ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর স্থগিত

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ১১ এপ্রিল ২০২০

অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর স্থগিত

মিথুন আশরাফ ॥ যেমনটি অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক টিম পেইন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তেমনটিই শেষ পর্যন্ত হলো। করোনাভাইরাসের প্রভাবে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর স্থগিত হয়ে গেল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড (সিএ) আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে একের পর এক সিরিজ বাতিল বা স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ড সফর স্থগিত করে দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে জুনে আসার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ১১ জুন চট্টগ্রামে প্রথম এবং ১৯ জুন মিরপুরে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হওয়ার কথা ছিল। দুই মাস এখনও বাকি থাকলেও দুই বোর্ড আলোচনা করে শেষপর্যন্ত দুই ম্যাচের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের টেস্ট সিরিজ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিসিবি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা জানিয়েছেও। এ নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন বলেছেন, ‘এটা খেলোয়াড়, সমর্থক ও দুই দলের জন্যই হতাশার। কোভিড-১৯ মহামারী রূপ নেয়ায় এখন যে বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে বিসিবি ও সিএ (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া) ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে এটাই এখন সবচেয়ে সুবুদ্ধিপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত। আশা করি শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আমরা আশাকরি, নিকট ভবিষ্যতে সুবিধাজনক সময়ে সিরিজটা আয়োজন করতে পারব। অস্ট্রেলিয়া বোর্ড আগেও আমাদের সহযোগিতা করেছে। ভবিষ্যতেও সিএর সঙ্গে কাজ করে যাবে বিসিবি।’ সিএ এর প্রধান নির্বাহী কেভিন রবার্টস বলেছেন, ?‘আমরা জানি বৈশ্বিক ক্রিকেটের ক্যালেন্ডারটা খুব ব্যস্ত। আমরা সবই করার চেষ্টা করব যাতে বাংলাদেশকে দেয়া প্রতিশ্রুতিকে সম্মান জানানো হয়। আলোচনার ভিত্তিতে একটি তারিখ ঠিক করে সে অনুযায়ী কাজ করব।’ কিন্তু সিরিজটি কী আদৌ হবে? এই প্রশ্নই এখন উঠছে। দুই দলের সামনে এ বছর কোন সুযোগ নেই। যে সময় বাংলাদেশের সুযোগ আছে। সেই সময় অস্ট্রেলিয়া ব্যস্ত থাকবে। আবার যখন অস্ট্রেলিয়ার সুযোগ আছে। তখন বাংলাদেশ সিরিজ খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়া দলের কোন খেলা নেই। কিন্তু এই সময়ে যদি স্বাভাবিক হয়ে আসে সব, খেলা, সিরিজ চলে; তাহলে শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের পর সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ আছে বাংলাদেশের। এশিয়া কাপ শেষে অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ শেষে আছে অক্টোবর-নবেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপ খেলা। ডিসেম্বরে আবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ। এ বছরে অস্ট্রেলিয়ার জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন খেলা না থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সিরিজ খেলা হচ্ছে না। বাংলাদেশের যে খেলা আছে। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়াও মহাব্যস্ত হয়ে পড়বে। অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারত এবং অক্টোবর-নবেম্বরে নিজ দেশে টি২০ বিশ্বকাপের পর আফগানিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে খেলা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। এ বছর আর দুই দলের মধ্যকার খেলার সুযোগ নেই। আগামী বছর দুই দলের মার্চের শেষদিকে, এপ্রিল ও মে মাসে এবং আগস্ট, সেপ্টেম্বরে ফাঁকা সময় আছে। এই সময়গুলোতে খেলা যায়। কিন্তু মার্চ ছাড়া আর কী টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচগুলো খেলার কোন সুযোগ থাকছে? জুনেই ইংল্যান্ডে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হওয়ার কথা। আইসিসি যদি কোন এক নিয়ম বের করে এরমধ্যে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ করার চেষ্টা করে, তাহলে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার এ সিরিজটি আর নাও হতে পারে। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এত ম্যাচ নিশ্চয়ই হবে। আর ফাইনাল হতে হলেতো বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার খেলেই পয়েন্টের হিসেব মজবুত করার চেষ্টা করতে হবে। সে হিসেবে ফাইনাল আরও পড়ে হবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচগুলোও হবে। তখন ক্রিকেট ক্যালেন্ডারেই ব্যাপাক পরিবর্তন আনতে হবে। মার্চ ছাড়া এপ্রিল, মে তে যদি আইপিএল হয়, তাহলে অস্ট্রেলিয়ানরা নিশ্চয়ই ওই সময়টাতে আইপিএলই খেলতে চাইবে। আইপিএল খেলে বাংলাদেশে এসে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলে যেতে পারে অস্ট্রেলিয়ানরা। যতদূর জানা যাচ্ছে, সেই সময়ের হিসেবই করা হচ্ছে। সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ানরা উপমহাদেশে খেলতে আসলে বিশাল প্রস্তুতিও নেয়। তাদের জন্য আইপিএলে খেলে প্রস্তুতি নেয়া, সেরা প্রস্তুতিই হবে। তা না হলে সিরিজ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানরাও ভাববে! যদিও আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ এ দুই টেস্ট। তাই অস্ট্রেলিয়াকে খেলতেই হবে। কিন্তু আপাতত দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ স্থগিত করা হয়েছে। এ সিরিজ নিয়ে এরআগে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক টিম পেইন সিরিজ না হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার মনে হয় না বাংলাদেশ সফর হবে, বিশেষ করে জুন মাসে। কিন্তু এখানে দুইটি টেস্ট খেলা হবে এবং তা না হলে আমরা খুব মিস করবো।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘খুব সম্ভবত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সব খেলা শেষ করার জন্য টানা পাঁচ সপ্তাহও মাঠে থাকা লাগতে পারে খেলোয়াড়দের। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলা এবং শিরোপা জেতা এখন লক্ষ্য। আমার মনে হয়, সব ক্রিকেটারই চাইবে, যে কোনোভাবেই হোক এটি (টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ) শেষ করতে। কিন্তু তা যদি না হয়, বুঝতে হবে, বিশ্বে এই মুহূর্তে আরও বড় কিছু ইস্যু আছে। সেই ইস্যুর চেয়ে কিছু টেস্ট ম্যাচ মিস করা আমাদের খুব একটা ভোগাবে না।’ পেইন টেস্ট চ্যাম্পিয়ন শেষ করতে চান। সব বাদ দিয়ে সব ঠিক হওয়ার পর এমনও হতে পারে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচগুলোতে শেষ করতে টানা মাঠে থাকতে হতে পারে। তার মানে দ্বিপক্ষীয় যে সিরিজগুলো আছে, সেগুলো আইসিসি আলোচনা করে আপাতত একটু স্থগিত রেখে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের একটা সূচী তৈরি করবে। যাদের সঙ্গে যাদের খেলা ছিল, সেগুলো দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবে। তা হলে তো ভালই হয়। দুটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ। আর এখানেই বাংলাদেশের স্বস্তি জড়িয়ে থাকছে। অস্ট্রেলিয়া এ মুহূর্তে দুটি টেস্ট খেলতে আসছে না। তবে সময় সুযোগ বুঝে পরে হলেও খেলতে হবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে থাকতে হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শুধু নয়, যাদের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলা আছে; তা খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। তা না হলে পয়েন্ট হারাবে। চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে তখন ছিটকে পড়ে যেতে পারে।
×