ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হজ নিয়ে সংশয় কাটেনি, নিবন্ধনের সময় ফের বাড়ল ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত

প্রকাশিত: ১১:০৭, ৯ এপ্রিল ২০২০

হজ নিয়ে সংশয় কাটেনি, নিবন্ধনের সময় ফের বাড়ল ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত

আজাদ সুলায়মান ॥ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩০ জুলাই হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জুন থেকেই হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এখন হাতে যে সময় রয়েছে এবং চলতি মাসে যদি হজের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করা যায়- তাহলে বাকি সময়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ করতে পারবে না সৌদি আরব। এ ধরনের অজানা শঙ্কায় পেয়ে বসেছে এবারের হজে। তারপরও শেষ মুহূর্তে হজের ঘোষণা আসলে তাড়াহুড়ো করে যাতে তাতে অংশ নিতে পারে সে ব্যবস্থাও করে রাখছে ঢাকা। ধর্ম মন্ত্রণালয়, হাব ও যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে এ ধরনের আভাসই মিলেছে। তাদেরও আশঙ্কা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনার কারণে চলতি বছর হজ হবে কি না এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যদিও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ আব্দুল্লাহ এখনও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন- শেষ মুহূর্তে দু মাস সময় পেলেও- হজ হয়ে যেতে পারে। আমরা আমাদের সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রেখেছি। এখন হজ নির্ভর করছে শুধুই সৌদি আরবের ওপর। তারা কি সিদ্ধান্ত দেয়-সেটার দিকে তাকিয়ে আছি। তবে মনে হয় না আগামী দু চারদিনের মধ্যে খুব ইতিবাচক কোন খবর পাব। তারপরও আমি বলতে চাই- আপাতত হজ বাতিলের সপক্ষে কিছু বলতে পারব না। সেজন্যই হজে গমনেচ্ছুদের নিবন্ধনের সময় ফের বাড়ল। নিবন্ধনের সময় আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আগের ঘোষণা অনুযায়ী হজযাত্রী নিবন্ধনের শেষ সময় ছিল বুধবার। উল্লখ্য, গত ১ মার্চ থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে হজ নিবন্ধনের সময়সীমা ১৫ মার্চ পর্যন্ত বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। নিবন্ধনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না মানুষ। এরপর ১২ মার্চ তা ২৫ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। পরে ২৫ মার্চ ৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। সর্বশেষ আরও এক দফা বাড়ানো হয় এ সীমা। এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালে হজ পালনে ইচ্ছুক, নিবন্ধনের জন্য পাসপোর্ট জমা প্রদানকারী অনেকে সরকারী ছুটির কারণে ব্যাংক থেকে নিবন্ধন ভাউচার গ্রহণ করতে পারেননি। ইতোমধ্যে নিবন্ধন ভাউচার গ্রহণকারী অনেকে টাকা জমা প্রদান করতে না পারায় নিবন্ধন করতে পারেননি। এমতাবস্থায় ২০২০ সালে সরকারী ও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নিবন্ধনের সুবিধার্থে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। এতে আরও বলা হয়, সরকারী ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত সব প্রাক-নিবন্ধিত ব্যক্তিসহ হজে গমনেচ্ছু যেকোন ব্যক্তি নতুনভাবে একইসঙ্গে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন করতে পারবেন। অন্যদিকে বেসরকারী ব্যবস্থাপনার প্রাক-নিবন্ধনের সর্বশেষ ক্রমিক ৬ লাখ ৭২ হাজার ১৯৯ পর্যন্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ‘আগে আসলে আগে নিবন্ধন করা হবে’ ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের সুবিধার্থে আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন কেন্দ্রে পাসপোর্ট দাখিল করতে হবে। একইভাবে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা শুধু এক লাখ ৫১ হাজার ৯৯০ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন করবেন। আপাতত কোন অবস্থাতেই এর অতিরিক্ত টাকা জমা দেবেন না। কোন এজেন্সি নিবন্ধনের জন্য এর অতিরিক্ত টাকা দাবি করলে তাৎক্ষণিকভাবে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় নিয়া অর্থ কোন অবস্থাতেই এ পর্যায়ে হজ কার্যক্রম বাবদ বাংলাদেশে ব্যয় করা যাবে না এবং সৌদি আরবেও পাঠানো যাবে না। ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপকদের এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য অনুরোধ করেছে। এদিকে হাব সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব গত সপ্তাহে ঘোষণা দিয়ে হজের কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখলেও ঢাকায় ঠিকই রেজিস্ট্রেশন কাজ চলছে। করোনার কারণে হজের কোটা পূরণ করতে সরকার দ্বিতীয় দফা নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েছে। যদিও ভয়ে হজ গমনেচ্ছুকরা নিবন্ধন করছেন না। এছাড়া, ব্যাংকগুলোরও বিভিন্ন শাখা বন্ধ থাকায় এজেন্সি মালিকরা নিজেদের এ্যাকাউন্ট থেকে নিবন্ধনের টাকা ট্রান্সফারও করতে পারছেন না। মানি একচেইঞ্জ বন্ধ থাকায় টাকা পাঠাতে পারছেন না প্রবাসীরা। ই-পাসপোর্ট জটিলতা ও যানবাহন বন্ধ থাকায় গ্রামে-গঞ্জে থেকে সময়মতো পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারছেন না অনেকেই। তাই হজের নিবন্ধনও করছেন না। এ সম্পর্কে আল মাকাম ট্রাভেলসের মোনাজ্জেম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, গত বছরের এই সময়ে হজযাত্রীর ভিড় ছিল। এবার হজযাত্রী সংগ্রহেই হিমশিম খাচ্ছি। এবার করোনায় হজের অনিশ্চয়তার কারণে অনেকেই নিবন্ধন করছেন না। আর মাঠ পর্যায়ের অপেক্ষমাণ হজগমনেচ্ছুকরা জানান, এবারের হজ নিয়ে তারা বেশ শঙ্কায় আছেন। সারিয়াকান্দির শামসুল আলম জানান, তিনি নিয়ত করেছেন মাকে নিয়ে হজে যাবেন। সেভাবে প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু এখনও সৌদি আরব থেকে কোন ধরনের সম্ভাবনার খবর আসছে না । সৌদি সরকারই আগে ওমরাহ বন্ধ করেছে। এখনও হজের সব ধরনের কাজ স্থগিত রেখেছে। একই অবস্থা মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের। তিনি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার নাঙ্গলমোড়া গ্রামে। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় এই বছর হজ পালন করতে যাওয়ার কথা সেলিম উদ্দিনের। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু করোনার কারণে হঠাৎ বেঁকে বসলেন তিনি। হজ আদৌ হবে কি না, হলেও কী অবস্থা হবে, টাকা-পয়সা দিয়ে যদি শেষ পর্যন্ত যেতে না পারেন, এই আশঙ্কায় চূড়ান্ত নিবন্ধন করবেন না বলে কদিন আগে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। তার মতোই অবস্থা কুয়েত প্রবাসী সাহাবুল আলমের। দেশে ফিরে পুরো পরিবার নিয়ে হজে যাওয়ার কথা ছিল তার। করোনার কারণে দেশে আসতে পারছেন না, পরিবারের সদস্যদেরও নিয়ে যেতে পারছেন না। এ কারণে চূড়ান্ত নিবন্ধন করেননি তারা।
×