ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় হ্যান্ডবল খেলোয়াড় রূপা হাবিবা

‘অসহায়দের সাহায্য করার চেষ্টা করছি’

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৭ এপ্রিল ২০২০

‘অসহায়দের সাহায্য করার চেষ্টা করছি’

রুমেল খান ॥ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার অনিন্দ্য রূপসী মেয়ে তিনি। যখন ক্লাস এইটে পড়েন, তখন আন্তঃস্কুল হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় কাজী সাহাব উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হয়ে অংশ নেন এবং তার স্কুল চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই থেকেই শুরু। তারপর ২০০৯ সালে বিজেএমসিতে যোগ দেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস... সব মিলিয়ে এই দলের হয়ে অনেক শিরোপা জিতেছেন। অনেক বছর দাপটের সঙ্গে খেলেছেন জাতীয় দলেও। বলছি রূপা হাবিবার কথা। হ্যান্ডবল ছাড়া ভলিবলও খেলেন তিনি। ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত আন্তঃজেলা ভলিবল প্রতিযোগিতায় পাবনার হয়ে খেলে চ্যাম্পিয়ন হন। এছাড়া এ বছরের মার্চে স্বাধীনতা দিবস ডিউবল চ্যাম্পিয়নশিপে বিজেএমসির হয়ে অংশ নিয়ে ঢাকা জেলার সঙ্গে যুগ্মভাবে দলীয় শিরোপাও জিতেছেন। যখন হ্যান্ডবল খেলা শুরু করেন, তখন বাবা হায়দার আলী (কৃষিজীবী) এবং মা জামিনা বেগম (গৃহিণী) রূপাকে খেলতে নিষেধ করেছিলেন। পরে যখন দেখলেন তাদের মেয়ে খেলে সুনাম কুড়াচ্ছে, বিজেএমসিতে চাকরি পেয়েছে এবং অর্থও উপার্জন করছে, তখন মেনে নেন। করোনাভাইরাসের কারণে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় যেদিন দেশজুড়ে খেলাধুলা বন্ধের ঘোষণা দিল, তার পরেরদিনই (২০ মার্চ) গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন রূপা। শনিবার জনকণ্ঠকে রূপা জানান, ‘আমাদের এখানে সৌভাগ্যবশত করোনায় কেউই আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু চারদিকে বেশ আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশ বাইরে পাহারা দিচ্ছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে যেতে পারছে না।’ করোনা থেকে বাঁচতে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছেন সুদর্শনা রূপা। সম্প্রতি বিজেএমসি আর্থিক লোকসানের কারণে তাদের দেড়শ’ ক্রীড়াবিদকে চাকরিচ্যুত করে। এদের মধ্যে রূপাও ছিলেন। তবে রূপা শোনালেন নিজের সুখবরটি, ‘প্রথমে চাকরিচ্যুত করা হলেও পরে আমাদের বিজেএমসির নারী হ্যান্ডবল দলের ১৩ জনকে চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার খবর পাই। তবে জাতীয় হ্যান্ডবলে বিজেএমসি নারী দল আবারও অংশ নেবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নই।’ এপ্রিলের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ গেমস। এর জন্য রূপা নিজ উদ্যোগে জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে কিছুদিন অনুশীলন করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বিজেএমসির চার জন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কোহিনুর ভাইকে বলে স্টেডিয়ামের ভেতরেই একটি রুম থাকার জন্য চেয়ে নিয়েছিলাম। সেখানে থেকে ৪-১৯ মার্চ পর্যন্ত অনুশীলন করেছিলাম। পরে তো সবকিছু বন্ধই হয়ে গেল! বাড়িতে এসে তো গৃহবন্দী হয়ে আছি। বলতে পারেন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। ব্যায়াম-অনুশীলন কিছুই করা হচ্ছে না।’ প্রবাস থেকে যারা যারা দেশে ফিরেছেন, তাদের নির্বুদ্ধিতা-একগুঁয়েমির কারণেই বাংলাদেশের বাকি মানুষরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং জীবননাশের মহাঝুঁকিতে আছেন বলে মনে করেন রূপা। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘তারা হোম কোয়ারেন্টাইন মানেননি। অন্যদেরও আক্রান্ত করেছেন। এটা তারা মহা অন্যায় কাজ করেছেন।’ করোনা থেকে রক্ষা পেতে থানকুনি পাতা খাওয়া প্রসঙ্গে রূপার জবাব, ‘এসব আমি খাইনি। কারণ এসবে বিশ^াস করি না।’ এখনকার অখ- অবসরে টিভি দেখে, চাচাতো ছোট ভাই-বোন ও মায়ের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন রূপা। দেশজুড়ে অঘোষিত লকডাউনে গৃহহীন ও নি¤œ আয়ের মানুষরা যেন অভুক্ত না থাকেন, সেজন্য সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন রূপা। আরও যোগ করেন, ‘আমাদের এখানে দরিদ্র ও পথেঘাটে ঘুরে বেড়ানো মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের নিয়মিত সাহায্য করা হচ্ছে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে কিছু ডোনেট করেছি। শৈশবে যে স্কুলে পড়েছি, সেই অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের উদ্যোগে অসহায়দের সাহায্য করা হচ্ছে। এছাড়া এলাকার আরও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এগিয়ে এসেছে।’ করোনা-সন্দেহে হাসপাতালে গেলে সেখানে ভর্তি হতে বিড়ম্বনা, ডাক্তারদের চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি, পাড়া-প্রতিবেশীদের এগিয়ে না আসা, বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া, এমনকি মারা গেলে জানাজা পড়ানো ও লাশ দাফনে পর্যন্ত এলাকাবাসীর বাধা দান, করোনার জন্য আলাদা হাসপাতাল নির্মাণে বাধা দেয়া... এগুলো যথেষ্ট পীড়া দিয়েছে রূপাকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো দুঃখজনক। তবে আমাদের এখানে এসব ঘটনা ঘটেনি। তবে সামান্য জ¦র-কাশি হলেই আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে ছোটা ঠিক নয়, বাসাতেই এর চিকিৎসা নেয়া যায়। সবশেষে জনকণ্ঠের পাঠকদের উদ্দেশ্যে রূপার আকুতি, ‘করোনা একটা মহামারী। বাসায় থাকুন। নিজে পরিষ্কার থাকুন, বাসার আশপাশ পরিষ্কার রাখুন এবং সচেতন হোন।’
×