ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

দুঃসময়ে থিয়েটার কর্মীদের ভিন্নধর্মী বিনোদন উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৭ এপ্রিল ২০২০

দুঃসময়ে থিয়েটার কর্মীদের ভিন্নধর্মী বিনোদন উদ্যোগ

মনোয়ার হোসেন ॥ জলবাসর আমার সর্বশেষ মঞ্চনাটক। মাস দুয়েক হলো মঞ্চে এসেছে নাটকটি। এ নাটকে আমি প্রকৃতির কথা বলেছি। প্রকৃতিকে ধ্বংসের কথা বলেছি। প্রকৃতির প্রতি মানুষের মোহ ও লোভের কথা বলেছি। মানুষের অর্থলিপ্সা ও সম্পদলিপ্সা প্রতিদিন যে প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে সেই কথা বলেছি। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে কতটা বিপর্যয় ডেকে আনা হয়েছে সেই কথা বলেছি ...। রবিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে লাইভে কথাগুলো বলছিলেন নাট্যকার মাসুম রেজা। প্রকৃতির প্রতি মানুষের বিবেকহীন নিষ্ঠুরতার সেই কথা শুনেছেন এক হাজার আট শতাধিক শ্রোতা-দর্শক। আর এই নাট্যকার নিজের ফেসবুক আইডিতে মানুষ কর্তৃক নিসর্গবিনাশী কর্মকা-ের পাশাপাশি পড়ে শোনান তার জলবাসর নাটকের চিত্রনাট্য। এই আয়োজনটি দারুণভাবে সাড়া ফেলে ঘরবন্দী শ্রোতা-দর্শকের কাছে। সেই সুবাদে ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে আরও ২৫টি ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির দুঃসময়ে ঘরে বসেই থিয়েটার কর্মীদের কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন নাট্যদল প্রাচ্যনাটের সদস্য সাইফুল জার্নাল। হোম থিয়েটার কনসেপ্টে কাজ করার সেই প্রস্তাবটিতে সাড়া দিয়েছেন কিছু থিয়েটার কর্মী। অনেকেই আবার প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের অন্তরায় সম্পর্কেও মত দিয়েছেন। সম্প্রতি থিয়েটারবিষয়ক পত্রিকা ক্ষ্যাপার ফেসবুক পেজে উঠে আসে এই প্রস্তাবটি । মাসুম রেজার মতো আরেক থিয়েটার কর্মীও সামিউন জাহান দোলাও লুফে নিয়েছেন প্রস্তাবটি। সেই সুবাদে তিনিও রবিবার নিজের ফেসবুক আইডিতে আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন একটি কবিতা। এমন করে অনেক থিয়েটারকর্মীই এখন প্রতিদিন নাটকের পাঠ কিংবা আবৃত্তি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও শরিক হয়েছে ঘরে বসে পরিবেশনা উপস্থাপন কার্যক্রমে। জলপুতুল পাপেটস নামের ফেসবুক পেজে প্রতিদিন রাত সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে শিশুদের পারফরমেন্স। ২৬ মার্চ থেকেই চলছে ঘরবন্দী শিশুদের এ কার্যক্রম। ছোটরা আঁকছে কিংবা নাচছে-গাইছে, পুতুলনাটক করছে, কেউ বা আবার অভিনয় করছে- ঘরে থাকা অভিভাবকরা সেটা মোবাইলে ধারণ করে ছেড়ে দিচ্ছেন ফেসবুকে। ঘরে বসে মানুষকে বিনোদিত করা প্রসঙ্গে নাট্যকার মাসুম রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, হোম থিয়েটার কনসেপ্টে কাজ করার অংশ হিসেবেই আমি এই পারফরমেন্স করি। ঘরে বসেই মানুষকে একইসঙ্গে প্রফুল্ল রাখা ও উদ্বুদ্ধ করার করার চেষ্টা করেছি। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জরুরী কাজ হচ্ছে মানুষকে ঘরে রাখা। আমরা থিয়েটার কর্মীরা চাইলেই নিজেরা নিরাপদে ঘরে থেকে কিছু না কিছু করতে পারি। এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষকে যেমন ঘরে থাকার বার্তা দেয়া যায় তেমনি সচেতনও করা যায়। বিশেষ করে মানুষের নির্বুদ্ধিতায় যে ধরনের বিপর্যয় ঘটে সেসব সম্পর্কে সচেতন করা যাবে এই প্ল্যাটফর্মে। কথা প্রসঙ্গে এই নাট্যকার বলেন, এখন প্রশ্ন উঠেছে- জীবন না জীবিকা? এই পরিস্থিতিতে সমাজের সচ্ছল মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। যারা পেটের টানে রাস্তায় বের হচ্ছে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে ঘরে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে ওই লোকগুলোও যেমন বাঁচবে তেমনি সমাজের বাকিরাও সুরক্ষিত থাকবে। গত ৩ এপ্রিল ক্ষ্যাপার ফেসবুক পেজে নাট্যকর্মীদের হোম থিয়েটার কনসেপ্টে কাজ করার প্রস্তাব দেন সাইফুল জার্নাল। প্রস্তাবটিকে সময়োপযোগী চমৎকার হিসেবে বিবেচনা করে ক্ষ্যাপা। সেই বিবেচনায় থিয়েটার প্ল্যাটফর্মটি মতামত দেয়, এই করোনা সময়ে ঘরে বসেই হতে পারে নাটক, মানে হোম থিয়েটার। ২০ মিনিট সময়ব্যাপ্তির একটি নাট্য প্রযোজনা নিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় আমরা কি ফেসবুকে হাজির হতে পারি? কিভাবে সেটা সম্ভব হবে- সেই প্রসঙ্গে বলা হয়, বাসায় বসেই ২০ মিনিটের একটি নাট্য প্রযোজনা তৈরি করা যেতে পারে। বাসায় যারা একসঙ্গে আছেন, তারা অভিনেতা, নির্দেশক, লাইট ডিজাইনার, কস্টিউম ডিজাইনার হয়ে সেটি করতে পারেন। ঘরে বসেই মহড়া করতে পারেন। এই করোনা সময়ের গল্প কিংবা অন্য যেকোন গল্প হতে পারে। আমরা আগেই ঘোষণা দেব কে বা কারা কোনদিন লাইভে নাটক মঞ্চস্থ করবে। তারপর সন্ধ্যায় পারফরমেন্সটির লাইভ সম্প্রচার শুরু হবে। ক্ষ্যাপার ফেসবুক পেজ, আইডি, গ্রুপসহ সবার ফেসবুকে সেটি সরাসরি সম্প্রচার হতে পারে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে যৌক্তিকভাবে দ্বিমতও পোষণ করেছেন কিছু থিয়েটারকর্মী।
×