ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বর সর্দি মাথাব্যথা গলাব্যথা শ্বাসকষ্ট, ৮ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ১০:০৪, ৬ এপ্রিল ২০২০

  জ্বর সর্দি মাথাব্যথা গলাব্যথা শ্বাসকষ্ট,  ৮ জনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ জ্বর-সর্দি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় মতো বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ, পিরোজপুর, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কুমিল্লায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, অধিকাংশ এলাকা থেকে এসব মৃত্যুর খবরে নানা রকমের বিভ্রান্তি রয়েছে। এছাড়া, কোন কোন জেলায় বিচ্ছিন্ন এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বহু লোককে। আবার অনেকে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছে। কোন কোন স্থানে আইসোলেশন ক্যাম্প খোলা হয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জে এই প্রথমবারের মতো একজনের দেহের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। নোয়াখালীর হাতিয়ার সঙ্গে মূল ভূখন্ডের নৌ পারাপার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। নারায়ণগঞ্জ ॥ এক হোসিয়ারি ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর ফতুল্লার কাশিপুরের নিশ্চিন্তপুর ও আমবাগান এলাকায় প্রায় ৩শ’ পরিবার লকডাউন করে দিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। শনিবার গভীররাতে এসব বাড়ি লকডাউন করে দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক। শনিবার সকাল ৯টায় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুচিন্তানগর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জে আরও এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় ফতুল্লার লামাপাড়ার ২শ’ ৮ পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কাশিপুরের আমবাগান এলাকায় এক ব্যবসায়ী ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে বিষয়টি জানতে পেরে শনিবার রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সহযোগিতায় আরামবাগের ৩শ’ পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। ওই নিহত ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর জন্য কাজ চলছে। তিনি বলেন, লকডাউনে থাকা পরিবারের সদস্যদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, ডালসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হবে। কেউ যাতে ওই দুটি মহল্লা থেকে বের হতে না পারে সেজন্য পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দুটি মহল্লায় প্রবেশের তিনপথ টিন দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। পিরোজপুর ॥ জেলার ভা-ারিয়ায় সর্দি, জ্বর নিয়ে মৃত শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়নি। নতুন ১৯৮ জনসহ ১৮৮২ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে। লক্ষ্মীপুর ॥ বৃদ্ধের মৃত্যু করোনায় নয়, সেখানকার ১৫ পরিবার লকডাউন মুক্ত। শরীয়তপুর ॥ নড়িয়ায় জ্বর সর্দি কাশি নিউমোনিয়া ইত্যাদি উপসর্গে আক্রান্ত বৃদ্ধের মৃত্যুতে ষেখানকার ৩৩ পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। মাদারীপুর ॥ কালকিনিতে আবদুস সালাম (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গ্রামবাসীর দাবি জ্বর ও গলাব্যথায় তিনি মারা গেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দাবি করা হচ্ছে আবদুস সালাম স্ট্রোকে মারা গেছে। কিশোরগঞ্জ ॥ জ্বর-সর্দির মতো বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে একজন। করোনা সন্দেহে পরীক্ষা করার জন্য পাঁচজনের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নেত্রকোনা ॥ জেলায় অনুরূপ লক্ষণ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর এখানে ৫০ বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। অনেকের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। দাউদকান্দি, কুমিল্লা ॥ দাউদকান্দিতে জ্বর সর্দি গলা ব্যথায় আক্রান্ত সন্দেহে ১ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সেখানে ৭টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ফরিদপুর থেকে তবলীগ জামাতে আসা এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেখানটায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় পটুয়াখালীতে ২০ শয্যার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ইউনিট চালু করা হয়েছে। মাগুরায় বিদেশ ফেরত ৩৬৩ জনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে। অন্যদিকে ৩৪ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। লালমনিরহাটে ২ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ভর্তি করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা করাতে রংপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। ঝালকাঠি জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ১৮৭ জন থেকে ১৮৬ জন ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন। বগুড়ায় হোম কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ১৬ জন। একজন অসুস্থ হয়েছে বলে খবর রটেছে। এদের মধ্যে আইসোলেশনে আছে ৮ জন। ফেনীতে গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে গেছে ১৭ জন, নতুন ২ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ। গাইবান্ধায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে ১৫৮ জন, বাড়ি ফিরে গেছে ৫ জন। নওগাঁর ধামইরহাটে একজন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। বরিশালে শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে সাত রোগী ভর্তি করা হয়েছে। হবিগঞ্জে কোন আক্রান্ত নেই। ১২৭ জন আছে হোম কোয়ারান্টাইনে। মাদারীপুরের শিবচরে ছাড়পত্র পাওয়া তিনজন ফের উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে। বগুড়ার আদমদীঘিতে দুইজন আইসোলেশনে এবং দুই জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শেরপুরে হাসপাতালের স্টাফসহ দুই করোনা রোগী শনাক্ত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর থেকে জানান, শেরপুরে হাসপাতালের এক নারী স্টাফসহ প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের দুই রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া (৫০) ও সাতানি শ্রীবরদী এলাকার বাসিন্দা। অন্যজন সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের ছনকান্দা এলাকার গৃহবধূ (৪০)। ওই ঘটনায় আট সদস্যের হাসপাতালের নারী স্টাফের বাড়ি এবং ১১ সদস্যের ওই গৃহবধূর বাড়িসহ আশপাশের অন্ততঃ ২০ বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। আর উভয়ের পরিবারের অন্য সদস্যদের রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে। এদিকে নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার খবরে ওই দুই মহিলার এলাকাসহ জেলায় করোনা আতঙ্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। রবিবার রাত সোয়া আটটায় সিভিল সার্জন ডাঃ একেএম আনোয়ারুর রউফ ওই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গের কারণে শনিবার সদর উপজেলার ওই গৃহবধূ এবং শ্রীবরদীর ওই হাসপাতাল স্টাফসহ পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পাঠানো হয়। রবিবার রাত আটটার দিকে তাদের পরীক্ষার ফলাফলের মধ্যে ওই দুজনের ফল পজেটিভ আসে। এর ফলে হাসপাতালের ওই নারী স্টাফকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে এবং সদর উপজেলার ওই গৃহবধূকে জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। আর উভয়ের বাড়ির অন্য সদস্যদের আপাতত রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে। প্রয়োজনে পরীক্ষার জন্য তাদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এদিকে বরাদ্দের পরও রবিবার পর্যন্ত শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্সদের পিপিই (পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট) দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আর ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরই একজন স্টাফ করোনাতে আক্রান্ত হওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছেন হাসপাতালে দায়িত্বরত প্রায় ২৮ চিকিৎসক-নার্স ও অন্যান্য স্টাফ। এ বিষয়ে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে ওই বিষয়ে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পিপিই আরও আগেই সরবরাহ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে আরেকজন করোনা সংক্রমিত ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রামে আরও একজনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এই যুবক প্রথম আক্রান্ত রোগীর পুত্র। রবিবার ফৌজদার হাটে অবস্থিত বিআইটিআইডিতে (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এ্যান্ড ইনফেক্সাস ডিজিজেস) নমুনা পরীক্ষায় এই সংক্রমণ শনাক্ত হয়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, এর আগে আক্রান্ত ৬৭ বছর বয়সী রোগীর এই পুত্রসহ পরিবারটির চার সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর মধ্যে পুত্রের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। বাকি তিনজনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। বিআইটিআইডি সূত্রে জানা যায়, রবিবার মোট ২৩ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এরমধ্যে একজন ছাড়া বাকিদের মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। করোনা সংক্রমিত দ্বিতীয় রোগী এই যুবক খুলশী এলাকায় একটি সুপার শপের কর্মচারী। ওই প্রতিষ্ঠানটি লকডাউন করা হয়েছে। এর আাগে গত শুক্রবার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল তার পিতার শরীরে। এরপর দামপাড়া এলাকার ছয়টি বাড়ি লকডাউন করা হয়।
×