ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ;###;গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা ;###;চারটি কার্যক্রম নিয়ে সরকারের উদ্যোগ;###;কোন ধরনের দুর্নীতি বা অপব্যবহার না করতে হুঁশিয়ারি;###;ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান

শেখ হাসিনার সাহসী কর্ম পরিকল্পনা ॥ করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায়

প্রকাশিত: ১০:২১, ৬ এপ্রিল ২০২০

শেখ হাসিনার সাহসী কর্ম পরিকল্পনা ॥ করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি  মোকাবেলায়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপির দুই দশমিক ৫২ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে এ সঙ্কটে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবগুলো তুলে ধরে এ থেকে উত্তরণে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোসহ চারটি কার্যক্রম নিয়ে সরকারের কর্মপরিকল্পনাও ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্যাকেজ ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী- এই চার ভাগে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চারটি কার্যক্রম নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। এই চারটি কার্যক্রম হবে- সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি করা, আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি এবং বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা। গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রফতানিমুখী শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি গৃহহীনদের জন্য ঘর ও খাবারের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি নতুন চারটি প্যাকেজে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টর, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ সুবিধা, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফিন্যান্স স্কিম চালুর ঘোষণা দেন। বিশাল অঙ্কের এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই প্রণোদনা প্যাকেজে আমাদের মানুষের আর্থসামাজিক গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। পূর্বে এবং আজকে (রবিবার) ঘোষিত আর্থিক সহায়তা প্যাকেজসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন হলে আমাদের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে এবং আমরা কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছতে পারব, ইনশাআল্লাহ। কেউ কষ্ট করুক, সেটা আমি চাই না। সকলের কষ্ট লাঘব করাটাই আমাদের দায়িত্ব। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই প্যাকেজটা ঘোষণা দিয়েছি। এর শুভ ফলটা সকলে পাবেন। সম্ভাব্য বৈশ্বিক ও বিশ্ব অর্থনৈতিক সঙ্কট হতে উত্তরণের জন্য রফতানি খাতের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের প্রতিও আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে সকলকে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। রবিবার গণভবনে বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব ও উত্তরণের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার লক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পাশাপাশি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘শুধু আমি এইটুক্ইু চাই সবাই যেন সততার সঙ্গে কাজ করেন। এই সুযোগ নিয়ে কেউ কোন রকমের দুর্নীতি বা কোন অনিয়ম না করেন। অপব্যবহার না করেন। সোজা কথা কেউ এ ধরনের কোন অপব্যবহার করবেন না। আমরা যদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে কোন সেকশনের মানুষের কেউ-ই, যারাই যে ব্যবসা করেন তারা কোন অসুবিধায় পড়বেন না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আজকের এই আয়োজনটা করছি।’ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার প্রণোদনা প্যাকেজের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। করোনাভাইরাসের কারণে গণভবনে এবার একটু ভিন্নভাবে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সংবাদ সম্মেলনে কোন প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখা হয়নি। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করার দিকটার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা একটা অদ্ভুত ধরনের আয়োজন হয়ে গেল. সাংবাদিক সামনে নেই কিন্তু কথা বলে যাচ্ছি। সাধারণত সংবাদ সম্মেলন করলে আমরা সাংবাদিকদের ডাকি। আপনাদের সঙ্গে বসি, কথা বলি, মতবিনিময় করি। আমরা আজকে ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবস্থা নিয়েছি এই কারণে যে, আপনারা (সাংবাদিক) ঘোরাঘুরি করতে যেয়ে যেন কোনভাবে সংক্রমিত না হন। হয়তো প্রশ্নোত্তর এখন নিতে পারব না, তবে ভবিষ্যতে যখন ভাল সময় আসবে আপনাদের গণভবনে দাওয়াত দেয়া হবে। তখন মনভরে প্রশ্ন করতে পারবেন, আমরাও উত্তর দিতে পারব। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সবাই যেন ভাল থাকেন, আল্লাহর দরবারে সেই প্রার্থনাও করেন। সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ যাদের ক্ষেত্রে ॥ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যে চারটি খাতে প্রণোদনা ঘোষণা সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল। এসব খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ তহবিল করা হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট শিল্প ও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ দেবে। এই ঋণে সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে চার শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণ গ্রহীতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাকি সাড়ে চার শতাংশ সুদ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। দ্বিতীয় খাত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্পে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিতে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল করা হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ দেবে। এক্ষেত্রেও সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে চার শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণ গ্রহীত শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাকি চার শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। তৃতীয় খাত হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বৃদ্ধি। এ ক্ষেত্রে ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বাড়াতে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। এর ফলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদের হার লাইবর + ১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে। সর্বশেষ চতুর্থ খাতটি হচ্ছে- প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফিন্যান্স স্কিম। এই নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন তহবিল চালু করবে, যেখান থেকে ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন/ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপদকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলাম। নতুন চারটিসহ মোট ৫টি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এসব আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়ন হলে দেশে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এবং বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিরূপ প্রভাব উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর চার দফা কার্যক্রম ॥ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব থেকে উত্তরণে তার সরকারের চার দফা কার্যক্রম দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে- প্রথমত, সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি করা। সরকারী ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকে’ মূলত প্রাধান্য দেয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণ এবং বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের ঋণের স্থিতি-জিডিপির অনুপাত অত্যন্ত কম (৩৪ শতাংশ), বিধায় অধিকতর সরকারী ব্যয় সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর কোনও চাপ সৃষ্টি করবে না। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন। ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণœ রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য। তৃতীয়ত, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ হলো- বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ; ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়; লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ; ‘বয়স্ক ভাতা’ এবং ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচীর আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা; এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহনির্মাণ কর্মসূচী দ্রুত বাস্তবায়ন করা; ইত্যাদি। চতুর্থত, মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরী। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিআরআর এবং রেপোর হার কমিয়ে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা আগামীতেও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য থাকবে যেন মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে। অর্থনীতিতে সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাবের কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নোভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য যেসব বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তার একটি চিত্রও সংবাদ সম্মেলনে জাতির সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ যেমন সঙ্কটে পড়েছে, তেমনি সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার, স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর সৃষ্ট বিপুল চাপ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে নজিরবিহীন লকডাউন ও যোগাযোগ স্থবিরতা বিশ্ব অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। শিল্প উৎপাদন, রফতানি বাণিজ্য, সেবাখাত বিশেষত: পর্যটন, এভিয়েশন ও হসপিটালিটি খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধস নেমেছে। শুধু সরবরাহ ক্ষেত্রেই নয়, চাহিদার ক্ষেত্রেও ভোগ ও বিনিয়োগ চাহিদা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। গত কয়েক সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজারে ২৮ থেকে ৩৪ শতাংশ দরপতন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরুর আভাস দিয়েছে। আর বলছে, মন্দা প্রলম্বিত হলে বিশ্বে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। বিশ্বব্যাপী বিপুল জনগোষ্ঠী কর্মহীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব এই প্রথম এমন মহামন্দা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কী ধরনের বা কতটুকু নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলার সময় আসেনি। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাবগুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তার মধ্যে রয়েছে- দেশে আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অর্থবছর শেষে এই হ্রাসের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমান মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাংক সুদের হার হ্রাসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে বেসরকারী বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা আছে। এছাড়া সার্ভিস সেক্টর, বিশেষ করে হোটেল-রেস্তরাঁ, পরিবহন এবং এভিয়েশন সেক্টরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা কমায় এর দাম ৫০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে; যার বিরূপ প্রভাব পড়বে প্রবাসী-আয়ের ওপর। প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাক্কলন করেছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে, এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন বন্ধ এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস এবং সরবরাহ চেনে সমস্যা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হবে। এর ফলে অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া বিগত ৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভবে ৭ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। সামষ্টিক চলকগুলোর নেতিবাচক প্রভাবের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে যেতে পারে। দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রয়েছে দেশের জনগণের ॥ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারপ্রধান হিসেবে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দেশের মানুষকে রক্ষায় তার সরকারের নানা পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আশ্চর্য্য এক সহনশীল ক্ষমতা এবং ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র ৯ মাসের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে, যুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে পারে- সেই জাতিকে কেউ কখনও দাবায়ে রাখতে পারবে না, এটা জাতির পিতা নিজেই বলে গেছেন। কাজেই আমরাও জাতির পিতার সেই অমর বাণী বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। মহান আল্লাহ, বিশ্ববাসীকে এই মহামারী থেকে রক্ষা করুন, সেটাই আমরা চাই। প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে সারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য আসছিল। অনেকেই খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। বিশেষ করে ছোট ছোট ব্যবসা, যেমন আমাদের কৃষি। তারপর আমাদের কামার-কুমার, জেলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পোল্ট্রি, মৎস্য, ডেইরিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় যারা নিয়োজিত, তারা সকলেই একটা সমস্যায় পড়ে গেছে এবং তারা খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। তাদের ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। সব কিছু নিয়েই। বিভিন্ন বিল অর্থাৎ বিদ্যুতের বিল বা অন্যান্য বিল দেয়া নিয়ে যারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন, তাদের এই দুশ্চিন্তা দূর করার জন্যই আমরা এই বিভিন্ন ব্যবস্থাটা নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ভবিষ্যতে তাদের আর কোন সমস্যা হবে না। তারা যেন তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যটা ভালভাবে চালিয়ে যেতে পারেন। কেউ কষ্ট করুক, সেটা আমি চাই না। সকলের কষ্ট লাঘব করাটাই আমাদের দায়িত্ব। