ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দশ টাকার চালেও স্বস্তি নেই বাজারে

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৭ এপ্রিল ২০২০

দশ টাকার চালেও স্বস্তি নেই বাজারে

এম শাহজাহান ॥ খোলাবাজারে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কার্যক্রম শুরু হলেও স্বস্তি নেই বাজারে। করোনা মোকাবেলায় ছুটি দীর্ঘায়িত হওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। খুচরা থেকে শুরু করে মিলমালিক পর্যন্ত বাড়াচ্ছে চালের দাম। বর্তমান খুচরা বাজারে গন্ধহীন ভালমানের স্বর্ণা ও চায়না ইরিখ্যাত মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০-৫২ টাকায়। তবে নিম্নমানের মোটা চাল ৪২-৪৪ টাকায় কিনতে পারছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। এই চালের ভাতে কূট গন্ধ রয়েছে বিধায় ক্রেতাদের কাছে তেমন চাহিদা নেই। এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে অস্থির দেশের চালের বাজার। অস্থির বাজার সামাল দিতে দুস্থ, অসহায় ও খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ১০ টাকা কেজিদরে খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রি শুরু করেছে সরকার। গত রবিবার সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এই কার্যক্রমে ভোক্তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি দেখিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে। প্রথমদিন থেকেই ওএমএসের চাল কিনতে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে ভোক্তাদের। তবে সস্তার এই চাল কিনতে সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ভোক্তারা বলছেন, ওএমএসের চাল বিক্রিতে বাজারে কোন প্রভাব পড়েনি। চালের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকায় সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এই কার্যক্রম চলছে। বেশি বেশি করে বিক্রি হলে বাজারে দাম কমতে পারে। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাজারে আবার চাল বিক্রি বেড়ে গেছে। জীবন বাঁচাতে নগরবাসী পুরোপুরি লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ এখন আর বাসার বাইরে আসতে চাচ্ছে না। আর এ কারণে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে সবাই ঘরে ঢুকে যেতে চান। ফলে অনেকে আবার কেনাকাটা বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া আর একদিন পর আগামী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পবিত্র শব-ই-বরাত পালিত হবে। শব-ই-বরাত সামনে রেখে ভোক্তারা বেশি করে কেনাকাটা করে থাকেন। এছাড়া বাড়তি পণ্যের সরবরাহ করে বিক্রি কার্যক্রম করেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এ সময় বাজারে পণ্যের চাহিদা বেড়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারের চাল ব্যবসায়ী নূরু মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, ক্রেতারা আবার চাল কেনা বাড়িয়েছেন। করোনা আতঙ্কে এখন আর কেউ বাজারে আসতে চায় না। যারা আসেন তারা একবার বেশি করে কেনাকাটা করছেন। এখন চাল বিক্রি হয় বস্তায় বস্তায়। আর করোনার আগে বস্তাকেটে ৫ কেজি ১০ কেজি কিংবা ২০ কেজি করে বিক্রি করা হতো। তিনি বলেন, ওএমএসের ১০ টাকার মোটা চাল গরিব মানুষের জন্য। এই চালও খুচরা বাজারে এখন ৪২-৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এ কারণে তারা (ওএমএস) আসার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘলাইন ধরে চাল কিনে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল খুচরা বাজারে মানভেদে ৬০-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫৬-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। জানা গেছে, দেশে ধান, চাল ও গমের কোন সঙ্কট নেই। এছাড়া নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে চাল রফতানির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা থেকে সরে এসেছে সরকার। আপাতত আর চাল রফতানি নয়। এছাড়া ধান ও চালের উৎপাদন বাড়াতে সরকারী প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ কারণে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশের চালের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। ভোক্তারাও বলছে বাজারে চালের চাহিদা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের সহায়তা হিসেবে অনেকে এখন চাল, আলু, ডাল ও তেল দিচ্ছেন। এতে করে বাজারে বাড়তি চালের চাহিদা তৈরি হয়েছে। খিলগাঁও গোরান বাজার থেকে চাল কিনছিলেন মোস্তাক হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বিত্তশালীরা বস্তায় বস্তায় চাল কিনে প্যাকেটে ভরে বিতরণ করছেন। আর এ কারণে বাজারে মোটা চাল নেই বললেই চলে। এর একটি প্রভাব পড়েছে বাজারে। অন্যদিকে সরকারী সংস্থা টিসিবির তথ্যতমতে, বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে। দাম বেড়ে সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬৫, মাঝারিমানের পাইজাম লতা ৫০-৫৫ এবং চাল মোটা স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৪২-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, গত ২৬ মার্চ সরকারী ছুটি শুরুর আগে এক প্রকার কাড়াকাড়ি করে বাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে চাল কিনে নেন ক্রেতারা। এতে ওই সময় চালের দাম বেড়ে যায় কেজিতে ৮-১২ টাকা পর্যন্ত। এখন তৃতীয় দফায় ছুটি বাড়িয়ে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। করোনায় সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে নগরবাসীর মধ্যে। জীবন বাঁচাতে আতঙ্ক বিরাজ করছে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। এছাড়া দোকান পাট খোলা রাখার বিষয়ে সরকারী নির্দেশনা মানতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। রয়েছে পুলিশী সতর্কীকরণ। আর এসব কারণে ভোগ্যপণ্যের বাজারেও সরবরাহ চেন অনেকাংশে ভেঙ্গে পড়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
×