ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে ॥ গবর্নর

প্রকাশিত: ১০:২২, ৬ এপ্রিল ২০২০

 প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে ॥ গবর্নর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়িত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, এসব প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতি ফের ঘুরে দাঁড়াবে। একই সঙ্গে করোনার কারণে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সঙ্কট দেখা দেবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক সিআরআর ও রেপো রেট কমিয়েছে। যাতে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সঙ্কট না হয়। ব্যাংকগুলোর পর্যাপ্ত তারল্য জোগান দেয়া হয়েছে। আবার বেশি তারল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি না হয় তার দিকে নজর রেখে মুদ্রানীতি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’ এছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা থেকে কারখানাগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীরা এপ্রিল মাসের বেতন এ মাসের শেষ তারিখেই পেয়ে যাবেন বলে জানান গবর্নর ফজলে কবির। রবিবার গণভবনে করোনা পরিস্থিতিতে সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সরকারী প্রণোদনার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। তাঁর বক্তব্যের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর এসব কথা বলেন। এর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ বক্তব্য রাখেন। করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন গবর্নর। তিনি বলেন, ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন রফতানি তহবিলকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। রফতানি খাতের ইডিএফ ফান্ডের সুদের হার ২.৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। ফজলে কবির বলেন, তফসিলী ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) বিদ্যমান দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ৫.৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৫ শতাংশ হতে কমিয়ে করে দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৪.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ তলবি ও মেয়াদী দায়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারা ও ইসলামী ব্যাংকগুলোকে দৈনিক ভিত্তিতে গড়ে সাড়ে ৪ শতাংশ এবং দ্বি-সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ৫ শতাংশ হারে সিআরআর রাখতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদহার বিদ্যমান বার্ষিক শতকরা ৬ ভাগ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে শতকরা ৫.৭৫ ভাগে পুননির্ধারণের বিষয়েও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গবর্নর ফজলে কবির বলেন, করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে আমরা বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ব্যবস্থার কিছু বিধান শিথিল করেছি। এতে করে গ্রাহকরা প্রয়োজনে যে কোন এডি ব্রাঞ্চে গিয়ে নিজেরাই কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। গবর্নর বলেন, রফতানির অর্থ দেশে আনার সর্বোচ্চ সময়সীমা ১২০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৮০ দিন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে আমদানি পণ্য দেশে আনার সময়সীমাও বাড়িয়ে ১৮০ দিন করা হয়েছে। এতদিন এলসির দেনা পরিশোধের পর সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে পণ্য দেশে আনার বাধ্যবাধকতা ছিল। স্বল্পমেয়াদী বিদেশী ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১৮০ দিন করা হয়েছে। গবর্নর জানান, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও মূল্য পরিশোধের সময়সীমা ১২০ দিন থেকে বাড়িয়ে ৮০ দিন করা হয়েছে। অন্যদিকে সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট এ্যান্ড বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় উৎপাদন উপকরণ আমদানির দায় পরিশোধের জন্য সময়সীমা ১৮০ থেকে বাড়িয়ে ৩৮৭ দিন করা হয়েছে। গবর্নর জানান, বিদ্যমান নিয়মে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ব্যাংকগুলো এক বছরের বাকিতে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুত খাতের পণ্য আমদানি করতে পারে। আর শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য সর্বোচ্চ ৬ মাসের বাকিতে আনা যায়। তবে উভয় ক্ষেত্রে ৬ মাস বৃদ্ধির ফলে এক বছর এবং দেড় বছর সময় পাচ্ছেন রফতানিকারকরা। এছাড়া রফতানি উন্নয়ন তহবিল-ইডিএফের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ৬ মাস মেয়াদে ঋণ নেয়া যায়। পরে সময় বাড়িয়ে ৯ মাস করা হয়। তিনি বলেন, আগামী জুন পর্যন্ত কোন ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণীমানে কোন পরিবর্তন আনা যাবে না। ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ঋণের শ্রেণীমান যা ছিল, আগামী ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত ওই মানেই রাখতে হবে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকরা ১৫ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলেও কোন বিলম্ব ফি লাগবে না। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও সরঞ্জামস আমদানির ক্ষেত্রে বিদেশী ব্যাংকের রি-পেমেন্ট গ্যারান্টি অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া আমদানি মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করার সব ব্যবস্থা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমদানির জন্য শুধু ১০ হাজার ডলার সীমা ছিল, সেটিও এখন আমরা উন্মুক্ত করেছি। পাশাপাশি সাপ্লাইয়ার্স বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ আমদানির দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ৯০ দিনের সময়সীমা বাড়িয়ে ১৮০ দিন করা হয়েছে। এছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা থেকে কারখানাগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীরা এপ্রিল মাসের বেতন এ মাসের শেষ তারিখেই পেয়ে যাবেন বলে জানান গবর্নর ফজলে কবির। এর আগে গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রফতানিমুখী শিল্প খাতের কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য প্রথমে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে গবর্নর বলেন, আমাদের রফতানিমুখী শিল্প-প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা থেকে এপ্রিল, মে ও জুন মাসের স্যালারি দেয়া হবে। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পূর্ণ গাইডলাইন ইস্যু করেছে। আশা করছি, শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রথম বেতন এপ্রিল মাসের শেষ তারিখেই পেয়ে যাবেন।
×