ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রশিক্ষণ চলছে

করোনা মোকাবেলায় কাজ করবেন রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ৫ এপ্রিল ২০২০

  করোনা মোকাবেলায় কাজ করবেন রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা

ফিরোজ মান্না ॥ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবককে (ভলান্টিয়ার) প্রস্তুত করা হচ্ছে। দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে তারা কিভাবে কাজ করবেন এমন প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ চলছে। মগবাজারে রেডক্রিসেন্টের সদর দফতরে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে গত কয়েক দিন ধরে। এখানে অংশ নিচ্ছেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। ফাহমিদা ইসলাম নামের এক ছাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, করোনা শুধু জাতীয় দুর্যোগ না-বিশ্বব্যাপী এর ভয়ঙ্কর আক্রমণ চরম আকার ধারণ করেছে। হেড কোয়ার্টারে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সারাদেশে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির অফিসগুলোতে ভলান্টিয়ার কার্যক্রম চলছে। আমরা গত কয়েক দিন ধরে করোনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। সারাদেশেই একইভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই প্রস্তুতি বড় ধরনের কাজে লাগবে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির একজন কর্মকর্তা বলেন, যে কোন দুর্যোগে তারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে কাজ করেন। মানুষের খাদ্য সহযোগিতা থেকে শুরু করে উদ্ধার কাজ ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। বিশ্বব্যাপী করোনা দুর্যোগে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কাজ করছে। আমরা বাংলাদেশে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেদিক বিবেচনায় রেখে আগেভাগেই ভলান্টিয়ার তৈরি করছি। বিভিন্ন দুর্যোগে আমাদের ভলান্টিয়াররা কাজ করছে। করোনা দুর্যোগ একেবারেই নতুন একটি ভাইরাস। এখানে কাজ করা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। তাই ভলান্টিয়াররা যাতে সঠিক ও নিরাপদে কাজ করতে পারেন তার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, করোনা দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই হচ্ছে তাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ। ইতোমধ্যে বর্তমান পরিস্থিতিতে সারাদেশে যে যত ভলান্টিয়ার লাগবে তাদের প্রথম দফা প্রশিক্ষণের কাজ শেষ করা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের প্রশিক্ষণ কাজ শুরু হবে। এটা নির্ভর করছে আক্রান্ত রোগীর ওপর। তবে দেশের অবস্থা অন্য যে কোন দেশের তুলনায় অনেক ভাল। এখন পর্যন্ত ভয়াবহ আকারে করোনা আক্রান্ত শুরু হয়নি। সরকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য যে ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে করোনা সংক্রমণ ওই আকারে হওয়ার আশঙ্কা নেই। সরকার আগে থেকেই গোটা দেশকে ‘লকডাউনে’ নিয়ে গেছে। ফলে সংক্রমণের হার অনেকাংশে কম হবে। আমরা সরকারের পাশাপাশি শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। অনেক জায়গায় ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। কোথাও কোথাও কীটনাশক ছড়িয়েছি। কাজ করে যাওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি আশা করা যাচ্ছে উন্নতির দিকেই যাবে। সরকারের ব্যবস্থা বড় কাজে লাগছে। ভলান্টিয়ার ফাহমিদা ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, তিনি ইডেন মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এমন দুর্যোগে ঘরে বসে থাকা যাবে না। তাই তিনি করোনা প্রতিরোধে কাজ করার জন্য রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে কাজ করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। এছাড়াও কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও অন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ করছে সংস্থাটি। গত ২৯ মার্চ সংস্থাটি জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল, মসজিদ, ধর্মীয় উপসনালয়, কাঁচাবাজারসহ ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ এবং প্রচার কাজসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। এছাড়াও দেশের ৬৪ জেলার ৬৮টি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের মাধ্যমেও করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি নানা কার্যক্রম চলমান। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জীবাণুনাশক স্প্রে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়াও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা যৌথভাবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর ৮টি হাসপাতালে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে। ঢাকার আরও কয়েকটি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে-ওই সব এলাকাতেই স্প্রে করা হবে। স্বেচ্ছাসেবক দল দু’একদিনের মধ্যে সে সব জায়গায় কীটনাশক স্প্রে করবে। এদিকে, কক্সবাজার জেলায় চলমান পপুলেশন মুভমেন্ট অপারেশনের কমিউনিকেশন সেকশন থেকে জানানো হয়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইতোমধ্যে তারা প্রয়োজনীয় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সবকটি ক্যাম্পে দায়িত্বরত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য স্টাফ, কমিউনিটি হেলথ ফ্যাসিলিটিটর, হেলথ মোবিলাইজার, বিভিন্ন প্রোগ্রামের ফোকাল পয়েন্ট, রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতার জন্য স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া পরামর্শ পৌঁছে দিচ্ছে। ভয়াবহ এই দুর্যোগে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে শুরু থেকেই। পরিস্থিতি যে দিকেই যাক রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি কাজ করে যাবে।
×