ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর খুনী মাজেদের ফাঁসি আজ কিংবা কাল

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ১১ এপ্রিল ২০২০

 বঙ্গবন্ধুর খুনী মাজেদের ফাঁসি আজ কিংবা কাল

শংকর কুমার দে ॥ আজ শনিবার বা রবিবার রাতেই ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে আত্মস্বীকৃত খুনী ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে। এ জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মঞ্চটি। ফাঁসি দেয়ার মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছে। জল্লাদও প্রস্তুত। শনিবার রাতেই ফাঁসি কার্যকর করার সম্ভাবনা বেশি। তবে কোন কারণে যদি শনিবার ফাঁসি কার্যকর করা না হয় তাহলে রবিবার রাতে ফাঁসি কার্যকর হবে এমনটাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হলে এটাই হবে কোন আসামির কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করার প্রথম ঘটনা। সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেলেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো আবদুল মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদনটি নাকচ করা হয়। প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি বাতিল করে দেয়ার পর সেই চিঠিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছে। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত ওই কারাগারে কোন ফাঁসি কার্যকর করা হয়নি। তবে ফাঁসির মঞ্চটি সবসময় প্রস্তুত থাকে। সম্প্রতি নতুন করে ধোয়ামোছা করা হয়েছে। এতে যেকোন সময় ফাঁসি কার্যকর করা যাবে। তবে কোন কারণে যদি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করা না হয় তাহলে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করা হবে। এ জন্য কাশিমপুর কারাগারের ফাঁসির মঞ্চও সম্পূর্ণ প্রস্তুত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আবদুল মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্রাণভিক্ষার আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ায় ফাঁসির আদেশ কার্যকরে আর কোন বাধা থাকল না। এখন পরবর্তী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তার ফাঁসির দন্ড কার্যকর করা হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকান্ডের ৪৫ বছর পর ধরা পড়েছে ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পলাতক আবদুল মাজেদকে গত সোমবার মধ্যরাতে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে মাজেদকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে সিটিটিসি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। এরপরদিন বুধবার মৃত্যুর পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চায় আবদুল মাজেদ। পরে প্রাণভিক্ষার আবেদনটি নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ক্যাপ্টেন মাজেদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়। তার স্ত্রী’র নাম সালেহা বেগম। তাদের চার মেয়ে ও এক ছেলে আছে। রাজধানী ঢাকায় তাদের বাড়ি নম্বর ১০/এ, রোড নম্বর ১, ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকা। বঙ্গবন্ধুর পলাতক ৬ খুনীর মধ্যে ক্যাপ্টেন মাজেদ ভারতে অথবা পাকিস্তান পালিয়ে আছে বলে প্রথম থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। এখন পলাতক আছে আরও ৫ আসামি। পাঁচ আসামিরা হলো- খন্দকার আবদুর রশিদ, এএম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান। এর আগে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি)। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ। তার সঙ্গে ছিল মেজর নূর ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনও। এ ছাড়াও পলাতক রশীদ, ডালিমও বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সময়ে সেখানে ছিল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত ক্যাপ্টেন মাজেদ মিন্টো রোডে আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ির অপারেশনের সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিল বলে হত্যা মামলার স্বাক্ষীরা উল্লেখ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর একজন জুনিয়র অফিসার হয়েও অন্য খুনীদের সঙ্গে ক্যাপ্টেন মাজেদ খুনী চক্রের সঙ্গে বঙ্গভবনে অবস্থান নেয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মেজর (অব) শাহরিয়ার রশিদ খানের আত্মীয় হওয়ায় খুনী দলের সুপ্রীম কমান্ডোতে জায়গা পায় মাজেদ। মাজেদ তখন লেফটেনেন্ট ছিল। এই খুনী শুধু বঙ্গবন্ধুর খুনেই অংশগ্রহণ করেনি, জেলহত্যায় অংশ নিয়েছিল। শুধু তাই নয়, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু খুনের পর এই মাজেদ প্রয়াত জিয়াউর রহমানের নির্দেশ মোতাবেক বঙ্গভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এরপর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে এই হত্যাকান্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে; মামলার পর বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ফের শ্লথ হয়ে যায় মামলার গতি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দন্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এখন ফাঁসি কার্যকর করা হবে ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের। তার ফাঁসি কার্যকরের জন্য সারাদেশবাসী অপেক্ষা করছে।
×