অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে মানুষদের বাঁচাতে বিশেষ প্যাকেজ দাবি মেননের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ‘করোনা নাশে মানুষের পাশে’ দল ঘোষিত দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচীতে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে কথা বলেন। সকলের খোঁজ খবর নেন তিনি। পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন। সোমবার সকলের উদ্দেশে প্রবীণ এই বাম নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মেনন বলেন, এই মুহূর্তে সব থেকে জরুরী প্রয়োজন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যে মানুষগুলো রয়েছে তাদের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেয়া। যদি সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হয় তাহলে তাদের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেয়া ছাড়া এই দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, মানুষ কাজ না পেয়ে তারা বাইরে চলে আসছে খাদ্যের সন্ধানে। এমনকি গার্মেন্টস শ্রমিকরা তাদের চাকরি বাঁচাতে দলে দলে ঢাকায় চলে আসছেন। এই ধরনের সিদ্ধান্ত কত অবিবেচক ও কত অমানবিক সেটা আমাদের চোখের সামনে আমরা ঘটতে দেখলাম। ১৪ দলের অন্যতম এই শরিক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রবিবার যে পাঁচটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি, কিন্তু সে ক্ষেত্রে যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক যারা ২৭ ভাগ মানুষ এবং গ্রামীণ যে দরিদ্ররা প্রায় তিন কোটির ওপরে; তাদের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেয়া এবং সহায়তা করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি ব্যাপক সঙ্কট সৃষ্টি ঠেকাতে হয় সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন জীবন বাঁচাতে হবে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থায় নজর দিতে হবে, ঘরে ঘরে নিজেদের থাকতে হবে তেমনই অন্যদিকে তার জীবিকাও বাঁচাতে হবে। না হলে পরে তার পক্ষে কর্মক্ষম থাকা সম্ভব হবে না তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সাধারণ যে লোকেরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, যারা অর্থনীতির মূল ভূমিকায় রয়েছেন তাদেরকে কর্মক্ষম রাখা, তাদেরকে স্বাস্থ্যবান রাখা এটাও কিন্তু অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী সব ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিয়েছেন কিন্তু কৃষির ক্ষেত্রটি একটু বাদ রয়ে গেছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। কৃষকদের যদি আমরা এই মুহূর্তে প্রণোদনা দিতে না পারি এবং সামনে যে বোরো ফসল আসছে তার দাম সম্পর্কে যদি তারা নিশ্চিন্ত না হয় এবং বোরো ফসল কাটা ও সংরক্ষণের জন্য তাদের যে পুঁজির প্রয়োজন তা যদি তারা না পায় সেক্ষেত্রে এই সঙ্কট মোকাবেলা করতে তারা পারবে না। মেনন একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করার জন্য বিশেষ প্যাকেজ দেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন এবং চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমার জন্য জোর দিয়েছেন। তিনি একই সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির এই কর্মসূচীতে যারা অনুদান দিয়েছেন ও সাহায্য করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান এবং যে সকল কর্মীরা এতে অংশ নিচ্ছেন তাদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমাদের নিঃশঙ্ক সাহস নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হবে, নিজেকেও রক্ষা করতে হবে, অন্যকেও রক্ষা করতে হবে। ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ের সামনে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচী শুরু হয়, সেখানে ১০০ মানুষের মধ্যে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, আধা কেজি লবণ, আধা লিটার সয়াবিন তেল ও দুটি সাবান সংবলিত একটি করে ব্যাগ বিতরণ করা হয়। আরও ৫০০ ব্যাগ বিতরণের জন্য ঢাকার বিভিন্ন অংশে চলে গেছে। এর পরে ধারাবাহিকভাবে ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল যেমন মুগদা, খিলগাঁও, বৃহত্তরা উত্তরা, পল্লবী, রূপনগর, আদাবর, মোহাম্মদপুর, দারুস সালাম, শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও, ভাটারা, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, চকবাজার, লালবাগ, গে-ারিয়া, যাত্রাবাড়ী, কদমতলিসহ উত্তর-দক্ষিণ ঢাকা সিটির বিভিন্ন অংশে ক্রমান্বয়ে খাদ্য পৌঁছে দেয়া হবে।