি ঘোষণা সোমবার

বাণিজ্যিক উৎপাদনে প্রস্তুত পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্র

প্রকাশিত: ১০:৪২, ১১ এপ্রিল ২০২০

  বাণিজ্যিক উৎপাদনে প্রস্তুত পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্র

রশিদ মামুন ॥ পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের ইনিশিয়াল অপারেশন ডেট (আইওডি) ঘোষণা করা হবে চলতি সপ্তাহে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি এতদিন পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন করছিল। এখন পরীক্ষণের শেষ ধাপ নির্ভরযোগ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াতে প্রতিদিন পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় অর্থাৎ ৬৬০ মেগাওয়াট লোডে চালিয়ে দেখা হচ্ছে। আশার কথা হচ্ছে পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় চালিয়ে দেখা গেছে কেন্দ্রটি ৬৮০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে চলতি সপ্তাহ থেকেই পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছে। তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র সূত্র বলছে, দেশের সব থেকে বড় এই কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এখানের দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা পৃথকভাবে ৬৬০ মেগাওয়াট করে। কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করে গত ১৩ জানুয়ারি বেলা ১১টায়। এরপর থেকে বিদ্যুত কেন্দ্রটি পরীক্ষণের নানা ধাপে উত্তীর্ণ হয়। পায়রা থেকে তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের একজন প্রকৌশলী জানান, গত ৬ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টায় অর্থাৎ ৭ এপ্রিল জিরো আওয়ার থেকে কেন্দ্রের নির্ভরযোগ্য উৎপাদন পরীক্ষা শুরু হয়। নির্ভরযোগ্য উৎপাদন পরীক্ষাটি চলে সাত দিন। এর মধ্যে যে কোন দিন দিন কেন্দ্রটিকে পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় চালাতে বলা হয়। এর মধ্যে যে কোন ছয় ঘণ্টাকে বেছে নেয় বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কেন্দ্রটিকে টানা ছয় ঘণ্টা অথবা তিন দিনের মধ্যে আধা ঘণ্টা করে ১২ বার চালিয়ে দেখে পিডিবি। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেন্দ্রটিকে বাণিজ্যিক উৎপাদনের ছাড়পত্র পায়। আর কেন্দ্রটি পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় চালাতে ব্যর্থ হলে জরিমানা গুনতে হয়। এই প্রকৌশলী জানান, আগামী ১৩ এপ্রিল সোমবার সব পরীক্ষণ শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রটির ইনিশিয়াল অপারেশন ডেট (আইওডি) ঘোষণা করা হবে। দেশের সব থেকে বড় এই কেন্দ্রের অর্ধেক মালিকানা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের হাতে। বাকি অর্ধেক চীনের। যৌথ মালিকানায় রাষ্ট্রীয় বিদ্যুত উৎপাদন কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট এ্যান্ড ইমপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি) কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। এজন্য উভয় প্রতিষ্ঠান মিলে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল) গঠন করেছে। কেন্দ্রটির সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট আগামী জুনে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। পায়রা বিদ্যুত হাবে বিসিপিসিএল আরও একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণ করছে। বিসিপিসিএল এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এম খোরশেদুল আলম জানান, এই দুর্যোগের মধ্যেও আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ৬৬০ মেগাওয়াটের হলেও আমরা চালিয়ে দেখেছি সেখান থেকে ৬৮০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এটিকে আশার খবর উল্লেখ করে বলেন, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অবহেলিত জনপদে শিল্প বিকাশে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এর পাশাপাশি ঢাকার বিদ্যুত চাহিদা পূরণ হবে। চীনা এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং এর বাংলাদেশ সফরের সময় কেন্দ্রটির ঋণ চুক্তি সই হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়। ওই অনুষ্ঠানেও চীনের প্রেসিডেন্ট উপস্থিত ছিলেন। সরকারের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে সব থেকে দ্রুতগতিতে শেষ হওয়া পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রটিকে সুপার ফাস্ট প্রজেক্ট আখ্যা দেয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রের বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন তৈরি না হওয়াতে বিপাকে পড়তে হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ শেষ করতে না পারায় আপাতত এই বিদ্যুত দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলেই বিতরণ করতে হচ্ছে।
×