ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান শিল্পীর

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১১ এপ্রিল ২০২০

 অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান শিল্পীর

রুমেল খান ॥ ‘করোনায় আমাদের এখন করুণ অবস্থা! যাদের বাস স্থানই নেই, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের উচিত অসহায়দের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা।’ কথাগুলো যার, তিনি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার সারিয়ালজাট গ্রামের মেয়ে। কৃষিজীবী বাবা আব্দুল কুদ্দুস, মা গৃহিণী আনোয়ারা বেগমের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। স্কুলে পড়ার সময়ই অন্যদের খেলতে দেখে হ্যান্ডবল খেলার প্রেমে পড়ে যান। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নিয়ে প্রথম হন। তার দৌড়ের গতি দেখে স্কুলের আবুল হোসেন স্যার মেয়েটিকে হ্যান্ডবল খেলতে উৎসাহিত করেন। এভাবেই এ খেলায় আসা। পরবর্তীতে জাতীয় নারী দলে খেলেছেন দাপটের সঙ্গে। তার নাম শিল্পী আকতার। ২৭ বছর বয়স শিল্পী ২০১৮ সালে অভিমান করে অবসর নিয়েছিলেন জাতীয় দল থেকে। পরে মত পাল্টে আবারও জাতীয় দলে ফেরেন। ২০১০ থেকে জাতীয় দলে খেলছেন তিনি। মোহামেডান, মেরিনার্স ও ঊষার হয়ে খেলেছেন ক্লাব পর্যায়ে। সার্ভিসেস দল বিজেএমসির হয়ে খেলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। শিল্পী এখন গ্রামের বাড়িতে। ঢাকায় এসেছিলেন গত ৮ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ গেমসের প্রস্তুতি নিতে। যে দিন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দেশের সব খেলাধুলা বন্ধ ঘোষণা করে, তার আগেই পারিবারিক সমস্যার কারণে গ্রামে যেতে বাধ্য হন তিনি। পরে ঢাকায় আসার উদ্যোগ নিতেই শোনেন সবকিছু বন্ধ। ফলে গ্রামেই থেকে যান। জনকণ্ঠকে শিল্পী জানান, ‘গ্রামে এসে পরিস্থিতির কারণে অনুশীলন করতে পারছি না। বাড়ি থেকে তো বেরই হচ্ছি না। সর্বত্রই চাপা আতঙ্ক। নিয়মিত হাত ধুই সাবান দিয়ে। দিন ১০ বারেরও বেশি।’ শিল্পী বাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন রান্নাবান্না করে ও টিভি দেখে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাধ্যমেই দেশে করোনা ছড়িয়েছে উল্লেখ করে শিল্পী বলেন, ‘অবশ্যই তারা ঠিক করেনি এটা। তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষও প্রথমে এটা গুরুত্ব দেয়নি। ১০ দিনের ছুটি পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে যারা বোকার মতো গ্রামে গেছেন, তারা পরে টের পাবেন দেশের মানুষের কত বড় ক্ষতিটা করেছেন!’ শিল্পী আরও যোগ করেন, ‘গ্রামের অনেকেই জানে না, বোঝে নাÑ করোনা আসলে কি, এটা কতটা ভয়ঙ্কর। অনেকে তো টিভিই দেখে না! ফলে গুরুত্বও বোঝে না। এই হলো অবস্থা।’ তবে শিল্পীর গ্রামে এখনও কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। এমনকি তাদের গ্রামে সম্প্রতি বিদেশ ফেরতও কেউ নেই। গোমূত্র পান বা থানকুনি পাতা খাওয়া নয়, বরং সচেতনতা ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাই হচ্ছে বাঁচার উপায়, এমনটাই অভিমত শিল্পীর। তিনি মনে করেন, অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে মাত্র ৫০০ টাকা নয়, ওই ব্যক্তিকে আরও বেশি টাকা জরিমানা করা উচিত। তাছাড়া এদেশের মানুষ বেশি মাত্রায় ধর্ম ভীরু ও ধর্ম সম্পর্কে কম জ্ঞানের অধিকারী, তাই তাদের বুঝিয়েও মসজিদে যাওয়া আটকানো খুবই মুশকিল। করোনা সন্দেহে হাসপাতালে গেলে ডাক্তারদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকার ও করোনার হাসপাতাল নির্মাণে বাধা দেয়া প্রসঙ্গে শিল্পীর ভাষ্য, ‘এগুলো মোটেও ঠিক কাজ নয় এবং খুবই দুঃখজনক। এখন সিজন চেঞ্জ হচ্ছে। জ্বর-কাশি-সর্দি হলেই করোনা সন্দেহে ভয় পেয়ে হাসপাতালে ছোটাও ঠিক নয়। ভেবেচিন্তে কাজ করা উচিত। আর হাসপাতাল নির্মাণে যারা বাধা দিয়েছেন, তাদের বোঝা উচিত এটা তাদের ভালর জন্যই বানানো হচ্ছে।’
×