ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ পবিত্র শব-ই বরাত

প্রকাশিত: ১১:০৩, ৯ এপ্রিল ২০২০

আজ পবিত্র শব-ই বরাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র শব-ই-বরাত আজ বৃহস্পতিবার। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এটি ভাগ্য রজনী হিসেবেও পরিচিত। আজ দিবাগত যে রাত, তা ধর্মীয়ভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র এই রজনী লাইলাতুল বরাত নামে পরিচিত। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি ও অধিক পুণ্যলাভের আশায় এই রাতে মুসলিম সম্প্রদায় রাতভর ইবাবদ বন্দেগি করে থাকেন। তবে সারাবিশ্বের করোনাভাইরাস মহামারী আকারে রূপ নেয়ায় এবার পুণ্যময় এই রজনীতে ভিন্ন আঙ্গিকে ইবাদত-বন্দেগি করবেন দেশের মুসলমানরা। ইতোমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শব-ই-বরাতে ঘরে বসে ইবাদত-বন্দেগি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি রোধকল্পে সরকার সকল সরকারী-বেসরকারী অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণকে ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। সব ধরনের সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয় জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সকলকে হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করতে কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয় এই সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ঘোষিত নির্দেশনা মান্য করে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নিজ নিজ বাসস্থানে বসে পবিত্র শব-ই-বরাতের ইবাদত যথাযথ মর্যাদায় আদায় করার জন্য সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে ঘরে বসে আদায় করা হলেও মুসলমানরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর যথাযথ মর্যাদার মধ্যে দিয়েই এই রজনী অতিবাহিত করবে। এবার প্রথম এই দিবসে ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে সব ধরনের কর্মসূচী স্থগিত করা হয়েছে। তবে গ্রাম বাংলায় এই রজনী উপলক্ষে একসঙ্গে বসে হালুয়া রুটি খাওয়ার রীতি প্রচলন রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। বিশ্বের মুসলমানরা এদিন রাতে আল্লাহর নৈকট্য ও করুণা লাভের আশায় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, প্রতিবছর শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতকে লাইলাতুল বরাত হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মুসলমানদের জীবনে আল্লাহর যে তিনটি রাতকে শ্রেষ্ঠত্ব মনে করা হয় শব-ই-বরাত তার মধ্যে একটি। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা বা আত্মসংযমের প্রস্তুতি হিসেবেই রাতটি মুসলমানদের কাছে এসে থাকে। শব-ই-বরাতের রাতে ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর দরবারে পানাহ চাওয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় রমজানের এ প্রস্তুতি। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালা এ রাতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করে থাকেন। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে বরকতময় এ রাতে মুমিনদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। আল্লাহ তাঁর মাখলুকাতের দিকে বিশেষ নজরে তাকান। তবে কোন কোন ইসলামী চিন্তাবিদ বলেন, এই রাতের বিষয়ে কোরানে সরাসরি কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। অনেকে সূরা আদ-দুখান এর ৩ নং আয়াতে উল্লেখিত ‘কোরান অবতীর্ণের বরকতময় রাতকে’ শব-ই-বরাত হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। এতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মোবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এই রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (সূরা : ৪৪-দুখান: আয়াত ৩-৪।) অন্যরা সূরা কদরের ১ম আয়াত অনুসারে ‘কোরান অবতীর্ণের বরকতময় রাত’ দ্বারা শব-ই-কদরকে বোঝানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এতে বলা হয়েছে নিশ্চয়ই আমি একে (কোরানকে) লাইলাতুল কদরে (বাংলায় : মহিমান্বিত রজনীতে) অবতীর্ণ করেছি সূরা কদর : আয়াত ১। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেন, সিয়াহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিসগ্রন্থের কোন কোন হাদিসে এই রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও এই রাতের বিশেষত্বের উল্লেখ পাওয়া যায়। এসব হাদিস শাস্ত্রে ‘শব-ই-বরাত’ বলতে যে পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো ‘নিসফ শাবান’ বা ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ তথা ‘শাবান মাসের মধ্য রজনী’। একটি হাদিসে বলা হয়েছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, মুহাম্মাদ (সঃ) এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা পালন করতেন। শাবান মাসের রোজা ছিল তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এমাসের প্রথম থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এবং কখনও কখনও প্রায় পুরো শাবান মাসই তিনি নফল সিয়াম পালন করতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ মাসে রাব্বুল আলামীনের কাছে মানুষের কর্ম ওঠানো হয়। আর আমি ভালবাসি যে, আমার রোজা রাখা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক’।
×