ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বর্ষবরণের আহ্বানে সংস্কৃতিকর্মীদের সাড়া

প্রকাশিত: ১০:০৫, ৬ এপ্রিল ২০২০

 প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বর্ষবরণের  আহ্বানে সংস্কৃতিকর্মীদের সাড়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পহেলা বৈশাখ আর ঢাকার রমনার বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন এখন জাতির কাছে সমার্থক। রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের প্রভাতী আয়োজন প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে। পাকিস্তানী জান্তা সরকার, স্বৈরাচারী শাসনামল, এমনকি বোমা হামলার পরও বন্ধ হয়নি বাঙালীর বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় বৈচিত্র্যময় আয়োজনটি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এবারই প্রথম ছায়ানটের প্রভাতী এ আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হবে না। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় এবারের পহেলা বৈশাখের আয়োজনে জনসমাগম করা যাবে না এ ঘোষণাটি আগেই এসেছিল। এই ঘোষণা অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই বর্ষবরণের সবচেয়ে প্রাচীন আয়োজন রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল পদ্ধতিতে বর্ষবরণের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। জনসমাগম না ঘটিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বর্ষবরণের পরিকল্পনা করছেন তারা। এ বিষয় নিয়ে ছায়ানটের সহ-সভাপতি সঙ্গীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল রবিবার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে মার্চের মাঝামাঝি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মতবিনিময় করেছিলাম। আমরা প্রস্তাব রেখেছিলাম লোক সমাগম করে যদি অনুষ্ঠান না করা যায়, তাহলে কি ঘরোয়াভাবে অনুষ্ঠান ধারণ করে দেয়া যাবে কিনা বা সেই ব্যবস্থা থাকবে কিনা। এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে সারাবিশ্বে এবং বাংলাদেশেও পরিস্থিতি কি হবে আমরা এখনও ঠিকভাবে বলতে পারছি না। সবকিছু মিলে আমাদেরও মন খুব খারাপ। বর্ষবরণ নিয়ে আমাদের প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা ছিল বাইরে অনুষ্ঠান ধারণ করে প্রচার করতে পারি কিনা। করোনা পরিস্থিতি যে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে তাতে সেই পরিকল্পনাটাও ত্যাগ করে, আমরা সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া দিন মজুর, কর্মহীন এরকম বিপন্ন মানুষের পাশাপাশি দাঁড়ানোটা বেশি জরুরী মনে করছি এই মুহূর্তে। সেজন্য ত্রাণ কাজে কিভাবে কি করা যায়, এটা একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছি যাতে তারা সাধারণ মানুষদের এটা দিতে পারে। এটা আমরা হয়ত অব্যাহত রাখব। তবে এবার পহেলা বৈশাখের দিন আমাদের সভাপতির একটা বক্তব্য থাকবে। সেই বক্তব্যের সঙ্গে আর কি থাকবে সেটা এই মুহূর্তে এখন পর্যন্ত আমরা ঠিক করতে পারিনি। যেখানে প্রতিদিনই বলা হচ্ছে যে একেবারে জরুরী না হলে ঘর থেকে বের হবেন না। এরকম পরিস্থিতিতে রিহার্সাল করাও ঝামেলা এবং ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা কি করব হয়ত দুই তিন দিনের মধ্যে কিছু ভাবতে পারব। তবে ওই দিন আমাদের একটা বক্তব্য থাকবে এটা নিশ্চিত। এটার সঙ্গে আর কিছু থাকবে কি থাকবে না এটার সিন্ধান্ত এখনও হয়নি। এ বক্তব্যটা আমরা বিভিন্ন মিডিয়াতে পাঠাব। আমরাতো প্রতি বছরই কিছু না কিছু বক্তব্য ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন দিয়ে থাকেন। এতে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি সমসাময়িক কিছু কথা থাকে। এটা থেকে হয়ত মানুষ কিছুটা সাহস পেতে পারে। এই মুহূর্তে আমরা ভিষণ এক দুর্যোগময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের মনের ভাবনাটা জনগণের সঙ্গে সেয়ার করতে চাই। জনসমাগম না করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের পঙতি ‘আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’ প্রতিপাদ্য করে এবারে বর্ষবরণের আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। প্রতিবারই মূল প্রতিপাদ্যের ওপর একটি পোস্টার বের করা হয় অনুষদ থেকে। এবার সেই পোস্টারটি ভার্চুয়ালি প্রকাশ করা হবে। যাতে মূল প্রতিপাদ্যের পাশাপাশি এর ব্যাখ্যাও থাকবে। এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন রবিবার জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছরই আমরা পোস্টার করি। এবারও করব। তবে সেটা প্রতিপাদ্যের ব্যাখ্যাসহ। প্রতিবার প্রতিপাদ্যটি আমরা নানা মোটিভের মাধ্যমে তুলে ধরি। এবার সেটি হবে না বলে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘দি ওল্ড ম্যান এ্যান্ড দ্যা সি’ থেকে ‘মানুষকে ধ্বংস করা যায় কিন্তু পরাজিত করা যায় না’-এ লাইন নেয়া হচ্ছে। যা দিয়ে প্রতিপাদ্যের ব্যাখ্যা শুরু করা হবে। এভাবেই আমরা যা এতদিন মোটিভের মাধ্যমে বলে এসেছি, সেটা পোস্টারের মাধ্যমে তুলে ধরব। বর্ষবরণ সম্পর্কে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিকীভাবে বর্ষবরণ করার পরিকল্পনা আমাদের বিবেচনায় আছে। এবার আর করা যাবে না কারণ মানুষের জীবন হচ্ছে প্রধান। সরকারী বিধি বিধান মেনে আমরা চলতে চাই যার কারণে আমরা কোন জনসমাগম করতে চাই না। আমরা সাভাবিকভাবে নববর্ষে যারা এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সব মানুষের মঙ্গল কামনা করি। আমরা চাই সারাপৃথিবী যে দুর্যোগের মধ্যে আছে আমরা নববর্ষের নতুন সূর্যের আলোতে এই বিপদকে যেন কাটিয়ে তুলতে পারি এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
×