ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে থাকুন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন

সরকারী নির্দেশনাই রক্ষাকবচ

প্রকাশিত: ১১:০৬, ৯ এপ্রিল ২০২০

সরকারী নির্দেশনাই রক্ষাকবচ

নিখিল মানখিন ॥ সরকারী নির্দেশনা মেনে ‘ঘরে অবস্থান’ এবং ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখতে পারলে এখনও দেশ করোনার মহামারী থেকে রক্ষা পেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণের তৃতীয় পর্যায় ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ এর ধরন গুচ্ছ আকার অতিক্রম করে বিচ্ছিন্ন এলাকায় বিস্তার লাভ করেছে। এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরী। অনেক মানুষের বিদ্যমান ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বন্ধ না হলে সামনে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ মুহূর্ত অপেক্ষা করছে। করোনার সংক্রমণ কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মধ্যে থামিয়ে দিতে না পারলে করোনার মহামারী থেকে রেহাই পাবে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মতো বর্তমান পরিস্থিতিতে পড়েও করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সফলতার মুখ দেখেছে বিশ্বের অনেক দেশ। আবার পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার পরও ইউরোপের দেশগুলো সঠিক সময়ে উদ্যোগ গ্রহণে উদাসীন থাকার মূল্য দিচ্ছে। মহামারীর হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের হাতে খুবই কম সময় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি একটি বৈশি^ক মহামারী। এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো অসহায় হয়ে পড়ছে। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশও আতঙ্কমুক্ত থাকতে পারে না। চীনে মহামারী এবং ইউরোপের দেশগুলোতে করোনার প্রাথমিক সংক্রমণের সময় বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইন শতভাগ নিশ্চিত করতে না পারলেও করোনা সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন করার কাজটি অনেক আগে শুরু করে বাংলাদেশ। আর দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর করোনা প্রতিরোধে গ্রহণ করতে থাকে একের পর এক কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দরগুলোতে বিদেশ ফেরতদের স্ক্রিনিং কার্যক্রম, করোনার নমুনা পরীক্ষা, হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে বাধ্যকরণ এবং জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৮ মার্চ থেকে ২৪ মার্চের মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল, সভা-সমাবেশ, কমিউনিটি সেন্টার এবং সব ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার সরকারী ঘোষণা দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটসহ স্থল ও সমুদ্রসমূহের প্রবেশপথ। ইতোমধ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে দু’দফা। ছুটির সময়ে অফিস-আদালত থেকে গণপরিবহন, সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, জরুরী সেবা এই বন্ধের বাইরে থাকছে। জনগণকে নিজ নিজ বাসায় ঢুকিয়ে দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সর্বশেষ ৩১ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সাধারণ মানুষের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সরকার সামাজিক দূরত্ব তৈরির উদ্দেশ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। ছুটি পেয়ে মানুষ দল বেঁধে ঢাকা ছেড়েছে। ফেরিঘাট, রেলস্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডের ভিড় গণজমায়েতের চেহারা পেয়েছিল। ঢাকা শহরে গাড়ি চলতে শুরু করেছে, অলিগলিতে মানুষের ভিড়। দেশের কোথাও কোথাও হাটবাজারে জনসমাগম হচ্ছে। ত্রাণ বা খাদ্যসহায়তা নিতেও মানুষ ভিড় করছে। এসব সংক্রমণ প্রতিরোধের অন্তরায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এখানে মানুষের আচরণের বিষয়টি যেমন আছে, সরকারী কাজে সমন্বয়হীতার বিষয়টিও আছে। অন্য চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা, অবকাঠামোগত, সরঞ্জাম সরবরাহে ও জনবলের বিষয়ে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করাটাও কঠিন হয়ে পড়ছে, যা করোনা সংক্রমণের উর্বর পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জনকণ্ঠকে জানান, এখন সংক্রমণ পরিস্থিতির ক্রান্তিকাল। দেশ সংক্রমণের তৃতীয় স্তর থেকে চতুর্থ স্তরের দিকে যাচ্ছে, এটা বলা যায়। ভয়াবহ পরিস্থিতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। সরকার নির্দেশিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। ঘরে অবস্থান করতেই হবে। নিজেকে, নিজের পরিবারকে এবং দেশবাসীকে বাঁচাতে হলে তা করতেই হবে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের বিস্তার থামাতে না পারলে সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। দেশের মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে তার বিস্তার বৃদ্ধি করছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনভাবেই আগামী ১৫ দিন আমরা যেন কেউই অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হই। আর একান্তই যদি জরুরী কাজে বের হতেই হয় তাহলে মুখে মাস্ক ব্যবহার না করে কেউই ঘরের বাইরে বের না হই সে ব্যাপারে আমাদের সবারই সচেতন থাকতে হবে । করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইইডিসিআর’র সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোস্তাক হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারী নির্দেশনা মেনে ‘ঘরে অবস্থান’ এবং ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখতে পারলে এখনও দেশ করোনার মহামারী থেকে রক্ষা পেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত গুচ্ছ আকারে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় পর্যায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঘটনা ঘটছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ব্যাপকতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে শত উদ্যোগ নিয়েও করোনার মহামারী থেকে রেহাই পাবে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মতো বর্তমান পরিস্থিতিতে পড়েও করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সফলতার মুখ দেখেছে বিশে^র অনেক দেশ। তবে আমাদের হাতে রয়েছে খুবই কম সময়। তিনি আরও বলেন, মানুষের আচরণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশবাসীর বিদ্যমান ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বন্ধ না হলে সামনে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ মুহূর্ত অপেক্ষা করছে। ড. মোস্তাক হোসেন অভিযোগ করেন, করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও এলাকাবাসীর সহযোগিতা মিলছে না। করোনা টেস্ট করালেই কেউ করোনা রোগী হয়ে যায় না। লকডাউনের ভয় পেয়ে অনেক এলাকায় করোনার পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহে বাধা দেয়া হচ্ছে। ফলে নমুনা পরীক্ষার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নমুনা সংগ্রহ করতে দেখলেই সেই বাড়ি বা এলাকা লকডাউন করে দেয়া ঠিক হবে না। এতে আতঙ্কিত হয়ে নমুনা সংগ্রহে বাধা দিয়ে থাকে এলাকাবাসী। আইইডিসিআর’র চূড়ান্ত রিপোর্টে পজিটিভ এলেই লকডাউনের বিষয়টি ভাবা উচিত। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ বলেন, করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে সংস্পর্শের মাধ্যমে। আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের সংস্পর্শ এড়ানোই তাই নতুন সংক্রমণ ঠেকানোর একমাত্র উপায়। সংক্রমণ থামাতে বা অন্তত কমাতে আক্রান্ত এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা খুবই কার্যকর। চীনের সাফল্যের মূলে এই পদ্ধতি। সিঙ্গাপুর এগিয়ে গেছে আরও এক ধাপ। সংক্রমণের উৎস তারা খুঁজে বের করেছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কারা সংস্পর্শে এসেছে, তাদেরও তালিকাভুক্ত করে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। করোনা প্রতিরোধে সফলতা পেয়েছে এমন দেশগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তুধেয়ে আসা করোনার মহামারী পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারছেন না দেশের অনেক মানুষ। ঘরে অবস্থান করার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতেই হবে। অন্যথায় দেশের করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবেই। বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, দেশে সামনে কঠিন সময় আসছে। এখনই পুরো দেশে লকডাউন করা জরুরী। এখনই পুরো দেশ লকডাউন না করা হলে এই ভাইরাস আগামী ১০ দিনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে একে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (ব্যাপক জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণ) বলতে বাধা নেই। তবে মীরজাদী সেব্রিনা বলেছেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি চতুর্থ স্তরে কি না, তা কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ধরন গুচ্ছ থেকে অনির্দিষ্ট আকার হয়ে গেছে ॥ রাজধানীর টোলারবাগ ও বাসাবো, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর (শিবচর) ও গাইবান্ধা (সাদুলল্লাপুর) -এই পাঁচ এলাকায় গুচ্ছ আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে কয়েকদিন আগে আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছিলেন। বর্তমানে ২০টির বেশি জেলায় রোগী শনাক্ত হয়েছে সংক্রমণ এখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। কত মানুষ আক্রান্ত, তার সঠিক হিসাব এখনও জানা যায়নি। কারণ, নমুনা পরীক্ষার পরিধি ও সংখ্যা এখনও খুবই কম। দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা এখনও হাজারের নিচে রয়ে গেছে। ৮ এপ্রিল দেশের ১৬ ল্যাবরেটরিতে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৮১টি। বর্তমানে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যার শতকরা ৬ শতাংশ করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বিশ্বের করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে এক হাজার নমুনা পরীক্ষা করিয়ে ৫ থেকে ১০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়ার জন্য ওই সব দেশে করোনার সামান্য উপসর্গ পাওয়া গেলেই পরীক্ষার আওতায় আনার ব্যবস্থা করেছে, এখনও করছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের পর্যায়ে দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও অনেকগুণ বৃদ্ধি করা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ পর্যন্ত ঢাকা সিটিতে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়া এলাকাগুলোর দিকে তাকালে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রকৃত ধরন জানা গেছে। ঢাকা সিটিতে কয়েকদিন আগেও টোলারবাগ ও বাসাবোকে