ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা শহরের ভাসমান মানুষদের নেয়া হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ৭ এপ্রিল ২০২০

ঢাকা শহরের ভাসমান মানুষদের নেয়া হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে

ফিরোজ মান্না ॥ ঢাকা শহরসহ সারাদেশে ভবঘুরে ও অসহায় মানুষদের করোনার ঝুঁকিহ্রাসে প্রায় ২৩ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ভাসমান মানুষের আবাসন সহায়তা দেয়ার জন্য সমাজসেবা অধিদফতর সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রসমূহে স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু করেছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত এক সপ্তাহ ধরে এ কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত অধিদফতরের আশ্রয় কেন্দ্রে ৫৪ জন ভাসমান মানুষকে স্থান দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরের সব ভাসমান মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হবে। তাদের খাবার ও করোনা প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ সরবরাহ দিচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাজসেবা অধিদফতরের উদ্যোগে ৩ হাজার ৮৪টি দুস্থ ও কর্মহীন পরিবারের মধ্যে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পরিধি আরও বাড়ানো হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ জনকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ২৮ মার্চ থেকে দেশের দুস্থ, অসহায়, প্রতিবন্ধী, হিজড়া জনগোষ্ঠীসহ কর্মহীন শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতি, জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ, প্রাকৃতিক ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, ভিক্ষাবৃত্তি নিরসন, উপজেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের মধ্যে সারাদেশে এক হাজার ১৯২টি ইউনিট অফিসে ২২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঢাকা জেলায় প্রায় ৩ কোটি টাকাসহ প্রতি জেলা জনসংখ্যা ও দারিদ্র্যতার হার বিবেচনায় ২০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকা ইতোমধ্যে জেলা শহরের সমাজকল্যাণ অধিদফতরে পাঠানো কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি জেলায় টাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জেলা শহরে অধিদফতর সেখানে ভাল মনে করে- সেখানেই সেন্টার তৈরি করে ভাসমান মানুষদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবে। এই টাকা নিয়ে কোন প্রকার দুর্নীতি অনিময় হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, সমাজসেবা অধিদফতর থেকে বিশেষ অনুদান হিসেবে জেলা পর্যায়ে ৩ কোটি টাকা বিতরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ অর্থের মাধ্যমে করোনা মোকাবেলায় দুস্থ, অসহায়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, পথশিশুদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের কাজ চলছে। বাড়িতে অবস্থানের ঘোষণায় কর্মহীন হয়ে পড়া ঢাকা শহরের ৫০০ পরিবারকে প্রতিদিন ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, আধা লিটার সয়াবিন তেল ও একটি করে সাবান প্রদান করা হচ্ছে। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাজসেবা অধিদফতরের উদ্যোগে ৩ হাজার ৮৪টি দুস্থ ও কর্মহীন পরিবারের মাঝে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবেলায় শিশু সুরক্ষামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইউনিসেফ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সমাজকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষায় এক শ’ পিপিই গাউন, ২৫০টি ভাইরাস প্রতিরোধী চশমা, ৫০০ ভাইরাস প্রতিরোধী হ্যান্ডগ্লাভস্ ও ২৫০টি ফন্টেয়ার মাস্ক সরবরাহ করেছে। এসব উপকরণ মাঠপর্যায়ে হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ে রোগীসেবায় কর্মরত সমাজকর্মী, খাদ্যসহায়তা প্রদানকারী সমাজকর্মী, পরিবহন সহায়কারী, শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত সমাজকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী আরও উপকরণ পাব। জেলা শহরগুলোতে যাতে কোন প্রকার সরঞ্জামের কমতি না থাকে সেদিকে আমরা দৃষ্টি রাখছি। যতদিন প্রর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনার প্রভাব থেকে যাবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ কাজ করে যাবে। সারাদেশেই একযোগে কার্যক্রম চলবে। আমরা গত এক সপ্তাহ ধরে কাজটি শুরু করেছি। কাজের ব্যাপকতা দিন দিন বেড়েই যাবে। সূত্র জানিয়েছে, ৩ এপ্রিল ৫৪ জন গৃহহীনকে মিরপুরের সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়েছে। জনসমাগম পরিহারের লক্ষ্যে দেশব্যাপী চলমান উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বয়স্কভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার নতুন সুবিধাভোগী বাছাই কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়াও নির্দিষ্ট দিনে ব্যাংক হতে ভাতার অর্থ গ্রহণের কারণে প্রচুর জনসমাগম এড়াতে সব তফসিলী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সপ্তাহে তিন বা ততোধিক দিনে ভাতার অর্থ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক পরিচালিত রোহিঙ্গা শিশু সুরক্ষার চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসে সুবিধাবঞ্চিত ও এতিম ৪ হাজার ২১০ জন রোহিঙ্গা শিশুর প্রতিপালনকারী ৩ হাজার ৪২ জন কেয়ারি গিভারকে জনপ্রতি মাসিক ২ হাজার টাকা হিসেবে ফেব্রুয়ারি ও মার্চের জন্য ৪ হাজার টাকা হিসেবে মোট প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকা বিতরণ করা হবে। সরকারী শিশু পরিবার, ছোটমণি নিবাস, শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, দুস্থ শিশুদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র, শান্তি নিবাসের এতিম ও দুস্থ, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নিবাসীদের এসব প্রতিষ্ঠানে করোনা সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
×