ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নরসিংদী, গাইবান্ধা টাঙ্গাইল ও চাঁদপুর লকডাউন

প্রকাশিত: ১০:০৪, ১১ এপ্রিল ২০২০

  নরসিংদী, গাইবান্ধা টাঙ্গাইল ও চাঁদপুর লকডাউন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় কয়েকটি জেলা লকডাউন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নরসিংদী, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল ও চাঁদপুর। এদিকে পটুয়াখালীর দুমকিতে একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হওয়ায় পুরো উপজেলা লকডাউন করা হয়েছে। ঝালকাঠি শহরের সব প্রবেশপথ বন্ধ করা হয়েছে। নাটোর, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, রংপুর, নীলফামারী, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, বাগেরহাটের চিতলমারী, ভোলার চরফ্যাশন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ও বরিশালের বেশ কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এসব স্থানের শহর, ইউনিয়ন ও গ্রামে কিছু বাড়ি লকডাউন করা হয়। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে টাঙ্গাইলে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে লকডাউন চলছে। শুক্রবারও লকডাউন ছিল। এই লকডাউন কার্যকর করতে জেলাজুড়ে ৫৪ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যাতে শহরে বা জেলায় কোন গণপরিবহনসহ কোন ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক কাজ করছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হলে করা হচ্ছে জরিমানা। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন কার্যকর করতে ১৩টি থানা এলাকায় ৪০টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া শহরের মধ্যে আরও ১৪টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যাতে করে বাইরে থেকে কেউ এ জেলায় প্রবেশ করতে না পারে। তবে ওষুধ, রোগী বহনের গাড়ি ও খাদ্য পণ্যের যান চলাচল করতে কোন বাধা নেই। গাইবান্ধা ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে গাইবান্ধা জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গাইবান্ধা জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে লকডাউন কার্যকর হয়। নরসিংদী ॥ করোনা মোকাবেলায় নরসিংদী জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ আদেশ কার্যকর করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে। চাঁদপুর ॥ করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় চাঁদপুর জেলাকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ মাজেদুর রহমান খান অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। পটুয়াখালী ॥ দুমকি উপজেলা লকডাউন করেছে প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দুমকি থেকে কেউ বাইরে বের হতে এবং বাইরে থেকে দুমকিতে প্রবেশ করতে পারবে না। মোঃ দুলাল হাওলাদার নামে এক গার্মেন্টস কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে মারা যাওয়ার পর উপজেলাটি লকডাউন করা হয়। ঝালকাঠি ॥ করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় ঝালকাঠি শহরে প্রবেশের সবগুলো পথ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে বাস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, কলেজ মোড়, ব্র্যাক মোড় ও ফায়ারসার্ভিস মোড় এলাকায় বাঁশ ও চটি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করার জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন। নাটোর ॥ গাইবান্ধা থেকে বাড়ি ফেরা নলডাঙ্গা উপজেলায় এক শিক্ষিকার বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। শুক্রবার ভোরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নিজ বাড়ি এলে খবর পেয়ে দুপুরে নলডাঙ্গা থানা পুলিশ ওই শিক্ষিকার বাড়িতে লাল পতাকা ঝুলিয়ে ১৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন। মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জে আন্তঃইউনিয়ন যোগাযোগ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার এই গণবিজ্ঞপ্তিতে জারি করেছেন। গাজীপুর ॥ কাপাসিয়ায় ফিসারিজ ফিড মিলের এক কর্মকর্তার দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এ ভাইরাসের বিস্তার এড়াতে কারখানাসহ ওই এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেছে। আক্রান্ত ব্যক্তির নাম মোঃ ইব্রাহীম (২৮)। রংপুর ॥ রংপুরে এক ছাত্র করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রশাসন নিশ্চিত হয়েছে। ফলে আক্রান্ত ছাত্রের বাড়িসহ পার্শ্ববর্তী ১১টি বাড়িকে লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সূত্র জানায়, মিঠাপুকুরের বালারহাট খন্দকারপাড়ার বাসিন্দা ওই ছাত্র এসএসি পরীক্ষার পর ছুটিতে মুন্সীগঞ্জ জেলায় নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ১০ দিন অবস্থান করে। নীলফামারী ॥ জেলায় সব ধরনের যানবাহন প্রবেশ ও বহির্গমণ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। এনিয়ে প্রবেশপথগুলোতে বসানো হয়েছে বিশেষ চেকপোস্ট। এছাড়া জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কেও সবধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নওগাঁ ॥ শহরের রজাকপুর বউবাজার মহল্লায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক ব্যক্তির সর্দি কাশি এবং জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়ায় ওই এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ ॥ টুঙ্গিপাড়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এক দম্পতি। আক্রান্ত স্বামীর বয়স (২১) এবং স্ত্রীর বয়স (২০)। বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরে মুন্সিরচর গ্রামের আক্রান্তদের বাড়িসহ আশপাশের ছয়টি বাড়ি লকডাউন করে সেখানে লাল নিশান টানিয়ে দেয়া হয়। সীতাকু- ॥ চট্টগ্রামের সীতাকু-ে এক ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নুর উদ্দিন রাশেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনার পর প্রশাসন ছয়টি বাড়ি, ৩টি দোকান লকডাউন করেছে। সিরাজগঞ্জ ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে কাজীপুরের ৬ ইউনিয়ন লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী এ ঘোষণা দেন। লকডাউন ঘোষণা করা ইউনিয়নগুলো হলো সোনামুখী, চরগিরিশ ও মনসুরনগর, তেকানী, নাটুয়ারপাড়া ও নিশ্চিন্তপুর। বাগেরহাট ॥ চিতলমারী ও গোপালগঞ্জরে টুঙ্গিপাড়ার সীমান্তবর্তী শেখ লুৎফর রহমান সেতু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার টুঙ্গিপাড়ার গেমাডাঙ্গার গ্রামের একই পরিবারের দুই সদস্য কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ায় চিতলমারী উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে চিতলমারী ও টুঙ্গিপাড়ার সীমান্ত লকডাউন করা হয়। চরফ্যাশন ॥ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পরে এমন আশঙ্কায় চরফ্যাশনের ১৩ বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। দৌলতপুর ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে লকডাউন করা হয়েছে। পাশর্^বর্তী উপজেলা ও জেলা থেকে দৌলতপুরে প্রবেশ পথে ব্যারিকেড দিয়ে লকডাউন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার ৩টি প্রবেশ পথে ব্যারিকেড দিয়ে এ লকডাউন করা হয়। কেরানীগঞ্জ ॥ কেরানীগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগী। গত চার দিনে তিনটি ইউনিয়নে মোট আট জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত কেরানীগঞ্জের পাঁচটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে, জিনজিরা, আগানগর, শুভাঢ্যা, কালিন্দী এবং শাক্তা। কিশোরগঞ্জ ॥ পাকুন্দিয়ায় একজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার হোসেন্দী চরপাড়ার ওই ব্যক্তির নমুনায় করোনা পজেটিভ আসায় স্থানীয় প্রশাসন পরিবারের লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। বরিশাল ॥ নগরীসহ জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় আরও তিনটি বাড়ি লকাডাউন করেছে প্রশাসন। এ নিয়ে বরিশাল জেলায় মোট ২৯টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী গণপরিবহন ও জনচলাচল বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি কিছু মানুষ অতিগোপনে নারায়ণগঞ্জ থেকে বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় এসেছেন। করোনা ইস্যুতে সন্দেহভাজন মনে হওয়ায় এজন্য ওই উপজেলার আটটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
×