করোনা সংক্রমণের গুচ্ছ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এখন আদাবরে ১ জন, মোহাম্মদপুরে ৬ জন, বসিলায় ১ জন, ধানম-িতে ৯ জন, ঝিগাতলায় ৩ জন, সেন্ট্রাল রোডে ১ জন, গ্রীনরোডে ২ জন, শাহবাগে ১ জন, বুয়েট এলাকায় ১ জন, হাজারীবাগে ১ জন, ঊর্দু রোডে ১ জন, চকবাজারে ২ জন, লালবাগে ৫ জন, বাবুবাজারে ২ জন, লক্ষ্মীবাজারে ১ জন, উত্তরায় ৫ জন, গুলশানে ৬ জন, মহাখালীতে ২ জন, তেজগাঁও ২ জন, কাজীপাড়ায় ১ জন, মিরপুর-১০ এলাকায় ২ জন, মিরপুর ১১ এলাকায় ২ জন, মিরপুর ১৩ এলাকায় ১ জন, মিরপুর ১ এলাকায় ৮ জন এবং টোলারবাগ (উত্তর টোলারবাগসহ) ১০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগী শনাক্তের অনেক দিন পরও অনেক করোনা রোগীর কন্টাক্ট ট্রেসিং খুঁজে পায়নি (বাহক জানতে পারেনি) আইইডিসিআর। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চারটি ধাপ ॥ করোনা সংক্রমণের বিভিন্ন স্তর উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এই রোগ সংক্রমণের চারটি স্তর রয়েছে। প্রথম পর্যায় বিদেশ থেকে রোগের সংক্রমণ। এখানে সংক্রামিত দেশগুলো থেকে এই ধরনের রোগী দেশে প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে যারা বিদেশ ভ্রমণ করেছেন কেবল তাদেরই ইতিবাচক পরীক্ষা করানো হয়। দ্বিতীয় পর্যায় স্থানীয় সংক্রমণ। এখানে আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ হয়। উদাহরণস্বরূপ, যারা বিদেশ ভ্রমণ করেছেন তাদের আত্মীয় বা পরিচিতজনের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। স্থানীয় সংক্রমণে কম লোক আক্রান্ত হয়। কেননা ততক্ষণে ভাইরাসটির উৎস জানা যায়। ফলে এর সঙ্গে লড়াইটা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। তৃতীয় পর্যায় কমিউনিটি সংক্রমণ। এই স্তরে রোগ কোন সম্প্রদায়গত ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং বৃহত্তর অঞ্চলের মানুষ সংক্রামিত হয়। সম্প্রদায়ের সংক্রমণ তখনই হয় যখন কোন রোগী কোন সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা সত্ত্বেও বা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে কোন একটি দেশে সফর না করা সত্ত্বেও তার শরীরে ওই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। এই পর্যায়ে, সংক্রমিতদের শরীরে কোথা থেকে এই ভাইরাস এসেছে তা শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। চতুর্থ পর্যায় যখন মহামারী। এটি সবচেয়ে খারাপ পর্যায়, যখন এই রোগটি কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়াই মহামারীর আকার ধারণ করে। জনগণের অংশগ্রহণ দরকার ॥ বিবিসি’র প্রতিবেদন ॥ করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের পার্শ্ববর্তী দেশ হয়েও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সফল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। দেশগুলো হলো সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ানসহ কয়েকটি দেশ। কী পদক্ষেপ নিয়েছিল তারা, কীভাবে মোকাবেলা করেছে এই ভাইরাসকে-বিবিসির এক প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে। জনগণের পাশে থাকা ॥ কর্মকৌশল বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে জনগণের নিবিড় সম্পর্ক থাকতে হয়। করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রেও একথা সত্য। সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এই কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করেছে। আতঙ্কিত করার বদলে প্রতিনিয়ত মানুষকে আশ্বস্ত করেছে। নাগরিকরাও সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করার মাধ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করেছে। পারস্পরিক এই বোঝাপড়ার কারণেই করোনা ওই দেশগুলোতে ঝেঁকে বসতে পারেনি। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া ॥ প্রথমত বিষয়টাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল এই চার দেশ। পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোও গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে, কিন্তু সময় চলে যাওয়ার পর। পুরোপুরি সংক্রমিত হওয়ার আগেই যদি করোনা পরীক্ষার ব্যাপক প্রস্তুতি রাখা যায় এবং আক্রান্তদের দ্রুত আলাদা করে ফেলা যায় তাহলে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব। পরীক্ষাগুলো সাশ্রয়ী করা ॥ মাত্র কয়েকটি সংক্রমণের ঘটনা ঘটার পরই দক্ষিণ কোরিয়া কোভিড-১৯ পরীক্ষার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। কম রোগী শনাক্ত হওয়ার পরও তারা প্রায় তিন লাখ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন দেশটি বিনামূল্যে ১০ হাজার মানুষের করোনা পরীক্ষা করছে। এই উদ্যোগের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও দেশটির প্রশংসা করেছে। শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে পৃথক করা ॥ শুধু পরীক্ষা করাই যথেষ্ট নয়, শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথক করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তি এতদিন কার সঙ্গে মিশেছে তাদের খুঁজে বের করে পরীক্ষার আওতায় আনা। শুরুর দিকে অনেক দেশই এই কাজটি ঠিকভাবে করতে পারেনি। এশিয়ার এই চারটি দেশ তা ভালভাবে করতে পেরেছে। সিঙ্গাপুরে যদি কাউকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় তাহলে তার হাতে ইলেক্ট্রনিক ব্রেসলেট পরিয়ে দেয়া হয় তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য।
×