ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তুরাগ নদের কর্মহীন মাঝিদের পাশে সবাই

প্রকাশিত: ১০:১৬, ৫ এপ্রিল ২০২০

 তুরাগ নদের কর্মহীন মাঝিদের পাশে সবাই

গাফফার খান চৌধুরী ॥ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বেকার হয়ে পড়া তুরাগ নদের অন্তত হাজারখানেক নৌকার মাঝির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার, মিরপুর, গাবতলী, আমিনবাজার, সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, গাবতলীর এক বড় ব্যবসায়ী ও এসব এলাকার বাসিন্দারা। ঢাকার গাবতলীর এক ব্যবসায়ী ব্যক্তিগতভাবে দুস্থদের সহায়তায় চল্লিশ লাখ টাকা দান করেছেন। মিরপুরের তুরাগ নদের দিয়াবাড়িসহ আশপাশের ঘাটে নৌকা চালিয়ে ওই হাজারখানেক মাঝির পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে লোকজনের যাতায়াত কমে গেছে। ফলে বেকার হয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। তবে কতদিন এভাবে তাদের সহায়তা করা সম্ভব হবে তা নিয়েও এলাকাটি বিস্তর আলোচনা চলছে। করণীয় ঠিক করতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের খানিকটা পশ্চিমেই মিরপুরের দিয়াবাড়ি ঘাট। ঘাট দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ যাতায়াত করতেন। নদের ওপারে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন কাউন্দিয়া ইউনিয়ন। নদের ওপার অথচ ঢাকা থেকে মাত্র হাজার গজ দূরে হওয়ায় এবং সেখানে বাসা ভাড়াসহ জীবনযাপনের ব্যয় তুলনামূলক অনেক কম। নদ পার হয়ে ঢাকায় আসতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। জানা গেছে, ইউনিয়নটির বয়স দু শ’ বছরের বেশি। এর আয়তন ১১ দশমিক ৪৭ বর্গমাইল। চারদিক পানি বেষ্টিত। নৌকাই একমাত্র যাতায়াতের বাহন। ঢাকা লাগোয়া হওয়ায় এবং যথেষ্ট নাগরিক সুবিধা থাকায় ইউনিয়নটির ২২টি গ্রামে লক্ষাধিক লোকের বসবাস। বাড়ি ভাড়া ঢাকার তুলনায় অনেক কম। অথচ ঢাকার খুব কাছে। এজন্য এখানে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস সবচেয়ে বেশি। এখানকার অন্তত ৫০ হাজার লোক প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করেন। যাদের অধিকাংশই রিক্সাচালক, ছোটখাটো ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস কর্মীসহ ছোটখাটো কাজের সঙ্গে জড়িত। নৌকা ছাড়া পারাপারের কোন ব্যবস্থা না থাকায় এখানে নৌকা চালানো একটি অন্যতম পেশা হিসেবে গড়ে ওঠেছে। অন্তত হাজারখানেক নৌকা চলে। এসব নৌকা চলে মিরপুরের বড় দিয়াবাড়ি, ছোট দিয়াবাড়ি, চটবাড়িসহ আশপাশের জনবসতিকে ঘিরে। নৌকার মাঝিদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন নৌকা। প্রতিদিন নৌকায় লোকজন আর মালামাল পার করেই অন্তত হাজারখানেক মাঝি পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হতো। কাউন্দিয়া ইউনিয়ন থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান খান শান্ত জনকণ্ঠকে জানান, ইউনিয়নটি চারদিকে পানিবেষ্টিত। এখানে যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা। সারাবছর এখানে নৌকা যাতায়াত করে। যদিও ইউনিয়নটি সাভার থানার অধীন। তবে এটি ঢাকার ১৪ নম্বর সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত। ঢাকার খুব কাছে হওয়ার কারণে এবং তুলনামূলক বাড়ি ভাড়া, জীবিকা নির্বাহ ব্যয় কম হওয়ায় এখানে বহু মানুষ বসবাস করে ঢাকায় চাকরি করেন। তাদের যাতায়াতকে ঘিরেই অন্তত হাজারখানেক নৌকার মাঝির পরিবারের সংসার চলে। তাদের রোজগারের একমাত্র অবলম্বন নৌকা। দেশে করোনা আতঙ্কের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকার নির্দেশনা জারি করেছেন। ছোট ছোট নৌকায় এক থেকে দুইজন উঠলেও সামাজিক দূরত্ব থাকে না। এছাড়া সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে মানুষের যাতায়াত কমে গেছে। এতে করে মহাবিপাকে পড়েন নৌকার মাঝিদের হাজারখানেক পরিবার। এ বিষয়ে সাভার উপজেলা কার্যালয়ে সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। সরকারের তরফ থেকে যে সহায়তা এসেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। তাই আমরা এলাকাবাসী তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেই। আমরা এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে যার যেমন সামর্থ্য সে অনুযায়ী সহায়তা করতে থাকি। বিষয়টি নিয়ে গাবতলী এলাকার বিশিষ্ট পাথর ব্যবসায়ী মোঃ লুৎফর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি স্বেচ্ছায় গাবতলী, আমিনবাজার, আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রাম, সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়ন ও দিয়াবাড়ি ঘাটের দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ান। তিনি ব্যক্তিগতভাবে নগদ ৪০ লাখ টাকা দান করেন। গাবতলীর দুস্থদের জন্য ২০ লাখ, আমিনবাজারের দুস্থদের জন্য ১০ লাখ এবং কাউন্দিয়া মাঝি পরিবারসহ দুস্থদের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা দান করেন এই ব্যবসায়ী। এলাকার দুস্থদের সার্বিক অবস্থা নিয়ে স্থানীয় সরকার দলীয় এমপি আসলামুল হকের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তিনিও ব্যক্তিগতভাবে দুস্থদের পাশে দাঁড়ান। পরে আশপাশের এলাকার দুস্থদের তালিকা করা হয়। সেই তালিকা মোতাবেক দুস্থদের মাঝে ৫ কেজি করে চাল, ১ কেজি মশুরের ডাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ লিটার সয়াবিন তেল ও ১টি করে গায়ে দেয়ার সাবান দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সরকারের তরফ থেকেও সহায়তা আসছে। তবে কতদিন এভাবে আমরা দুস্থদের সহায়তা করতে পারব তা বলতে পারছি না। তারপরেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে হয়ত মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। অন্যথায় আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে কাউন্দিয়া ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত ও এলাকার মুরুব্বী তৈয়ুবুর রহমান (মধু) জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোমধ্যেই দুস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ দেয়া অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তও হয়েছে। গাবতলীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান ইতোমধ্যেই ব্যক্তিগতভাবে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন। লুৎফর রহমান ব্যক্তিগতভাবে আরও ৬০ লাখ টাকা দিবেন বলে জানা গেছে।
×