ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যাওয়া-আসার বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ৭ এপ্রিল ২০২০

যাওয়া-আসার বিড়ম্বনা

করোনাভাইরাসজনিত সঙ্কটজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার যে সঠিক পথেই এগোচ্ছে সে বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা চলে না। করোনার আঁতুড়ঘর চীনসহ ইউরোপ-যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা-অস্ট্রেলিয়া-ইরান-সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, করোনা সংক্রমণ এড়াতে সঙ্গনিরোধই সর্বোত্তম পন্থা। যেহেতু এই মারাত্মক ও ভয়াবহ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোন প্রতিষেধক তো দূরে থাক, ভ্যাকসিন পর্যন্ত অদ্যাবধি অনাবিষ্কৃত। আর সে জন্যই সর্বোত্তম পন্থা হলো করোনা সংক্রমিত এলাকাকে দেশের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। তদুপরি পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশ কয়েকটি শহর, জেলা, প্রদেশ এমনকি প্রয়োজনে গোটা দেশকে লকডাউন বা শাটডাউনে নিয়ে আসা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে স্থল, নৌ ও আকাশপথে প্রায় সব রকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা। বিশেষ করে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জনসাধারণের চলাচল। নিতান্ত জরুরী জনকল্যাণমূলক সার্ভিস ব্যতিরেকে যেমন, ওষুধপত্র, চিকিৎসামগ্রী, চিকিৎসা ব্যবস্থা, নিত্যপণ্যের বাজার ইত্যাদি। বাংলাদেশ সরকারও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সেই ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছে। সে জন্য সরকার সর্বস্তরে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে ২৪ মার্চ থেকে, যা প্রথমে প্রলম্বিত ছিল ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। পরে এই ছুটি বাড়িয়ে বর্ধিত করা হয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সর্বস্তরের মানুষকে ঘরে আটকে রাখা। অফিস-আদালত-কলকারখানা বন্ধ রেখে সঙ্গরোধ নিশ্চিত করা। সরকার এর জন্য সর্বস্তরে ও পর্যায়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নিরাপত্তার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করে, যা ছিল অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ও স্বাস্থ্যসম্মত। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, সর্বত্র এই সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। প্রথমত, বিদেশ প্রত্যাগত বাংলাদেশীদের আগমন বন্ধ করা যায়নি বেশ কিছুদিন, যা করা ছিল অত্যাবশ্যক। ইত্যবসরে যেসব বাংলাদেশী দেশে ফিরে আসে তাদের জন্য কোয়ারেন্টাইনে বা আইসোলেশনও নিশ্চিত করা যায়নি। এই দুর্বলতার সুযোগে সীমিত পরিসরে হলেও কোথাও কোথাও ছড়িয়ে পড়ে করোনা। সে সব ক্ষেত্রে অবশ্য স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী অনতিবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। দ্বিতীয় যে সমস্যাটি দেখা দেয় তা হলো, রাজধানী ও আশপাশের এবং বন্দর ও বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামেরও অধিকাংশ শ্রমজীবী ও কর্মজীবী প্রধানত বহিরাগত। ফলে দুটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পরিমরি করে যে যেভাবে পারে ছুটে গেছে গ্রামের বাড়িতে নিজ নিজ জেলায়। এ সময়ে কার্যত দূরপাল্লার যানবাহন ও নৌচলাচল বন্ধ থাকলেও মানুষ একটা না একটা উপায় বের করে নিয়েছে। তদুপরি অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে বেসরকারী অফিস, শিল্প-কারখানা ও পোশাক কারখানাগুলোতে কার্যত লকডাউন ঘোষিত হয়নি। এক্ষেত্রে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর কিছু দোদুল্যমানতাও লক্ষ্য করা যায়। এ দুটো সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রফতানিমুখী পোশাক কারখানা স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে খোলা রাখা যাবে। এখানে এটা বুঝতে হবে যে, যদি পণ্য রফতানি করা নাই যায়, তাহলে কারখানা খুলে রেখে কী লাভ? যা হোক, ইত্যবসরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতনের সময় এসে যায় এবং যারা প্রাথমিক ছুটির অবকাশে ছুটে গিয়েছিলেন গ্রামের বাড়িতে, কর্মস্থলে যোগ দেয়ার জন্য তারাই আবার তড়িঘড়ি করে ছুটে আসতে থাকেন রাজধানী ঢাকা-চট্টগ্রামসহ কর্মস্থলে। মনে রাখতে হবে যে, সব রকম যানবাহন ও নৌ চলাচল অদ্যাবধি বন্ধ রয়েছে এবং তা থাকবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সুতরাং লাখ লাখ শ্রমজীবীর কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার চরম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা সহজেই অনুমেয়। অধিকাংশেরই মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়েছে হেঁটে। পরিস্থিতির সমূহ গুরুত্ব এবং দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত কারখানা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং সবাইকে আবার ফিরে যেতে হয়েছে ও হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাকে লকডাইন ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা আশা করব, করোনা পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয় এবং সাধারণ ছুটি যদি আর বাড়ানো না হয়, তাহলে ১৪ এপ্রিলের পর থেকে ট্রেনসহ সব রকম যানবাহন চলাচলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। সর্বস্তরের মানুষ যাতে দুর্ঘটনাসহ যে কোন ঝুঁকি ব্যতিরেকে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার, রেল কর্তৃপক্ষসহ বেসরকারী পরিবহন মালিকদেরও সবিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তখন যেন কোন ক্রমেই লেজেগোবরে পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। এর পাশাপাশি গার্মেন্টসসহ সব শ্রমিককে যথাসময়ে বেতন প্রদান করতে হবে।
×