ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে ৫ লাখ গার্মেন্টস কর্মী নিয়ে করোনা আতঙ্কে নগরবাসী

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ৫ এপ্রিল ২০২০

 চট্টগ্রামে ৫ লাখ গার্মেন্টস  কর্মী নিয়ে করোনা আতঙ্কে  নগরবাসী

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে আজ থেকে খোলা হচ্ছে সাড়ে তিন শতাধিক গার্মেন্টস কারখানা। এতে সরকারের সাধারণ ছুটি ও যান চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে গেল। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৬টি বেল্টে এ কারখানাগুলোর অবস্থান। এসব কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ৫ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী। এদের পরিবহন সুবিধা দিতে ব্যবহার হবে চট্টগ্রাম বাস মালিক সমিতির প্রায় সাড়ে ৮শ’ বাস। প্রতিদিন ওয়ান রাউন্ড ট্রিপে এদের আনা নেয়া করা হবে কারখানায়। এদিকে, কর্মস্থল থেকে ফিরে নগরজুড়ে বসবাস করে এসব শ্রমিক কর্মচারীরা। গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে বাংলাদেশ আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এই সতর্কতায় গত ২৫ জানুয়ারি থেকে সরকারী-বেসরকারী অফিস আদালত ও কারখানা বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু এরপরও কয়েকদিন গার্মেন্টস কারখানা খোলা ছিল। অভিযোগ উঠেছে, আজ থেকে চট্টগ্রামের এসব শ্রমিকরা কর্মস্থলে যাওয়া এবং আসার পথে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুপুরীতে রূপ নেবে চট্টগ্রাম নগরী। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত দেয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীরা শনিবারের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসতে শুরু করেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে এসব শ্রমিক-কর্মচারীদের আবাসস্থল মালিকদের পাশাপাশি স্থানীয়রা। কারণ, যত্রতত্র এসব শ্রমিক-কর্মচারীরা সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তায় বা কারও সংস্পর্শে অবস্থান নিলেই করোনাভাইরাস সংক্রমিত হবে খুবই স্বল্প সময়ে। এদিকে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, কারখানার ভেতরে প্রবেশের সময় এসব শ্রমিক-কর্মচারীদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বায়ারদের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, গার্মেন্টস মালিকরাও শ্রমিকদের স্প্রে, মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অভিযোগ উঠেছে, হ্যান্ড গ্লাভসের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছে না বিজিএমইএ। কারণ, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। তবে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের সেফটি নিশ্চিত করে কারখানা চালু রাখা যাবে। সচেতন নগরবাসীর অভিযোগ, চট্টগ্রাম শহরের ইপিজেড, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, কালুরঘাট, অক্সিজেন, সাগরিকা ও ফৌজদারহাটসহ বিভিন্ন শিল্পনগরী ও আবাসিক এলাকায় গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। এসব এলাকায় সাড়ে ৩শ’ কারখানায় কাজ করা প্রায় ৫ লাখ শ্রমিক নগরীর এমন কোন স্থান নেই যেখানে বসবাস করছে না। গার্মেন্টস মালিকরা যেহেতু শুধু কারখানায় সুরক্ষা নিশ্চয়তা দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন সেহেতু এর বাইরে নিশ্চয়তা দিবে কে-এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে প্রশাসনের কাছে। আরও অভিযোগ উঠেছে, এসব শ্রমিক-কর্মচারীরা গার্মেন্টস থেকে বের হওয়ার পর গাদাগাদি করে প্রায় সাড়ে ৮শ’ বাসে চড়ে নগরীর অলিগলির মুখে নামবে। এমনকি পথিমধ্যেই কেনাকাটাও অব্যাহত রাখবে। ফলে নগরবাসীর নিরাপত্তা অনিশ্চিত পরিস্থিতির দিকে নিশ্চিত চলে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও প্রতিদিন শুধু চট্টগ্রামের ৫ লাখ শ্রমিকের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। ফলে এসব শ্রমিকদের মাধ্যমেই ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এমন আতঙ্কে ভুগছে শ্রমিকদের আবাসস্থল মালিক ও স্থানীয় এলাকাবাসী। এ বিষয়ে বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট এএম চৌধুরী সেলিম জনকণ্ঠকে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে গার্মেন্টসের কাজ থাকলে কারখানা খোলার জন্য। বিজিএমইএ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারীদের সেফটি নিশ্চিত করার জন্য। সে অনুযায়ী গার্মেন্টস মালিকরা স্প্রে, মাস্ক ও হাত ধোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কিছু কিছু কারখানা হ্যান্ড গ্লাভসের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। এছাড়াও কতগুলো কারখানা আজ রবিবার থেকে খোলা হবে তাও বিজিএমইএ নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে বায়াররা শ্রমিকদের সেফটির বিষয়টি নিশ্চিত করেই কারখানা খোলার পক্ষপাতি।
×