ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রণোদনা প্যাকেজে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৫ এপ্রিল ২০২০

প্রণোদনা প্যাকেজে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতি ঘুরে দাড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রবিবার সকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রকরোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে উদ্ভূত পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলবে। তবে করোনার প্রভাবে অর্থনীতি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তা বাস্তবায়িত হলে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তার সুবিধা সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পাবে। কৃষক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতীসহ সব পেশার মানুষকে এর আওতায় আনা হবে।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারিতে সারা বিশ্ব আজ আক্রান্ত। এটি কতো দিন থাকে আমরা জানি না। শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব রয়েছে। তাছাড়া এখন বিশ্বের এক প্রান্তে কিছু ঘটলে তা অপর প্রান্তের মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও এটি প্রভাব ফেলবে। তবে এই পরিস্থিতিতে আমরা প্রত্যেক মানুষের পাশে আছি।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, আশা করি, তা দ্রুত কেটে যাবে। তখন আবার সব কিছু স্বাভাবিক হবে।’ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে নিজের অবস্থান থেকে সরবেন না বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত মাসেও আমাদের ৮.১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। রফতানি খাত বিশেষ করে রেমিট্যান্স থেকে আমাদের প্রবৃদ্ধির একটি বড় অংশ আসে। এবার করোনার কারণে কিছুটা কমলেও অপরাপর দেশের থেকে আমরা ভালো অবস্থানে থাকবো।’ তিনি বলেন, সারাবিশ্বে গত এক বছর ধরে টানাপড়েন চলছিল। তার মাঝেও আমরা সবার ওপরে ছিলাম। এখনও সবার ওপরে আছি। গত পরশু দিন সর্বশেষ চিত্র তুলে ধরেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির মতে, গত ৮ মাসে আমাদের যে অর্জন, তার ভিত্তিতে আমাদের জিডিপির আকার এই মুহূর্তে ৭ দশমিক ৮ ভাগ। তারা বলেছে, যদি স্বাভাবিকভাবে সবকিছু চলে তাহলে এ বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮-এর কাছাকাছি থাকবে।’ এডিবির প্রসঙ্গ তোলার আগে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন আমরা খুব ভালোভাবেই এগোচ্ছিলাম। শুধু কয়েকটি উদাহরণ দিই যেগুলো খুব বেশি কাজ করে আমাদের প্রবৃদ্ধিতে। যেমন, রাজস্ব। সারাবিশ্বে গত এক বছর ধরে টানাপড়েন চলছিল। তার মাঝেও আমরা সবার ওপরে ছিলাম। এখনও সবার ওপরে আছি।’ তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আহরণ করেছিলাম গত ৮ মাসে (চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ৮ দশমিক ১৫ ভাগ। রেমিট্যান্সে আমাদের ৮ মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ দশমিক ০৫ ভাগ। এটাই প্রথম, আমরা এত রেমিট্যান্স অর্জন করতে পেরেছিলাম। গত অর্থবছরে আমাদের ৮ মাসে রেমিট্যান্স অর্জন ছিল ১০ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। সেখানে এ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রেমিট্যান্স অর্জন হয়েছে ১২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম ৮ মাসে আমাদের শুধু একটি মাত্র খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। সেটা হলো রফতানি খাত, (এই খাতে) নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এখানে একটি কথা বলে রাখা উচিত যে, রফতানি বাণিজ্যের সিংহভাগ হলো তৈরি পোশাক শিল্প। ১০০ ভাগে সাড়ে ৬ ভাগ খুবই নেগলিজিবল (নগণ্য) মনে করি। তারপরও রেমিট্যান্স দিয়ে আমরা সেটা কাভার করে ফেলেছি। সুতরাং রেমিট্যান্স থেকে সেটা কাভার করার কারণে স্থানীয় চাহিদা কমবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হলো, সকল বিপদ কেটে যায়। এ বিপদও কেটে যাবে। বিপদ কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে সময় বেশি না নিয়ে যাতে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারি, যাতে আমরা আবার যে জায়গাতে ছিলাম সেখানে চলে যেতে পারি, সেখান থেকে কাজ শুরু করে আমাদের যে কাঙ্খিত লক্ষ্য, তা অর্জনে আমরা যেন না পিছিয়ে পড়ি-সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী আজকের এই প্যাকেজগুলো ঘোষণা দিয়েছেন। তার কাছে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব, কারণ তিনি দেরি করেন নাই। করোনা ঘটে যাওয়ার পরে করেন নাই। আগেভাগেই সেই ব্যবস্থা নিয়ে নিয়েছে’। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস দেশের মানুষ আশা হারা হবেন না। আমরা যেভাবে এগোচ্ছিলাম, আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসব। আমার ব্যক্তিগত মত হলো, সব বিপদ কেটে যায়। এ বিপদও কেটে যাবে।
×