ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৭৬ দিন পর লকডাউন প্রত্যাহার বুধবার বর্নিল আলোয় সেজে ওঠে এ নগরী

ছন্দে ফিরল উহান

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ৯ এপ্রিল ২০২০

ছন্দে ফিরল উহান

করোনাভাইরাসের কারণে ৭৬ দিন পর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই উহান শহর থেকেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। এরপর ২৩ জানুয়ারি শহর লকডাউন করে দেয় চীন। বুধবার লকডাউন তুলে নেয়া উপলক্ষে শহরটি বর্নিল আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়। খুব শীঘ্রই সব সড়ক ও রেলযোগাযোগ ব্যবস্থাও চালু করা হবে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার লকডাউন প্রত্যাহারের পর থেকে প্রায় দুই শ’ ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার সিডিউল রয়েছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও পিপলস ডেইলি অনলাইনের। চীনের মূলভূখণ্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ফের কিছুটা বাড়ায় সংক্রমণের আরেকটি প্রবাহ শুরু হতে পারে আশঙ্কায় শুধু সুস্থ লোকজনকেই শহর ছাড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। দেশের অন্যান্য অংশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে জানুয়ারির শেষ দিকে এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার শহরটি অবরুদ্ধ করে দেয় চীন। সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উহানের ৫০ হাজারেরও বেশি লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল এবং এতে আড়াই হাজারেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি নতুন আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে আসায় আরোপ করা কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু হয়। হুবেই প্রদেশের এই রাজধানী শহরে গত ২১ দিনে নতুন নিশ্চিত সংক্রমণের মাত্র তিনটি ঘটনা ঘটে। বুধবার প্রায় ৫৫ হাজার লোক ট্রেনযোগে উহান ছাড়েন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উহানের তিয়ানহে বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি ভ্রমণকারী শহরটি ছেড়েছেন। তবে উহান থেকে রাজধানী বেজিং ও বিদেশগামী ফ্লাইট চলাচল এখনও শুরু হয়নি। শিয়াংজিয়াং শহরে যাওয়ার উদ্দেশে উহানের হানকৌ রেলস্টেশনে সুটকেস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিক লিউ শিয়াওমিন বলেন, ‘আজ আমি বাড়িতে যাচ্ছি, আমি খুব খুশি।’ তবে অতিপ্রয়োজন ছাড়া উহানের বাসিন্দাদের তাদের আবাসিক এলাকা, শহর ও এমনকি প্রদেশও না ছাড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। উহান থেকে বেজিংয়ে যাওয়া লোকজনকে দুই রাউন্ড ভাইরাস পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কোন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়নি এমন ভাইরাস বাহক ও বিদেশ থেকে আসা সংক্রমিতদের মাধ্যমে কোন সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে যায় কিনা এমন উদ্বেগ থেকে কঠোর স্ক্রিনিং প্রটোকল মেনে চলছে চীন। লক্ষণ প্রকাশ হয়নি এমন আক্রান্ত ও বিদেশ ফেরত আক্রান্তরাই এখন চীনের প্রধান উদ্বেগের বিষয়। বিদেশ ভ্রমণের সময় আক্রান্ত হওয়া লোকজন ফিরে আসতে থাকায় এবং লক্ষণ প্রকাশ হয়নি এমন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা চারগুণেরও বেশি হওয়ায় ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে চীনের মূলভূখণ্ডে নতুন করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। একদিন আগেও নিশ্চিত নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ জন থাকলেও মঙ্গলবার সংখ্যাটি ৬২ জনে দাঁড়ায়। আর যাদের লক্ষণ প্রকাশ পায়নি কিন্তু ভাইরাসটি বহন করছেন এমন লোকের সংখ্যা একদিন আগে ৩০ জন থাকলেও তা বেড়ে ১৩৭ জনে দাঁড়ায়। এদের মধ্যে বিদেশাগত ১০২ জন। ভাইরাস বহনকারীদের নিশ্চিত করোনাভাইরাস সংক্রমিতদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করে না চীনের কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের মধ্যে জ্বর ও কাশির মতো লক্ষণ প্রকাশ পেলে তখন তাদেরও সংক্রমিত বলে ধরা হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত চীনে ভাইরাসের বাহক এক হাজার ৯৫ জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৩৫৮ জন বিদেশ ফেরত। মঙ্গলবার পর্যন্ত চীনের মূলভূখণ্ডে মোট করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৮০২ জন এবং মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৩৩৩ জন ছিল বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।
×