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই প্যাকেজটা ঘোষণা দিয়েছি। এর শুভফলটা সকলে পাবেন। তবে সম্ভাব্য এ বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক সঙ্কট হতে উত্তরণের জন্য রফতানি খাতের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি সকলকে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানান। একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয় ॥ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নোভেল করোনাভাইরাস-এর প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এটিকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ যাবত ২০২টি দেশ ও অঞ্চলে এর সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিশ্বে এখন প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন এবং অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছেন। শনিবার পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ ৩০ হাজার ৮১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৬০ হাজার ১৪৯ মারা গেছেন। ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ সুস্থ হয়েছেন। কাজেই সুস্থ হওয়ার হারটা বেশি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সময়মতো ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আল্লাহর রহমতে এখনও আমাদের এখানে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেনি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাংলাদেশে গত শনিবার পর্যন্ত ৭০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ও ৮ জন মারা গেছেন। ৩০ জন সুস্থ’ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের সবার বয়স সত্তরের ওপরে এবং পূর্ব হতেই তারা বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। তবে একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়। বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষায় সরকার এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এ সময় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তার সরকারের পদক্ষেপসমূহের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসের শেষে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার পরপরই আমরা এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও আইইডিসিআর যৌথভাবে কাজ শুরু করে। আইইডিসিআর-এ কন্ট্রোল রুম খোলা হয় এবং রোগটি মোকাবেলায় প্রস্তুতি শুরু করা হয়। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক পৃথক কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাইরাসসহ সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে ‘ন্যাশনাল প্রিপেয়ার্ডনেস এ্যান্ড রেসপন্স প্লান ফর কোভিড-১৯, বাংলাদেশ’ প্রণয়ন করে তিন স্তরবিশিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- বিদেশে গমন এবং বিদেশ থেকে আগমন নিরুৎসাহিত করা, সংক্রমিত ব্যক্তির আগমন ঘটলে দ্রুত শনাক্তকরণ এবং এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ভাইরাসের বিস্তার রোধ এবং চিহ্নিত আক্রান্ত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের দ্রুত পৃথক করে ( কোয়ারেন্টাইন) যথাযথ চিকিৎসা প্রদান। দেশব্যাপী ছুটি ঘোষণা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ বিস্তার রোধে বিভিন্ন দেশে লকডাউন অথবা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশেও গত ২৬ মার্চ থেকে ১৭ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্প কারখানায় আংশিক ছুটি, পর্যটন কেন্দ্র, বিপণিবিতান এবং সড়ক, নৌ, রেলসহ সকল গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে এবং জনসাধারণকে ঘরে থাকার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঘরে বসে নববর্ষ উদযাপন করুন ॥ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ঘরে বসেই বাংলা নববর্ষ নিজের মতো উদযাপন এবং শব-ই বরাতে ঘরে অবস্থান করেই মহান আল্লাহর রহমত কামনায় ইবাদত বন্দেগি করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আগামী ১৪ এপ্রিল আমাদের বাংলা নববর্ষ শুরু। এই নববর্ষে সকলে ঘরে বসে নিজের মতো করে উদযাপন করুন। নববর্ষকে ঘিরে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা যা কিছু তা মিডিয়ার মাধ্যমেই হবে। শব-ই বরাত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনেই আমাদের ‘শব-ই বরাত’ রয়েছে। সেক্ষেত্রেও আমি বলব সকলে ঘরে অবস্থান করেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করুন-আমাদের ‘বরাত’টা যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভাল রাখেন এবং দেশের মানুষ যেন আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে যেতে পারেন। আর এই মহামারী থেকে যেন বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ববাসী মুক্তি পায়। ধৈর্য ধরুন, ভিড় এড়িয়ে চলুন ॥ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে ধৈর্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং ভিড় এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশবাসীর যাতে কষ্ট লাঘব হয় এবং তারা ব্যবসা-বাণিজ্য যথাযথভাবে চালিয়ে যেতে পারেন সেজন্যই তার সরকারের এসব প্যাকেজ। তিনি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের কাছে দেশের জনগণসহ বিশ্বের সকল মানুষের সুরক্ষা কামনা করে বলেন, মহান আল্লাহ বিশ্ববাসীকে এই মহামারী থেকে রক্ষা করুন। দেশবাসীকে স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ভাল থাকেন, সুস্থ থাকেন এবং নিয়ম নীতি মেনে চলুন। ঘরে থাকুন, ভিড় এড়িয়ে চলুন- সেটাই আমরা চাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সবাই দোয়া করেন। সবাইকে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সবাই যেন সততার সঙ্গে কাজ করেন। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কোন রকম দুর্নীতি, অনিয়ম বা অপব্যবহার না করেন। আমরা যদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারি তাহলে সমাজের কোন স্তরের মানুষই কোন অসুবিধায় পড়বে না।
×