ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রয়াদেশ বাতিল না করতে ৯ সংগঠনের বিবৃতি

প্রকাশিত: ০৭:২২, ৮ এপ্রিল ২০২০

ক্রয়াদেশ বাতিল না করতে ৯ সংগঠনের বিবৃতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সংকটময় মুহূর্তে ক্রয় আদেশ স্থগিত না করে চুক্তির শর্ত যথাযথ পরিপালনের জন্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও পোশাক ব্যবসায়ী ক্রেতাদের কাছে দাবি জানিয়েছে এশিয়া অঞ্চলের ছয়টি দেশের ৯টি পোশাক উৎপাদনকারী এবং রফতানিকারক সংগঠন। এক যৌথ বিবৃতিতে সংকটময় সময়ে তৈরি পোশাক খাত বাঁচাতে ও পুনরুদ্ধার করতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের কাছে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেছে সংগঠনগুলো। এতে বলা হয়, করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের সময়ে একের পর এক তৈরি পোশাকের রফতানি বা ক্রয় আদেশ বাতিল করেছেন বিভিন্ন ক্রেতা ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান। এতে বড় সংকটের মুখে পোশাক খাত। কর্ম হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন অসংখ্য শ্রমিক। এমন অবস্থায় শ্রমঘন শিল্প খাতটি টিকিয়ে রাখা জরুরি। গত ৪ এপ্রিল সংগঠনগুলোর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপের সময়ে বিশ্বের গার্মেন্ট খাতকে সংকট থেকে বাঁচাতে ও পুনরুদ্ধার করতে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার সময় এসেছে। বিশেষত বিশ্বব্যাপী টেক্সটাইল এবং পোশাক সরবরাহকারী চেইনের ব্র্যান্ড সংস্থাগুলো ও খুচরা বিক্রেতাদের। তা না হলে লাখ লাখ শ্রমিকের মৌলিক অধিকার এবং তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের ওপর এর ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব পড়বে। চিঠিতে আরো বলা হয়, শ্রম অধিকার, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং টেকসই সরবরাহ চেইনের প্রতি বৈশ্বিক ব্যবসার প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং সম্মান দেখানোর এখনই সময়। বিষয়টি মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের প্রতি টেকসই টেক্সটাইল অব এশিয়ান রিজিয়ন (স্টার নেটওয়ার্ক) সদস্যদের ছয়টি উৎপাদনকারী এবং রফতানিকারক দেশ থেকে ৯টি শীর্ষ টেক্সটাইল এবং গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সংগঠন এ আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, চীন, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া রয়েছে। পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারকদের দাবিগুলো হলো : ১. উল্লেখযোগ্য ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সাপ্লাই চেইনে শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ের ওপর সব সম্ভাব্য প্রভাব সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করুন। ২. ক্রয় চুক্তির শর্তগুলোকে সম্মান ও দায়বদ্ধতাগুলো পালন করুন এবং মূল্য বা অর্থ প্রদানের শর্তগুলো পুনরায় আলোচনা করুন। ৩. শিপমেন্ট নিন এবং ইতোমধ্যে উৎপাদিত এবং বর্তমানে প্রস্তুতকৃত সামগ্রী বাতিল না করে অর্থ প্রদানের সঙ্গে এগিয়ে যান। ৪. উৎপাদন বা বিতরণ স্থগিত বা বাতিল হয়ে থাকলে শ্রমিকদের বেতন ও পণ্য সরবরাহকারীদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিন। ৫. এ মূহূর্তে পণ্য সরবরাহে বিলম্বের জন্য সরবরাহকারীদের ওপর কোনো দায় চাপাবেন না এবং এ জাতীয় বিলম্বের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করবেন না। ৬. অহেতুক আদেশ ও অপ্রয়োজনীয় পরিদর্শন এবং নিরীক্ষণ দ্বারা অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধি করে পণ্য সরবরাহকারীদের ওপর অনুচিত চাপ দেবেন না। ৭. স্থানীয় পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। ৮. সমস্যার পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধানগুলো নিশ্চিত করতে সর্বদা সংলাপ এবং সহযোগী মনোভাব অবলম্বন করুন। ৯. ব্যবসায়ী অংশীদারদের যথাসম্ভব সমর্থন করুন। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা রক্ষায় এক হোন। স্টার নেটওয়ার্কের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে দেশের শীর্ষ তৈরি পোশাকের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)’, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), চীনের চায়না ন্যাশনাল টেক্সটাইল এবং অ্যাপারিল কাউন্সিল (সিএনটিএসি), কম্বোডিয়ার গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (জিএমএসি), মিয়ানমার গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমজিএমএ), পাকিস্তান হোসিয়ারি গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিএইচএমএ), পাকিস্তান টেক্সটাইল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিটিইএ), তোয়ালে ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তান (টিএমএ) এবং ভিয়েতনাম টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ভিটাস)। এদিকে দেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমেরিকা, ইউরোপ ও কানাডা লকডাউন হয়ে আছে। ফলে প্রত্যেক দেশের ক্রয় আদেশ স্থগিত করে বার্তা পাঠাচ্ছে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এতে বড় সংকটের মুখে পোশাক খাত। ঝুঁকিতে পড়বে পুরো রফতানি বাণিজ্য। এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাত গভীর সংকটের মধ্যে দিন পার করছে। একের পর এক পোশাক কারখানার ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে এ খাত ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে। তাই কঠিন এ সংকটময় মুহূর্তে বায়ারদের ক্রয় আদেশ স্থগিত না করার আহ্বান জানিয়েছেন পোশাক মালিকরা। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরে ক্রেতারা এখন পর্যন্ত ২৯১ কোটি মার্কিন ডলার তৈরি পোশাকের রফতানি বা ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন। বিজিএমইএর সব শেষ তথ্য অনুযায়ী, ৮ এপ্রিল সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক খাতের এক হাজার ১১৯টি কারখানায় ৯৬ কোটি ৪০ লাখ পোশাক পণ্যের রফতানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ ৩ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় ২৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা, বিনিময় হার ৮৫ টাকা ধরে)। বিজিএমইএ’র তথ্য বলছে, রফতানি আদেশ বাতিল হওয়া এসব কারখানায় ২২ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করে। দেশে বর্তমানে পোশাক কারখানা রয়েছে চার হাজার ৫৬০টি। যেখানে কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। দেশের অর্থনীতিতে রফতানি পোশাকের মোট অবদান ৮৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য রফতানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এক দশক ধরে দেশের জিডিপি ৬ শতাংশের উপরে থাকার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে এ পোশাক খাত। তৈরি পোশাক শিল্পের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতে।
×