ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনার প্যাকেজে পুঁজিবাজার নেই

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ৬ এপ্রিল ২০২০

 করোনার প্যাকেজে পুঁজিবাজার নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামীদিনের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার পাঁচটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এই প্যাকেজের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান, রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান, এসএমই, কৃষি (পোল্ট্রি, ফিশারিজ, ডেইরিসহ) ইত্যাদি খাতে প্রণোদনা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই প্যাকেজের আওতায় পুঁজিবাজারের জন্য কোন প্রণোদনা থাকছে কি-না সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। যদিও অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের পুঁজিবাজারেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশ্বের পুঁজিবাজারে শেয়ারের সূচক ২৮ থেকে ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ এবং গবর্নর ফজলে কবিরও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। তাদের কারো বক্তব্যেই পুঁজিবাজারের কোন উল্লেখ ছিল না। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই প্যাকেজ ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই প্যাকেজ উদ্যোক্তা, কৃষক, দরিদ্র মানুষসহ সবার জন্যেই কিছু না কিছু থাকছে। কিন্তু তিনিও পুঁজিবাজার নিয়ে কোন শব্দ উচ্চারণ করেননি। অবশ্য গত মার্চ মাসে সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ তহবিল সুবিধা ঘোষণা করেছে। ওই সুবিধার আওতায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী যে কোন ব্যাংক রেপো সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে ২০০ কোটি টাকা নিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। আর এই তহবিলের মেয়াদ হবে ৫ বছর। এই তহবিলের আওতায় করা বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে ব্যাংকের মোট বিনিয়োগ হিসাবের বাইরে থাকবে। অন্যদিকে অর্থনীতিতে করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ রকিবুর রহমান। রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি এ অনুরোধ জানিয়েছেন। ডিএসই পরিচালক রকিবুর রহমান বিবৃতিতে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ করব এই মুহূর্তে যে প্যাকেজটি ঘোষণা করেছেন তাতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অন্তুর্ভুক্ত করার জন্য। যে সব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছেন, তাদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যেভাবে সুদের সাপোর্ট দিচ্ছেন সেইভাবে সাপোর্ট দিন। তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর পক্ষে এই ঘোষণা পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করবে এবং বিনিয়োগকারী উপকৃত হবেন। করোনাভাইরাসের কারণে যে সকল প্রতিষ্ঠান, ম্যানুফ্যাকচারিং, এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট, কনস্ট্রাকশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকা- চালিয়ে যাবার জন্য যে আর্থিক প্যাকেজ (৭৩ হাজার কোটিটাকা) প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, সেটা যুগান্তকারী, সময়োপযোগী ও ঐতিহাসিক। এই আর্থিক প্রণোদনা সকল ম্যানুফ্যাকচারিং, এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট বিশেষ করে শ্রমিক, কর্মচারী, খেটে খাওয়া মানুষের মজুরি পাওয়াকে নিশ্চিত করেছেন। এটির পরোক্ষ প্রভাব অবশ্য শেয়ারবাজারের ওপর পড়বে। শেয়ার বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের বিনিয়োগে আগেই দেয়া বিশেষ তহবিল সুবিধার বিষয়টিও যদি উল্লেখ করতেন, তবু তা বিনিয়োগকারীদের নতুনভাবে আশ্বস্ত করত। তারা ভাবতেন, অন্যান্য খাতের মতো পুঁজিবাজারও নীতি নির্ধারকদের মনোযোগে আছে। কিন্তু পুঁজিবাজারের বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় অনেক বিনিয়োগকারী হতাশ হতে পারেন। তবে বিশ্লেষকদের অন্য একটি অংশ মনে করছেন, বিশ্বব্যাপী দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ মার্চ কোন শেয়ারের দর আর পড়তে পারবে না এমন একটি নির্দেশনা দিয়ে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু আর কোন শেয়ারের দর আর পড়তে পারবে না, তাই বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। ঠিক সেই কারণে হয়তো আলাদা করে বিশেষ প্যাকেজের শেয়ারবাজারের প্রণোদনার বিষয়টি আসেনি। আবার অন্যান্য দেশে শেয়ার বাজার চালু থাকলেও বাংলাদেশে সাধারণ ছুটির অংশ হিসেবে লেনদেন বন্ধ রয়েছে। সেই কারণেই প্রণোদনার বিষয়টি নাও আসতে পারে। এছাড়া গত কয়েক দিন আগেও টানা পতন রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেটিও ছিল সরকারের পক্ষ থেকে যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ যার কারণে। নতুন করে প্রণোদনার বিষয়টি আসার দরকার নেই।
×