ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বেচ্ছায় সেবা দিতে এগিয়ে এসেছেন দুই হাজার তরুণ চিকিৎসক

প্রকাশিত: ১০:০২, ৬ এপ্রিল ২০২০

  স্বেচ্ছায় সেবা দিতে এগিয়ে এসেছেন দুই হাজার তরুণ চিকিৎসক

রশিদ মামুন ॥ করোনা ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস খুব কাছের মানুষটিকেও দূরে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো এই রোগে ভয় পেয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরাও। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে কোন রোগী এলে ডাক্তাররা তাকে দেখছেন না। বেসরকারীর পাশাপাশি সরকারী হাসপাতালেরও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। এ জন্য সরকারকে কঠোর হতে দেখা গেছে। কিন্তু এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময় হেলাল হাফিজের কবিতার এই চিরন্তন এই সত্য তো মিথ্যে হয়ে যেতে পারে না। একসেস টু ইনফরমেশন এটুআই থেকে দারুণ এক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এতে দুই হাজার ৭৫ জন ডাক্তার রেজিস্ট্রেশন করেছে। এরা অনলাইনে সেবা প্রদান করবে প্রয়োজনে রোগীর কাছেও যাবে। আর এইসব চিকিৎসকদের সবাই তরুণ। এদেরই একজন ডাঃ ফাতেহা শারমিন শর্না জানালেন, এই সময়ে বাইরে গিয়ে সেবা দেয়া অনেক কঠিন। সেজন্য ঘরে থেকে আমি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। হটলাইনের যেসব নম্বর রয়েছে সেখানে ফোন করলে একটি এ্যাপস এর মাধ্যমে তাদের সেবা গ্রহীতার সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। আমরা রোগীর উপসর্গ শুনে জ্বর, সর্দি এবং কাশির চিকিৎসা দিচ্ছি। তিনি বলেন, কোন রোগীর যদি প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (পিপিই) সরবরাহ করলে আমরা তার কাছে গিয়েও সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। তবে এটি খুব জরুরী নয় জানিয়ে তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা যদি খুব খারাপ হয় তাহলে তো তাকে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে। হটলাইন ৩৩৩, ১০৬৫৫ এবং ১৬২৬৩ এই তিন নম্বরে ফোন করে এসব চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। একই সঙ্গে এটুআই এর ওয়েব সাইটে https://corona.gov.bd/ গিয়ে করোনা আক্রান্ত কি না তা প্রাথমিকভাবে যাচাই করা যাবে। একইভাবে সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য দেয়া যাবে। যদিও প্রচারের অভাবে এই সুউদ্যোগের খবর খুব বেশি মানুষের কাছে নেই। ফলে তারা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এ ফোন করছেন। এসব জায়গাতে দীর্ঘক্ষণেও ফোনে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এসব নম্বরে ইদানীং ফোন কলের পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে। এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, এখন পর্যন্ত এটুআই এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুই হাজার ৭৫ জন ডাক্তার অন লাইনে করোনা সেবা দিতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন। মানুষ যাতে খুব সহজেই একজন ডাক্তারকে তার সমস্যার কথা বলতে পারে সেজন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ বিষয়ে যে ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে একজন চিকিৎসক যাদের বিএমডিসির সনদ রয়েছে তারা নিবন্ধন করতে পারেন। সফলভাবে নিবন্ধন শেষ হলে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণও দেখা হচ্ছে অনলাইনে। ফলে একজন চিকিৎসক খুব সহজে নিবন্ধন এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছেন। করোনার ভয়ঙ্কর ছোবলে যখন সারা পৃথিবী থমকে দাঁড়িয়েছে সেখানে আমাদের দেশও করোনা সংক্রমণের বাইরে নেই। ক্রমান্বয়ে দেশে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ সময়মতো ডাক্তার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের বিষয়ে সরকার সোচ্চার হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা উপকরণ সরবরাহ করে তাদের সাধারণ রোগীদের সেবা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই সময়ে ঠান্ডা এবং গরম আবহাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তনের ফলে মানুষ জ¦র, ঠান্ডা, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এমনিতেই এসব ঠান্ডাজ্বর সেরে যায়। অধিকাংশ মানুষের এর জন্য তেমন চিকিৎসা নেয়ারও প্রয়োজন হয় না। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও একজন ব্যক্তির মধ্যে একই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছেন। অনেকেই তারা উপসর্গের বিষয়টি চিকিৎসকদের জানিয়ে সঠিক একটি নির্দেশনা প্রত্যাশা করেন। এক্ষেত্রে এখন মোবাইল বা ফেসবুকেই এসব সেবা মিলতে পারে। এটুআই সূত্র বলছে, তাদের এই উদ্যেগ নেয়ার পর থেকে গত ২১ মার্চের পর এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখের কাছাকাছি মানুষ ফোন করেছেন। প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার মতো ফোন আসছে এসব নম্বরে। যাদের প্রত্যেককে অনলাইনে সেবা দিচ্ছে এসব চিকিৎসকরা। এটুআই এর গণযোগাযোগ প্রধান তানজিনা শারমিন জানালেন, অনলাইনে যেসব চিকিৎসকরা নিবন্ধন করেছেন তারা সবাই বয়সে তরুণ। জাতির এই ক্রান্তিকালে স্বেচ্ছায় সেবা দিতে তারা এগিয়ে এসেছেন।
×